মাসিক, প্রসব পরবর্তী স্রাব, দুধ পান করানো ও গর্ভাবস্থায় রোজার বিধান



যাইনাব আল গাযী, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
নারীদের নানাবিধ অসুস্থতা রোজার মাস নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতের প্রধান অন্তরায়, ছবি: সংগৃহীত

নারীদের নানাবিধ অসুস্থতা রোজার মাস নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতের প্রধান অন্তরায়, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বছরের বারো মাসই ইবাদতের মাস। বারো মাসই আমাদেরকে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইবাদতে কাটাতে হবে। কোনো মাসে ছাড় নেই। তবে রমজান হচ্ছে একটা সোনালী সুযোগের মতো। এ মাসে আল্লাহতায়ালা শয়তানকে বেঁধে বান্দাকে সুযোগ করে দেন নেকির কাজ করে আমলনামা ভারি করার।

প্রত্যেক নারী-পুরুষিই চান রমজান মাসে খুব বেশি করে ইবাদত করতে। কিন্তু চাইলেই তো আর সব হয় না, নারীদের নানাবিধ অসুস্থতা পুরো রোজার মাস নিরবচ্ছিন্ন ইবাদতের প্রধান অন্তরায়। তাই বলে এটা নিয়ে মন খারাপের কোনো কারণ নেই। এটা আল্লাহর বিধান।

মাসিক ও প্রসব পরবর্তী স্রাবের সময়কার রোজা
রমজান মাসে বা তার কিছু আগে যদি কেউ মা হন, তবে প্রসব পরবর্তী স্রাব (নেফাস), শারীরিক দূর্বলতা ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের পক্ষে রোজা পালন সম্ভব হয় না। কোনো উপায়ও থাকে না প্রসব পরবর্তী স্রাব বন্ধ রেখে রোজা রাখার। তবে মাসিক পিরিয়ড ঔষধ সেবন করে বন্ধ রাখা যায়। মাসিক পিরিয়ড বন্ধ রাখা ও না রাখা নিয়ে প্রথমে আলোচনা করা যাক।


মাসিক পিরিয়ড বন্ধ না রেখে রোজা
ক. রমজান মাসে কেউ যদি হায়েজ বা নেফাসের কারণে রোজা রাখা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে অবশ্যই তাকে পরবর্তীতে যতগুলো রোজা বাদ পড়েছিল সব কাজা আদায় করতে হবে। কোনো কাফফারা নেই। শুধু একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা রাখবে।

খ. এই রোজাগুলো সে একাধারে বা দুই-একদিন বাদ দিয়ে, বাদ দিয়ে রাখতে পারবে।

গ. হায়েজের রোজা শাওয়াল মাসে রেখে এরপর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উত্তম। তবে কেউ যদি কাজা রোজা শাওয়ালে না রাখে, তবে বছরের অন্য যেকোনো মাসেও রাখতে পারবে।

ঘ. নেফাসের রোজা যেহেতু অনেকগুলো হবে তাই সেটা শাওয়াল বা পরবর্তী যেকোনো মাসে বা পরের রমজান আসার আগে পুরো বছর মিলিয়ে সপ্তাহে দুই-তিনটা বা আরও কম বেশি করে রেখে কাজা আদায় করতে পারবে।

ঙ. নেফাসের সর্বোচ্চ সীমা ৪০দিন। তবে কারও এর বেশি বা কম দিনও হতে পারে। যদি ৪০ দিন হওয়ার আগেই কেউ পবিত্র হয় তবে তার শরীর সুস্থ হলে, তার নিজের ও বাচ্চার কোনো ক্ষতি না হলে- সে চাইলে রোজা রাখতে পারবে। আর যদি কারও ৪০ দিনের ওপর চলে যায়, এর মাঝে রমজানও আসে, তবে এটুকু জানতে হবে যে, ৪০ দিনের ওপর যে রক্তটুকু যাবে তা নেফাস নয় বরং তা ইস্তিহাজা অর্থাৎ কোনো রোগজনিত রক্ত। মা চাইলে আর কোনো ক্ষতির আশংকা না হলে রোজা রাখতে পারবে।

মাসিক বন্ধ রেখে রোজা
এক ধরনের পিল পাওয়া যায় যা খেয়ে মাসিক কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা যায়। এই পিল খেয়ে হায়েজ বন্ধ রাখার জায়েজ ও নাজায়েজ উভয় হুকুমই হবে অবস্থা বুঝে।

পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখার কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো পূরণ হলে তখন জায়েজ হবে, অন্যথায় নয়। শর্তগুলো হলো-

১. বিবাহিত হলে স্বামীর অনুমতি লাগবে। কারণ পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ করার সঙ্গে পেটে বাচ্চা আসার সম্পর্ক রয়েছে। আর বাচ্চা পেটে আসার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক রয়েছে।

