বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য সিরাজগঞ্জের তাড়াশের সগুনা ইউনিয়নের বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা হচ্ছে।ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশের ৫ মাস পর খনন কাজ শুরু করায় খালের পাড়ের মাটি ধসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে সগুনা ইউনিয়নের কাটাবাড়ি গ্রামের কৃষক আইয়ূব আলী বলেন, খালের ধারে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। তার মধ্যে প্রায় ১২ কাঠা জমির ফসল পাড়ের মাটির নিচে পড়ে গেছে।
কুন্দইল গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার এরশাদ আলী বলেন, খালের পাড়ের ছোট-বড় অসংখ্য মাটির চাপ জমির মধ্যে ধসে পড়েছে। জমি থেকে মাটির চাপগুলো তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
একই গ্রামের রসুল নামে আরেক কৃষক বলেন, আমি আবাদি জমি থেকে ধান গাছ তুলে সরিয়ে নিয়েছি। নয়ত সব মাটিচাপা পড়ে যেত। ভুক্তভোগী কৃষকরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, এ খালটি দুই মাস আগে খনন করা হলে কৃষকের কোন ক্ষতি হতো না।
তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, ২০২৩ সালের আগস্টের ২০ তারিখ সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জেলার কাজিপুর উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রেডাসের সত্ত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেনকে বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
এ কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ১ তারিখে খনন কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ও ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে কাজটি শেষ হওয়া কথা ছিল। কিন্তু মৌখিকভাবে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও ঠিকাদার কাজ শুরু করতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।
পরে তাকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখে একটি সতর্কীকরণ পত্র দেয় সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে। অনুরূপ আরও একটি পত্র ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখে দেওয়া হয় উপজেলা প্রকৌশল দফতর থেকে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন প্রকল্পের (১ম সংশোধিত) (আইপিছিপি) আওতায় তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নে বিন্নাবাড়ী আমতলা-কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা হচ্ছে। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৬ টাকা। চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯ টাকা। এ খালে ১৪টি রেফারেন্স বেড ব্লক ও ১৪টি টেম্পোরারি বে মার্ক নির্মাণ করার কথা রয়েছে কাজের নথিতে। কাজটি ২৬‘শ মিটার।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেকু মেশিন দিয়ে বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল খনন করা হচ্ছে। খালের অনেক মাটি ধসে পড়ছে বোরো ও ভুট্টার জমির মধ্যে। ২৬ মিটার খনন কাজের প্রায় ১৮শ মিটার খনন করা হয়ে গেছে। এক কৃষক খালের মাটির দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। অপর দুই জন কৃষক জমির মধ্যে ধেকে মাটির চাপ সরানোর চেষ্টা করছেন। ২৬শ মিটার খালের কোল ঘেষে যাদের জমি রয়েছে এমন বহু কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকাশ ট্রেডাসের সত্ত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যস্ততার কারণে আমি বিন্নাবাড়ি আমতলা কাটা খাল ভায়া কুন্দইল সেতু খাল কার্যাদেশ মোতাবেক শুরু করতে পারিনি।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, খালের তলা গভীর করে খনন করা হচ্ছে পানি ধরে রাখার জন্য। ফলে মাটি বেশি পড়ছে খাল পাড়ে। অতিরিক্ত মাটি বিক্রি করে সরকারি খাতে টাকা জমা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।