দৃশ্যটা এমন। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে দুই আম্পায়ার বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্সের খেলোয়াড়রা একজোট হয়ে আম্পায়ারদের লক্ষ্য করে বলছেন-তুই চোর, আম্পায়ার তুই চোর!’ ম্যাচ রেফারি মাঠে নেমে আসেন। সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ ছিল। কিন্তু চোর-ছ্যাঁচড় ইত্যাদি শব্দ শোনার পরও কোনোরকম প্রতিবাদ ছাড়াই ওই দুই আম্পায়ার প্রায় নীরবেই মাঠ ছাড়েন। খানিক আগে মাঠে দুজনে মিলে যে চরম এবং আজেবাজে একতরফা ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন তাতেই তাদের প্রতিবাদের সাহসের মৃত্যু! ম্যাচ শেষ করে কোনোমতো মাঠ থেকে পালিয়ে যেতে পারলেই যেন বাঁচেন তারা।
ভাবখানা এমন যেন, মিশন তো সম্পন্ন। এখন না হয় কিছু গালিগালাজ খাই!
ঘটনাটা ঘটেছে ১৭ নভেম্বর, রোববার। তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের এক ম্যাচে। ম্যাচ শেষে ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্সের অভিযোগ আম্পায়ার পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিয়ে তাদেরকে ইচ্ছে করে এই ম্যাচে হারিয়েছে। ম্যাচে জয় পায় কামরাঙ্গী চর স্পোর্টিং ক্লাব। তৃতীয় বিভাগের যে কয়েকটি ক্লাবকে ক্রিকেটাররা ‘সরকারি ক্লাব’ বলে অর্থপূর্ণ হাসি হাসেন-তাদের একটি কামরাঙ্গী চর স্পোর্টিং ক্লাব। রেলিগেশন লিগ থেকে বাঁচার জন্য ১৭ নভেম্বরের এই ম্যাচটি উভয় ক্লাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্সের অভিযোগ সেই ম্যাচে ‘সরকারি ক্লাব’কে জেতানোর জন্য দুই আম্পায়ার সাইদুর রহমান ও জহিরুল ইসলাম জুয়েল বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দেন।
ফতুল্লার সেই ম্যাচে রান তাড়ায় নামা ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্স কমপক্ষে চারটি চরম বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হয়। তিনটি এলবিডব্লু এবং শেষের দিকে একটি রানআউটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মাঠের ক্রিকেটকে হাস্যকর করে তুলেন দুই আম্পায়ার।
রয়েল ক্রিকেটার্সের অভিযোগ-‘পায়ে লাগলেই আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিয়ে এলবিডব্লু আউট দিতে শুরু করেন। শেষের দিকে ব্যাটসম্যান পপিং ক্রিজে পৌঁছে যাওয়ার পরও আম্পায়ার তাকে রান আউট করে ছাড়েন! এটা কোনো ক্রিকেট হলো? এটাতো পরিষ্কার জোচ্চুরি! বিসিবি এত লম্বা গলায় ক্রিকেট দুর্নীতি প্রতিরোধের কথা বলে, অথচ মাঠে তাদের পরিচালিত ক্রিকেট লিগে চিহ্নিত এসব আম্পায়াররা যে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন সেগুলোই তো সবচেয়ে বড় দুর্নীতি!’
বার্তাটোয়েন্টিফোরের কাছে তাদের অভিযোগে রয়েল ক্রিকেটার্সের কর্মকর্তারা জানান-‘জয় থেকে আমরা যখন মাত্র ৩০ রান দূরে, তখনই আম্পায়াররা ন্যাক্কারজনকভাবে পক্ষপাতমূলক কিছু সিদ্ধান্ত জানিয়ে আমাদের হারিয়ে দেয়।’
খেলা শেষে মাঠ ছাড়ার সময় ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্সের খেলোয়াড়রা দুই আম্পায়ারের দিকে তেড়ে যায়। ম্যাচ রেফারি মঞ্জু তখন মাঠে প্রবেশ করেন। খেলোয়াড়রা ম্যাচ রেফারির কাছে গিয়ে বলে-‘এভাবে কি ক্রিকেট হয়? চুরি করতে মন চাইলে আগেই বলবেন, তাহলে আমাদের আর পরিশ্রম করে মাঠে আসতে হবে না।’
দুই আম্পায়ার জটিলতা এড়িয়ে মাঠ ছেড়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খেলোয়াড়রা তাদের দেখিয়ে সমস্বরে বলে-‘এই যে দেখেন, এরা চোর, চোর আম্পায়ার!’
প্রায় প্রতিবাদহীন ভঙ্গিতে দুই আম্পায়ারও যেন অভিযোগ মেনে নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। এসময় ম্যাচ রেফারি মঞ্জু প্রতিবাদকারীদের হুমকি দিয়ে বলেন-‘পুলিশ ডাকবো কিন্তু, হাতকড়া লাগায় দেবে!’ তার সেই হুমকিতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠে।
ম্যাচ রেফারি পরে তাদের আশ্বস্ত করেন তিনি সব দেখেছেন। সবকিছু নিয়ে বিসিবি’র কাছে রিপোর্ট দেবেন। দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে নির্লজ্জ আম্পায়ারিং এবং এমনসব দুর্নীতির সত্যতা ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে কখনো কি উঠে এসেছে?
আসেনি।
তবে ম্যাচ শেষে দুই আম্পায়ার সম্পর্কে ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্সের শাহরিয়ার ইসলাম তার ক্যাপ্টেন্স রিপোর্টে যে মন্তব্য করেছেন সেটা বিসিবির অবশ্যই পড়ে দেখা উচিত। শাহরিয়ার লিখেছেন-‘মিস্টার জহিরুল চোর। ক্রিকেট সম্পর্কে তার জ্ঞান শূন্যভাগ! তিনি মাঠে দায়িত্ব পালন করেন শুধুমাত্র বিশেষ কোনো দলের জন্য।’
অপর আম্পায়ার সাইদুর রহমান সম্পর্কে অধিনায়কের মন্তব্য এমন-‘রানআউটের সিদ্ধান্তটা খুবই বাজে। তাছাড়া এলবিডব্লু’র সিদ্ধান্তও প্রশ্নবোধক। তিনি মাঠে ম্যাচ পরিচালনায় আসেন শুধুমাত্র বিশেষ দলের জন্য।’
ম্যাচের দুই আম্পায়ারকেই সেদিন আম্পারিংয়ের সবক্ষেত্রেই ১ এর বেশি পয়েন্ট দেননি ঢাকা রয়েল ক্রিকেটার্সের অধিনায়ক। দুই আম্পায়ারই ৩০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৬!
যার রেটিং হলো ‘পুওর’।
বিসিবি’র দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের সার্বিক চিত্রও এখন ওটাই!