ভোক্তা অধিকারকে হটলাইন চালুর নির্দেশ
পণ্য কিনে প্রতারিত ভোক্তাদের অভিযোগ জানাতে ২ মাসের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালুর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ হটলাইন চালু রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে আদালতের আদেশ বাস্তায়ন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে শর্ত সাপেক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৬ জুন) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিব আল জলিলের সম্বনয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ভোক্তারা অধিদফতরের ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি ৯৯৯ এবং ৩৩৩ নম্বরে কল করেও অভিযোগ করা যাবে।
একইসঙ্গে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় ওঠে আসা নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার আদেশ প্রতিপালন না করায় আদালতে হাজির হওয়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে আদালত অবমাননার হাজিরা থেকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
সকালে আদালতে হাজির হয়ে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদনে মাহফুজুল হকের পক্ষে জানানো হয় নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চিত করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
অব্যাহতির শর্তে বলা হয়েছে ‘বিশেষ কোন উপলক্ষ্য ও মাস ঘিরে নয়, সারাবছরই ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রাখতে হবে, ভবিষ্যতে আদালতের আদেশ ভঙ্গ করবেন না এবং জনবল কম থাকলে তা বৃদ্ধি করে অভিযান চালাতে হবে।’
এরআগে গত ২৩ মে ভেজাল ও নিন্মমানের পন্য বাজার থেকে সরানোর আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হককে তলব করে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আদেশে তাকে ১৬ জুন হাজির হতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে আদালতে হাজির হন তিনি।
আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) সারাবছরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে পুন:পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ ১৬টি পণ্যের পাশাপাশি বাজারে থাকা সকল পণ্য র্যান্ডম টেস্ট ও রিটেস্ট করতে হবে। আগামী ১৯ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়টি অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
শুনানিতে বিএসটিআই আইনজীবী এম আর হাসান মামুন বলেন, মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে ৪২টি পণ্যের মান যাচাইর প্রতিবেদন দিয়েছে বিএসটিআই। এর মধ্যে ২৬টি পণ্য উত্তীর্ণ হলেও ১৬টি ব্যর্থ হয়েছে। আইন অনুযায়ী পুন:পরীক্ষায় তাদের উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ৯৬টি পণ্যের মধ্যে ৫৩টি মানসম্মত। ২২ টির মান ভাল না হওয়ায় তাদেও কারণ দর্শতে বলা হলে ২ টি পণ্যেও পক্ষে জবাব দেয়া হয়নি। ৮ টি পন্য বিএসটিআইর অনুমোদন নেয়নি। তারা পুনপরীক্ষার সুযোগ পাবে না। আজ থেকে আমাদের সার্ভিলেন্স টিম কাজ শুরু করেছে।
আদালত বলেন, আপনাদের কাজ চলমান রাখতে হবে। আমরা বারবার আদেশ দিতে চাই না।
এ পর্যায়ে রিট আবেদনের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, বিএসটিআইর নমুনা পরীক্ষার কোনো সময়সীমা নেই। পরীক্ষার জন্য এক মাস সময় নিলে এ সময়তো পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকবে না। এখানে বিএসটিআইর ঘাটতি রয়েছে।
তখন আদালত বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি পণ্যের মান পরীক্ষার আগে লেনদেন হয়। এ অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে দুদকে পাঠাবো না, সোজা কারাগারে পাঠাবো।
আইনজীবী বলেন, নমুনা পরীক্ষা ন্যূনতম স্বচ্ছতা থাকা দরকার।
আদালত বলেন, পণ্যের মান পুনপরীক্ষায় দুর্নীতিবাজদের রেট আরও বেড়ে যাচ্ছে।
শুনানি শেষে আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আগের প্রতিবেদনে ভুল ছিল। এবার সম্পুরক আবেদন দিয়ে বলেছি সারা দেশে ভেজাল পণ্যেও বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আদালত অবমাননার অভিযোগ মার্জনা করেছেন।
এর আগে গত ১২ মে বিএসটিআইর পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য বাজার থেকে যত দ্রুত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এ নির্দেশ পালন করে ১০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত।
পাশাপাশি পণ্যগুলোর বিষয়ে যথাযথ আইন অনুসারে তা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ভেজাল পণ্যের মান উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত তা উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের ওই আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেন হাইকোর্ট।