গায়ানা মানেই জয়ের সুখস্মৃতি!

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 19:56:52

পুরানো স্মৃতিঘেরা কোন জায়গায় অনেকদিন পরে গেলে একটা নস্টালজিয়া পেয়ে বসবেই। আর সেই পুরানো পরিচিত ভেন্যু জুড়ে যদি কোন সুখের স্মৃতি থাকে তবে তো কথাই নেই! স্মৃতি কাতরতা বলে একটা কথা আছে না!

ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা প্রভিন্স স্টেডিয়ামে পা রাখার পর থেকেই বাংলাদেশ দলের কয়েকজন ক্রিকেটার তাদের অনেকের পুরানো এক বিশ্বকাপের সুখস্মৃতির আহলাদ খুঁজে বেড়ান এই মাঠের এখানে-ওখানে। এ কোনায়। ও প্রান্তে!  ড্রেসিংরুম কর্নারের সাইটস্ক্রিনের দিকে চোখ যেতেই মাশরাফিও যেন টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে গেলেন এক যুগ আগের সুখস্মৃতিঘেরা এক ম্যাচে। এনটিনির স্পেলের শেষ ওভারের শেষ দুই বলের প্রথমটিতে মাথার উপর দিয়ে ছক্কা! পরের বলে মিড উইকেট বাউন্ডারি দিয়ে সপাটে আসা চার!  

অনেক বছর আগের কথা। তাই একটু ফ্ল্যাশব্যাক। ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের লড়াই চলছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে সেসময়ের নাম্বার ওয়ান দল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়ছে বাংলাদেশ।

-কোন বাংলাদেশ?

যে বাংলাদেশ মাত্র কদিন আগে টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে! ২০ দিনের মধ্যেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকাও উড়ে গেল বাংলাদেশের সম্মিলিত শক্তির সামনে। এই দুই দলকে হারিয়ে বাংলাদেশ সেবারের বিশ্বকাপের সেরা চমক দেখানো দলে পরিণত। সেই কৃতিত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সুপার আটে খেলার মর্যাদা পায় বাংলাদেশ।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারানো সেই ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ এই গায়ানা প্রভিন্স স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপে নিজেদের নতুন করে চিনিয়েছিল বাংলাদেশ সেদিন। সেই একই মাঠে এবারো যেন বাংলাদেশ ফিরে পেল নিজেদের চিরচেনা শক্তিমত্তাকে। টেস্ট সিরিজে ভরাডুবির পর ওয়ানডে সিরিজকেই রুখে দাড়ানোর উপায় হিসেবে ঢাল মানছিল। গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়াম এবারো দু’হাত মেলেই বরণ করে নিল বাংলাদেশকে।

তামিমের সেঞ্চুরি। সাকিবের ৯৭। মুশফিকের ব্যাটে ঝড়। মাশরাফির দুরন্ত বোলিং। গায়ানায় দ্বিতীয় দফা সফরও স্মরণীয় হয়ে রইল এই চার তারকার কাছে। একযুগ আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারানো সেই ম্যাচেও ছিলেন আজকের দিনের এই চার ক্রিকেটার। ক্রিকেট আড্ডায় এখন গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়ামের নাম এলেই এই চারজনই লম্বা সময় জুড়ে গল্পটা করতে পারবেন গায়ানার সব জয়ে ছিলাম আমরা!

মাশরাফি তার এক যুগ আগের অভিজ্ঞতা থেকেই জানতেন গায়ানার উইকেটে বল একটু দেরিতে আসে। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পান। উইকেটে বল গ্রিপ হয়। শটস খেলতে পছন্দ করা ব্যাটসম্যানদের জন্য এমন উইকেটে রান পাওয়া মোটেও সহজ কোন কাজ নয়। তড়িঘড়ি করলে বিপদ নিশ্চিত। খেলতে হবে সোজা ব্যাটে । সামনে বাড়তে হবে একÑদুই নিয়ে।

তামিম ও সাকিবের শুরুর ব্যাটিংয়েই সেই প্রমানের ছাপ স্পষ্ঠ! আর তাই দুজনেই নিজেদের চিরচেনা আয়েশি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ধাঁত বদলে হয়ে উঠেন পরিশ্রমী শ্রমিক। ব্যাটকে যেন গাঁইতি বানিয়ে পাথর খুঁড়ে রানের রাস্তা তৈরি করেন! সেই কাঠিণ্যে মসৃণতার প্রলেপ দেয় মুশফিকের ১১ বলে ৩০ রানের ইনিংস। আর মাশরাফির অভিজ্ঞতায় বোলিং শানে ৩৭ রানে ৪ উইকেট আরেকবার জানান দিল- এই বাংলাদেশের সেরা পেসার তিনি ছিলেন। তিনিই আছেন!

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এখন বাকি সব ম্যাচ এই গায়ানা প্রভিন্স স্টেডিয়ামে খেলার দাবি জানাতে পারে বাংলাদেশ। পয়মন্ত ভেন্যু বলে কথা!

এ সম্পর্কিত আরও খবর