ড্রেসিংরুম থেকে ফিরিয়ে আনা হলো ব্যাটসম্যানকে!

ক্রিকেট, খেলা

স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 18:20:52

বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ হতেই মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়লেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ব্যাটসম্যান ভানুকা রাজাপাকসে। এরই মধ্যে মাঠে নতুন ব্যাটসম্যানও চলে এসেছেন। ঠিক এমন সময় আম্পায়ার ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন রাজাপাকসের আউট নিয়ে! তখন টিভি আম্পায়ার পরীক্ষা করে দেখছেন ওয়াহাব রিয়াজের বলটা নো বল ছিল কিনা?

খানিকবাদে জানা গেল-হ্যাঁ ওটা নো বল ছিল। অতএব রাজাপাকসে নটআউট। তাকে ফেরাও। সমস্যা হলো আউট হয়েছেন জেনে ততক্ষণে রাজাপাকসে ফিরে গেছেন ড্রেসিংরুমের ভেতরে। প্যাডও খুলে ফেলেছেন! সেই ব্যাটসম্যানকে আবার মাঠে ফেরানো হলো; কারণ আইন বলছে তিনি তো নটআউট।

ঘটনার শুরু ৪.৫ ওভারের সময়। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স বনাম ঢাকা প্লাটুনের ২৩ ডিসেম্বরের ম্যাচে। ওয়াহাব রিয়াজের প্রথম ওভারে। কুমিলা ওয়ারিয়র্সের ওপেনার ভানুকা রাজাপাকসে উইকেটে বেশ জমে গেছেন। খেলছেন ২০ রানে। ঢাকা প্লাটুনের পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ তার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই এসে ভানুকা রাজাপাকসেও ক্যাচ তুলতে বাধ্য করলেন।

কুমিল্লার খেলোয়াড়রা উল্লাস করছেন। আর এরই মাঝে মাঠ ছেড়ে চলে গেলেন রাজাপাকসে। নতুন ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী মাঠে চলে এসেছেন। হঠাৎ করেই তখন ব্যতিব্যস্ত হতে দেখা গেল মাঠের দুই আম্পায়ারকে। কারণ টিভি আম্পায়ার ওয়াহাব রিয়াজের সেই ডেলিভারি সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করছেন। বারকয়েক পরীক্ষা শেষে টিভি আম্পায়ার মোর্শেদ আলী খান সিদ্ধান্ত দিলেন-ওটা নো বল! ব্যাটসম্যান রাজাপাকসে নটআউট। কিন্তু সমস্যা হলো তখন রাজাপাকসে যে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন। নতুন ব্যাটসম্যানও মাঠে চলে এসেছেন। ফিল্ড আম্পায়ার এমন পরিস্থিতিতে খানিকটা সময় অপেক্ষায় থাকলেন। অনেকটা সময় নিয়ে রাজাপাকসে আরেকবার মাঠে ফিরলেন। আর মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা ইয়াসির রাব্বী। এর মাঝে ঢাকা প্লাটুনের খেলোয়াড়রা ফিল্ড আম্পায়ার গাজী সোহেলের কাছে গিয়ে খানিকটা বাদ-প্রতিবাদ জানালেন। বোলার ওয়াহাব রিয়াজও শরীরি ভাষায় যে আচরণ করলেন সেটা নিশ্চিত ডিসিপ্লিনের পর্যায়ে পড়ে না।

প্রশ্ন হলো এই যে এভাবে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার সেই ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে ফিরিয়ে আনা হলো-এতে ক্রিকেটীয় আইনের কোনো লঙ্ঘন হলো কিনা?

উত্তর মিলল-না, ক্রিকেটীয় আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি। তবে যা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে দৃষ্টিকটু। মাঠে আম্পায়ারিংয়ের ব্যবস্থপনায় ঘাটতির কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।

সাধারণ নিয়ম হলো- কোন ব্যাটসম্যান আউট হলে বলটা নো বল ছিল কিনা, সেটা পরীক্ষা করার দায়িত্ব টিভি আম্পায়ারের। আর এই সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান যাতে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে না যান সেটা দেখার দায়িত্ব রিজার্ভ আম্পায়ারের। বাউন্ডারির দড়ির কোনায় রিজার্ভ আম্পায়ার এসে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানকে খানিকটা অপেক্ষা করতে বলেন। টিভি আম্পায়ারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত এই অপেক্ষা থাকা। কিন্তু এই ম্যাচে ভানুকা রাজাপাকসে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে রিজার্ভ আম্পায়ার মুনীরুজ্জামান অপেক্ষায় থাকতে বলেননি। আর আউট হয়েছেন জেনে রাজাপাকসে মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে গেছেন।

যখন কোনো ডেলিভারির সিদ্ধান্ত টিভি আম্পায়ারের কাছে যায় তখন মাঠের সব আম্পায়ার ওয়াকি-টকি বা এয়ারফোনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখেন। এই সময়ে কোনো একজন আম্পায়ার কথা বললে সেটা দুই ফিল্ড আম্পায়ার, রিজার্ভ আম্পায়ার, টিভি আম্পায়ার সবাই শুনতে পান। যোগাযোগের সিস্টেমটাই এমন রাখা হয়েছে।

ওয়াহাব রিয়াজের সেই ডেলিভারির ব্যাপারে যখন টিভি আম্পায়ার পরীক্ষা করছিলেন তখন সেটা তো রিজার্ভ আম্পায়ার মুনীরুজ্জামানের কানেও গিয়েছিল। তখনই তার দায়িত্ব ছিল আম্পায়ারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ব্যাটসম্যান রাজাপাকসে যেন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে না যান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের দায়িত্বটা পালন করলেন কই রিজার্ভ আম্পায়ার মুনীরুজ্জামান?

পদের নাম রিজার্ভ আম্পায়ার। কিন্তু দায়িত্বটা অনেক বড়। পদের নামের মতো দায়িত্ব পালনের সময়েও আম্পায়ার মুনীরুজ্জামান ‘রিজার্ভই’ থাকলেন যেন!

বাড়তি তথ্য হলো- ড্রেসিংরুম থেকে ফিরিয়ে আনার সময় ভানুকা রাজাপাকসের রান ছিল ২০। সেই তিনিই ইনিংসের শেষবল পর্যন্ত খেললেন, করলেন অপরাজিত ৯৬ রান!

এ সম্পর্কিত আরও খবর