বলে থুথু বা লালা লাগানো যাবে না, সেটা ঠিক আছে। এই কু-অভ্যাসটা এমনিতেও স্বাস্থ্য বিধিসম্মত নয়। এক কথায় আনহাইজেনিক। আইসিসি বলে থুথু বা লালা লাগানোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করতে চলেছে। সামনের দিনে ক্রিকেটারদের এই নিয়ম মেনেই ক্রিকেট খেলতে হবে। স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য ক্রিকেটাররা পরিবর্তিত এই নিয়ম পালন করতেও অনাগ্রহী নন। কিন্তু ক্রিকেট মাঠে ফেরাতে এর সঙ্গে আইসিসি আরো যেসব গাইডলাইন দিয়েছে একগাদা সেসব বিধি-বিধান মেনে কি ক্রিকেট খেলা সম্ভব?
প্রশ্নটা তুলেছেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার যারা, তারাই- ক্রিকেটাররা। আইসিসি’র একগাদা গাইডলাইনের কিছু অংশে চোখ বুলাই। বল ধরার আগে নিয়মিতভাবে হাতকে স্যানিটাইজ করতে হবে। অর্থাৎ ক্রিকেটারদের পকেটে জীবাণুনাশক বোতল বা টিউব নিয়ে নামতে হবে।
অনুশীলন চলাকালে গোসল করা বা আইস বার্থ নেওয়ার উপায় নেই।
খেলার আগে এবং পরে ড্রেসিংরুমে সংক্ষিপ্ত সময় কাটাতে হবে।
টুপি, সানগ্লাস, টাওয়েল বা রুমাল আম্পায়ার বা সতীর্থদের কাছে রাখা যাবে না।
মাঠে সামাজিক দূরত্ব রাখতে হবে।
এবং বলে থুথু বা লালা ব্যবহার করা যাবে না।
ক্রিকেটীয় বাস্তবতা জানাচ্ছে শেষের বিধি-বিধান (বলে থুথু বা লালা না লাগানো) ছাড়া ম্যাচ চলাকালে বাকি নিয়ম-কানুন পুরোপুরি পালন না প্রায় অবাস্তব ব্যাপার। ৫০ ওভারের ম্যাচে একজন ক্রিকেটার যদি নিয়মিত শুধু হাতে জীবাণুনাশক ক্রিমই লাগাতে থাকেন তাহলে খেলায় তার মনোযোগ থাকবে কিভাবে?
আইসবাথ একজন ক্রিকেটারের শারীরিক ক্লান্তি দূর করে। কিন্তু অনুশীলনের সময় যদি এই ব্যবস্থাকে অনিয়ম মানা হয় তাহলে ক্লান্তি নিয়ে খেলতে হবে ক্রিকেটারদের। শাওয়ার নেওয়াটা না হয় এড়ানো গেল, কিন্তু ক্রিকেটাররা কি বাথরুম ব্যবহার করবেন না। ড্রেসিংরুমে সবার জন্য সিঙ্গেল বাথরুম বানানো কি সম্ভবপর কোনো কাজ?
ড্রেসিংরুম হলো একঅর্থে খেলোয়াড়দের আবাসস্থল। মাঠের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গা হলো ড্রেসিংরুম। সেই ড্রেসিংরুম দ্রুত ছাড়ার তাড়া দিলে ক্রিকেটারদের পরিকল্পনায় বড় ফাঁক রয়ে যাবে। তাছাড়া ড্রেসিংরুমে কি পুরো ক্রিকেট দল, কোচ এবং কোচিং স্টাফদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কি সম্ভব? ছয় ফুট দূরত্বে বসতে হবে, ড্রেসিংরুম কি অত বড়?
বোলিংয়ের সময় কি বোলার টুপি, সানগ্লাস নিজেই ড্রেসিংরুমে নিজের ব্যাগে রেখে আসবেন। আবার বোলিং শেষে প্রতিবার সেটা ফেরত নেবেন? নাকি কোমরের সঙ্গে টুপি বেঁধে এবং কপালে সানগ্লাস তুলে বোলিং মার্কে দৌড়াবেন?
বোলিংয়ে প্রতিবার তো আম্পায়ারের পাশ ঘেঁষে বোলারকে দৌড়াতে হবে। তখন সামাজিক দূরত্ব পালন কিভাবে সম্ভব? স্লিপে অঞ্চল ও ক্লোজ ইনে ফিল্ডারদের তো প্রায় গাঁ ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াতে হয়। সেখানে সামাজিক দূরত্বের কি হবে?
এই প্রসঙ্গে ভারতের টেস্ট ক্রিকেটার ইরফান পাঠান তার মন্তব্যে জানান- ‘যে কোন দল টুর্নামেন্ট বা সিরিজ শুরুর আগে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতেই পারে। এটা ভালো ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেওয়ার পর ম্যাচ চলাকালে বাকি সব বিধি-নিষেধ খেলাটাকে আরও জটিল করে তুলবে। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে খেলাটাকে যেন জটিল করে তোলা না হয়। প্রতিবার বল স্পর্শের পর বোলার বা ফিল্ডাররা যদি হাত জীবাণুনাশক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে ক্রিকেট খেলাটাই যে কঠিন হয়ে যাবে!’
ক্রিকেট মাঠে ফেরাতে আইসিসি’র এই লম্বা চওড়া গাইডলাইন নিয়ে সাকিব আল হাসানও প্রশ্ন তুলেছেন। আর ভারতের অনেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকাররা এই বিধি-বিধানকে অপরিণত এবং অবাস্তব বলে মন্তব্য করেছেন।
স্বাস্থ্যবিধিকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে সেই সঙ্গে খেলাটাও তো খেলতে হবে। আইসিসি’র গাইডলাইন কি সেই সমন্বয় করতে পেরেছে?