মাঠের বাইরের ক্রিকেটে বেশ বড় একটা ধাক্কা খেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। জাতীয় দলের অফিসিয়াল স্পন্সর প্রতিষ্ঠান মোবাইল কোম্পানি রবি বিসিবির সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি বাতিল করেছে।
মেয়াদ পুর্তির বেশ আগেই রবি আকস্মিকভাবে এই চুক্তি বাতিল করল। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে রবির দু’বছর মেয়াদি চুক্তি ছিল। কিন্তু আগেভাগেই একতরফা ভাবে সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি।
বিসিবির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কারণ হিসেবে ২৬ আগস্ট এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে রবি যা জানিয়েছে তা পুরোপুরি এরকম:-
‘বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সুদীর্ঘ পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা গর্বিত। ২০১৫ সালে আমরা টাইগারদের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার পর থেকে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের অভাবনীয় উত্থান শুরু। মাঠে টাইগারদের দুর্দান্ত ঝলক এবং নাজমুল হোসেন পাপনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দক্ষ ব্যবস্থাপনার অপূর্ব সমন্বয়েই এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। রবি’র পৃষ্ঠপোষকতা চালাকালীন সকল ক্রিকেট ভক্ত ও গণমাধ্যমের বন্ধুদের আন্তরিক সমর্থন ও ভালবাসায় আমরা অভিভূত। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চলমান পৃষ্ঠপোষকতা বিষয়ক চুক্তিটি প্রাসঙ্গিকতা হারানোয় দেশের ক্রিকেটের গৌরবোজ্জল এই মুহূর্তে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব থেকে আমরা সরে দাঁড়াচ্ছি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে ভিন্ন পরিসরে দলের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলে আমরা কৃতার্থ থাকব।’
রবি বিবৃতিতে চুক্তির প্রাসঙ্গিকতা হারানোর যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তার বিস্তারিত ব্যাখা জানতে চেয়ে রবির সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ বিবৃতির বাইরে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিসিবি বেশ কয়েকবার স্পন্সরশিপ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। চুক্তির এমনতর বরখেলাপের বিষয়ে রবি প্রায়স বিসিবির দৃষ্টি আর্কষণ করে। অভিযোগ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেয়। কিন্তু বিসিবি’র কাছ থেকে রবি কোন ইতিবাচক সাড়া ও সহযোগিতা পায়নি। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা রবি ছাড়া অন্য কোন মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানির হয়ে বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে পারবেন না। সেই চুক্তিও ভঙ্গ হয়েছে প্রতিনিয়ত।
দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্তির আগেই বিসিবির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি বাতিল করা রবি তাদের বিবৃতিতে কোন অভিযোগ অবশ্য করেনি। এর কারণ আর কিছু নয়। বিসিবির সঙ্গে তারা চুক্তি বাতিল করলেও সম্পর্ক একেবারে নষ্ট করতে চায় না। বিসিবিকে রাগাতে চায় না। কারণ বিসিবির প্রভাব এবং ক্ষমতা সম্পর্কেও রবির ধারণা বেশ পরিস্কার।
রবির সঙ্গে বিসিবির স্পন্সরশিপ ইনিংস বেশ পুরানো। ২০১৫ সালে প্রথম মেয়াদে সাফল্যের সঙ্গে জুটি গড়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে উভয়পক্ষ গত বছরের জুলাই মাসে দুই বছরের জন্য নতুন চুক্তিতে সম্মত হয়। দ্বিতীয় মেয়াদের এই চুক্তিতে বিসিবি অবশ্য আর্থিকভাবে বেশ লাভবানও হয়েছিল। জানা গেছে এই দুই বছরের চুক্তির বিনিময় মুল্য ছিল ৬১ কোটি টাকা। এই চুক্তির আওতায় ‘এ’ দল অনুর্ধ্ব-১৯ দলের পাশাপাশি মেয়েদের জাতীয় দলের অফিসিয়াল স্পন্সর ছিল রবি।