২. পিল খেলে শরীরের কোনো ক্ষতি হতে পারবে না। অনেকের মাসিকের নিয়মিত অভ্যাস অনিয়মিত হয়ে যায়, অনেকের হরমনজনিত সমস্যা দেখা দেয়, শরীর মোটা হয়ে যায়। অর্থাৎ কেউ কেউ অসুস্থ হন আবার কেউ কেউ হন না। যাদের পিল নিলে সমস্যা হয় তারা পিল নিয়ে মাসিক বন্ধ রাখতে পারবেন না। কিংবা যদি কাউকে ডাক্তার নিষেধ করেন পিল নিতে, তবে তার জন্যও জায়েজ হবে না।

৩. বিনা প্রয়োজনে পিল খাওয়া জায়েজ নেই। (অনেকে এমনিতেই মাসিক বন্ধ রাখতে পিল নেন)।

উল্লেখিত আলোচনায় উঠে আসা প্রয়োজনকে নিরঙ্কুশভাবে শতভাগ বৈধ বলা কঠিন। তবে উমরা ও হজপালনের সময় কিছুটা অবকাশ দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে অনেক ইসলামি স্কলার।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, রমজান মাসে মাসিক বন্ধ রাখার খুব প্রয়োজন হয় না। কারণ রোজার কাজা আদায় করার অনেক সময় থাকে ও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। তবে এটা দুঃখজনক যে, কদরের রাত আমরা বছরে একবারই পাই। আর এই সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায় মাসিকের কারণে। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, কারো যদি রমজানের শুরুতে হায়েজ আসে তবে যেন সে পিল না খায়। আর যদি শেষ দশ দিনে আসে তবে শর্তগুলো মেনে পিল নিতে পারে।

হায়েজ মানব শরীরের একটি সাধারণ নিয়ম। এটা কোনো রোগ বা আল্লাহর তরফ থেকে আজাব নয়। বরং একটা রহমত। হায়েজের কারণে মেয়েরা মা হয়। এটা দুঃখজনক কিছুই না, বা ইবাদত থেকে আল্লাহ বঞ্চিত করছেন এমন কিছুও না। কেউ যদি পুরো রমাজানেই হায়েজ বন্ধ না রাখেন তবে তারও দুঃখের কিছু নেই। আপনি ওইটুকু নেকি হাসিল করতে পারবেন, যা আপনার তকদিরে লেখা আছে।

গর্ভাবস্থায় রোজা
গর্ভাবস্থাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। শুরু থেকে ৩-৪ মাস। ৫ থেকে ৭ মাস ও তারপর থেকে একদম প্রসব পর্যন্ত।

ক. প্রথম অবস্থায় মায়েরা অনেক বেশি দূর্বল ও অসুস্থ থাকেন। বমি হয় প্রচুর এবং জ্ঞান হারান ঘন ঘন। এমন অবস্থায় অনেকে রোজা রাখতে পারেন, অনেকে পারেন না। যারা পারছেন না, বেশি দূর্বল হয়ে যাচ্ছেন; তারা পরবর্তীতে কাজা আদায় করবেন। আর যারা রাখছেন, আল্লাহ তাদের মাঝে বরকত দিন।

তবে মনে রাখবেন, অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোজা ভাঙে না। অনেকে রোজা রাখেন, কিন্তু বমি হওয়ার পর মনে করেন রোজা ভেঙে গেছে এবং খাওয়া-দাওয়া করে ফেলেন; এটা ভুল। তবে বমি মুখে আসার পর কেউ যদি তা ইচ্ছাকৃত গিলে ফেলে রোজা ভেঙে যাবে। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজা রোজা করতে হবে, কাফফারা ওয়াজিব নয়। কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয়, অজান্তেই বমি এসে আবার ভেতরে চলে যায়, তবে রোজা ভাঙবে না।

দ্বিতীয় অবস্থায় মায়েরা মোটামুটি সুস্থ থাকেন। তারা একটু আরাম করে রোজাগুলো রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে পরিবারের বাকি সদস্যদের সাহায্য দরকার। গর্ভবতী মা যেন লম্বা সময় রান্না ঘরে কাজ না করেন, বা বাড়ির অন্য এমন কোনো কাজ না করেন যেন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও খাবারের প্রয়োজন পরে।

সবাই মায়ের প্রতি যত্নশীল হলে ইনশাআল্লাহ রোজা রাখতে সমস্যা হবে না। তবে কেউ যদি এ সময়েও অসুস্থ থাকেন এবং কোনো রোজা রাখতে অপারগ হন, তবে পরে কাজা আদায় করবেন।

