স্বর্গোদ্যানেই নরক দর্শন!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-09 19:10:03

এমন উৎসবের আয়োজন আগে একবারই দেখে ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। ১৯ বছর আগের সেই অভিষেক টেস্টে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সেজে ছিল ফুলেল সৌরভে। পূর্বানুমান অনুযায়ী সেই টেস্টে হারলেও প্রথম দফায় দলের ৪০০ রানের ইনিংস এবং আমিনুল ইসলাম বুলবুলের (১৪৫ রান) মহাকাব্যিক সেঞ্চুরি; ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের ফলাফলকে ছাপিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট স্বাগত জানিয়ে ছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্মকাহিনীকে।

ঠিক ১৯ বছর পরের আরেকটি নভেম্বর ফিরে এসে ছিল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে গোলাপি রংয়ে বরণ করতে। তাও আবার কোথায়? উপমহাদেশের ক্রিকেটের সেরা মাঠ-ইডেন গার্ডেন্সে। কিন্তু সেই স্বর্গোদ্যানে ক্রিকেটীয় স্বর্গসুখ দেখার বদলে বাংলাদেশ সোয়া দু’দিনেরও কম সময়ের আয়ু পাওয়া টেস্টে যা দেখল, তার পুরোটাই যে নরক দর্শন!

ক্যারিয়ারের বাকি সময় ইডেনের পিঙ্ক টেস্টের প্রসঙ্গ যখনই উঠবে- এই টেস্টের অধিনায়ক মুমিনুল হক দ্রুতই প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য অনুরোধ করবেন। এটি তার জোড়া শূন্যের টেস্ট ম্যাচ। দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট তিনি।

শূন্যের আরো বড় এবং বেশ কিছু কাহিনী আছে ইডেনের পিঙ্ক টেস্টে বাংলাদেশ পর্বে।

প্রথম ইনিংসে চারজন ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট। দ্বিতীয় ইনিংসে আরো তিনজন। সাত শূন্যের এই বাংলাদেশ দলে জোড়া শূন্যের মালিক আবার অধিনায়ক মুমিনুল হক।

আরো আছে। প্রথম ইনিংসে দলের তিন-চার ও পাঁচ, এই তিন ব্যাটসম্যানের সবাই শূন্য রানে আউট! প্রথম ইনিংসে ১৪.২ ওভারে ৩৮ রানে নেই ৫ উইকেট। দ্বিতীয় দফায়ও সেই করুণ চিত্র; ৬.৪ ওভারে ৪ উইকেট হাওয়া, রান তখন মাত্র ১৩!

আরও পড়ুন: বলটাই শুধু গোলাপি, খেলাটা কিন্তু ক্রিকেটই!

৯ উইকেটে ভারত যে রান করল বাংলাদেশ দু’দফায় সব মিলিয়ে ২১ জন ব্যাটিং করেও ভারতের সেই রানের নিচেই থাকল! এমন একতরফা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ম্যাচ পিঙ্ক টেস্টের উৎসবের আমেজেই যে কালি ছিটাল। ম্যাচটা শেষ হয়ে গেল মাত্র সোয়া দুদিনেরও কম সময়ে! অথচ এই টেস্টে উৎসব-আনন্দ যজ্ঞে সামিল হতে শুরুর চার দিনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়ে ছিল।

আয়োজনের কোনো কর্নারেই কমতি কিছু রাখেননি সৌরভ গাঙ্গুলি। বাহারি রংয়ের ছড়াছড়ি চারধারে। মাঠের তারকা থেকে রাজনীতির মঞ্চের তারকা- কে ছিলেন না এই আনন্দ সম্ভারে? কিন্তু পিঙ্ক বলের টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশ দল যে ব্যথায় নীল!

মোহাম্মদ শামির বাউন্সার হেলমেটে লেগে লিটন দাস রিটায়ার্ড হার্ট। খানিকবাদে নাঈম হাসানও বাউন্সারের আঘাতে এই ম্যাচে মাঠের বাইরে চলে গেলেন। ইশান্ত শর্মার লাফিয়ে উঠা বাউন্সারে মোহাম্মদ মিঠুনের হেলমেটে যে জোরে লাগল তাতেই উড়ে গেল তার ব্যাটিং আত্মবিশ্বাস। সেই ধাক্কায় নড়বড়ে শট খেলে খানিকবাদে ক্যাচ তুলে ফিরে এলেন। শরীরে বাউন্সারের চোট সইতে হলো মেহেদি হাসান মিরাজকেও। ওপেনার ইমরুল কায়েসের টেকনিকের বড় ফুটো বেরিয়ে এল ভরা মজলিসে। এই ধরনের উইকেটে, রাইজিং বলের বিরুদ্ধে কিভাবে রুখে দাঁড়াতে হয় সেই দক্ষতা একমাত্র মুশফিক রহিম ছাড়া এই দলের আর কারোরই যে জানা নেই!

গোলাপি বলের তেজ। সামনে জেনুইন গতির দুরন্ত ফাস্ট বোলার। উইকেটে বাড়তি বাউন্স। চিবুক এবং পাঁজরের হাড় লক্ষ্য করে ছুঁটে আসা বল সামাল দেওয়া। চারকোনার গ্যালারিতে প্রতিপক্ষের সমর্থক। বল হাতে ভারতের পেসাররা ছুটছেন আর গ্যালারি জুড়ে যুদ্ধজয়ের চিৎকার। ইডেনের গোটা সবুজ মাঠ তখন যেন প্রাচীন গ্রিসের অ্যাম্ফিথিয়েটারে রূপ নিয়েছে। যে লড়াইয়ে ভারতীয় দল বিশালদেহী হারকিউলিস আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগাম আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে নতজানু; গিলোটিনে গর্দান!

এমন ম্যাচ শুধুমাত্র একটা দলই উপভোগ করতে পারে; জয়ী দল। অংশগ্রহণকারী অন্য দল তখন দুঃসহ যন্ত্রণায় বিদ্ধ। ক্রিকেটের নন্দন কানন থেকে সেই দুঃস্মৃতি নিয়ে ফিরছে ক্রিকেট দল!

এ সম্পর্কিত আরও খবর