তৃতীয় অবস্থাও দ্বিতীয় অবস্থার মতোই। অনেকে এ সময়ে একদম সুস্থ-সবল থাকেন, অনেকে আবার খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে যায়, হাত-পা ফুলে যায়। এমতাবস্থায় গর্ভবতী নারী যদি পারেন রোজা রাখতে তবে রাখবেন। আর যদি না পারেন, পরে কাজা করে নেবেন। তবে এ সময় অনেক বেশি করে ইবাদত-বন্দেগি করবেন। চেষ্টা করবেন সব নামাজ সুন্নতসহ আদায় করতে। তারাবি এবং তাহাজ্জুদ আদায় করতে। শুয়ে-বসে, সবসময় জিকির ও কোরআন তেলাওয়াত করতে। গর্ভের সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। চেষ্টা করবেন দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে। দাঁড়াতে না পারলে বসে আদায় করবেন। অনেকে তারাবি বা তাহাজ্জুদ বাদ দেন। এটা না করে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে বসে হলেও পুরো নামাজ আদায় করার চেষ্টা করা।

দুধ পান করানো অবস্থায় রোজা রাখা
কেউ যখন রমজানের আগে মা হন অর্থাৎ এমন সন্তানের জনক যে কিনা শুধুই মায়ের দুধ পান করে। তখন ওই মায়ের জন্য কষ্টকর হয় রোজা রাখা। কারণ বাচ্চা দুধ পান করলে মাকেও ঘনঘন খাবার খেতে হয়। আবার মা রোজা রাখলে বাচ্চা দুধ কম পায়। আবার অনেক মায়ের দু’জন দুধের শিশু থাকে। সে ক্ষেত্রে মা রোজা রাখলে মা ও শিশু উভয়েই দূর্বল হয়ে পরে। এমতাবস্থায় সেই মায়ের জন্য অনুমতি আছে রোজা না রাখার। এই অনাদায়ী রোজাগুলো পরবর্তী রমজান আসার আগেই কাজা আদায় করে ফেলবে।

তবে এমন যদি হয়, মা রোজা রাখলে দূর্বল হন না এবং বাচ্চা দুধ পায় পর্যাপ্ত, অথবা বাচ্চা দুধ ছাড়াও অন্য খাবার খায়- সে ক্ষেত্রে মা রোজা রাখবেন।

মাসিক ও প্রসব পরবর্তী স্রাব অবস্থায় ইবাদত
নারীরা রমজান মাসে মাসিক ও প্রসব পরবর্তী স্রাবের কারণে ৩ ধরনের ইবাদত থেকে বঞ্চিত হয়। সেগুলো হলো- নামাজ, রোজা এবং কোরআন তেলাওয়াত।

নামাজ তো আল্লাহতায়ালা মাফ করে দিয়েছেন। রোজা পরবর্তীতে কাজা আদায় করা যাবে। আর কোরআন তেলাওয়াত একটা উত্তম সুন্নত। অনেকেই মন খারাপ করেন ইবাদতগুলো করতে না পারার জন্য। তবে এমন আরও অনেক ইবাদত আছে যা এ সময় নারীরা পালন করতে পারেন।

সেহেরি ও ইফতার বানানোর দায়িত্ব নিয়ে রোজাদারকে ইবাদত করার সুযোগ করে দেওয়া। এই সুযোগ করে দেওয়ার ফলে ইবাদতকারীর নেকির অংশীদার তিনিও হবেন, কিন্তু তার সওয়াব একটুও কমবে না।

সারাক্ষণ ইস্তেগফার, তাহমিদ, তাহলিল, তাকবির ও নানান ফজিলতপূর্ণ জিকির করতে পারেন।

প্রতিবেশীসহ পথেঘাটের গরিব-মিসকিনদের মাঝে ইফতার বিতরণ করতে পারেন।

যারা রোজা অবস্থায় আছেন, তাদের অন্যান্য কাজগুলো করে দিতে পারেন। বেশি বেশি দান-সদকা করবেন।

কোরআনে কারিমের তাফসির পড়বেন, রাসূলের জীবনী পড়বেন, দ্বীনি কিতাব পরে ইলম অর্জন করবেন। তবে কোনো কিতাবে কোরআনের আয়াত থাকলে ওই জায়গাটা স্পর্শ করা যাবে না।

অনেকে নামাজের সময় বা তারাবি-তাহাজ্জুদের সময় ইবাদতের অভ্যাস চালু রাখতে অজু করে জায়নামাজে বসে জিকির করেন ও দোয়া করেন। এতে কোনো সমস্যা নেই, তা করতেই পারেন। তবে এতে অজু করা জরুরি নয়, যেহেতু হায়েজ অবস্থায় অজু হয় না। তাই অজু করা না করার মাঝে কোনো তফাৎ নেই। আর হায়েজ অবস্থায় যদি নাপাকি না লাগে তবে জায়নামাজেও বসতে কোনো সমস্যা নেই।

শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলোয় বেশি বেশি দান-সদকার পাশাপাশি বেশি বেশি দোযা ও জিকির করা।

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;