৫শ’ শিক্ষার্থী ও এতিমের অভিভাবক পথের ভিখারি!



ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ট্যাক্সিতে গাজী জালালুদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত

ট্যাক্সিতে গাজী জালালুদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ছেলেবেলা থেকেই দারুণ প্রতিভাবান ছিলেন গাজী জালালুদ্দীন। স্কুল জীবনে প্রথম স্থানটি সবসময় তার দখলেই থাকতো। তবে দুঃখজনকভাবে এমন আনন্দময় দিনগুলো খুব বেশিদিন তার জীবনে স্থায়ী হয়নি। মাত্র সাত বছর বয়সেই কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে।

ব্যবসায় কোনমতেই লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছিলেন না জালালুদ্দীনের বাবা। মেধাবী ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানোটাও যেন ভীষণ কষ্টকর হয়ে উঠেছিল তার জন্য। পরিবারের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য সপরিবারে তারা চলে আসেন কলকাতাতে। সেখানেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি।

বরং সঙ্কট দেখা দেয় চূড়ান্ত আকারে। দিনের ভেতর এক বেলা পরিবারের সবার খাবারের আয়োজন করাই তখন বিলাসিতার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলাফল স্বরূপ, জালালুদ্দীনের পড়ালেখার গন্ডি আটকে যায়, ছেড়ে দিতে হয়ে স্কুল। স্কুল ও পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে, বাধ্য হয়েই তাকে বেছে নিতে হয় জীবিকা অর্জনের কঠিনতম পথ। হয়ে যেতে হয় পথের ভিখারি!

শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো মনে করে জালালুদ্দীন বলেন, ‘স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পর প্রথম একটা বিষয় খেয়াল করি আমি। আমার মতো দরিদ্র শিশুরা তখনই ভিক্ষা করা শুরু করে, যখন তাদের পরিবার স্কুলের জন্যে টাকা দিতে পারে না। এই চিন্তা থেকেই আমি সেই বয়সে ভিক্ষা করা শুরু করি’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/07/1541576831430.jpg
নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীর সঙ্গে গাজী জালালুদ্দীন

পরবর্তীতে ১২ বছর বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন কিশোর জালালুদ্দীন। প্রথম থেকেই রিকশা চালানোর আয় থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখতেন তিনি। জমানো এই টাকা দিয়ে অবসরে ট্যাক্সি চালানো শিখতেন তিনি। যে কারণে কিছুদিনের মাঝেই রিকশাচালক থেকে ট্যাক্সিচালক হয়ে যেতে পারেন তিনি।

কিশোর জালালুদ্দীন শুধু ট্যাক্সি চালানোর মাঝেই নিজের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রাখেননি। সেই বয়সেই গঠন করেন ‘সুন্দরবন ড্রাইভিং সমিতি’। যার মাধ্যমে বেকার যুবকদের তিনি ট্রেইনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/07/1541576879297.jpg
নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গাজী জালালুদ্দীন

তবে জালালুদ্দীনের স্বপ্ন আরও বড়, তার কাজ করার ও নিজেকে প্রকাশ করতে চাওয়ার পরিধিটা আকাশসম। তাইতো একটু একটু করে নিজের সীমাবদ্ধতা ও সাধ্যকে ছাড়িয়ে ১৯৮৮ সালে ‘সুন্দর শিক্ষায়াতন মিশন’ নামেও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন স্ত্রী তাসলিমার সঙ্গে। তরুণদের জন্য কারিগরি ও শিক্ষা উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানটি, নিজের দুই বাসার বেড রুমে ২২ জন ছাত্র ও দুই জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

সেই শিশু ভিক্ষুক কিংবা রিকশাচালক জালালুদ্দীনের বর্তমান বয়স এসে দাঁড়িয়েছে ৬৫’র ঘরে। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করা জালালুদ্দীন, বর্তমানে তার নিজ হাতে গড়ে তোলা দুইটি স্কুল ও একটি এতিমখানা পরিচালনা করছেন। ৫০০ শিশু, ২৫ স্টাফ ও ২১ জন শিক্ষকের এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে তার নিজ খরচে ও অনুদানের টাকায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/07/1541576915166.JPG
নিজ ট্যাক্সিতে গাজী জালালুদ্দীন

ট্যাক্সি চালিয়েই যার ব্যয় বহন করেন তিনি। তার ট্যাক্সির গায়ে তিনি লিখে রেখেছেন, ‘এই ট্যাক্সির সম্পূর্ণ আয় দরিদ্রদের স্কুল ও এতিমদের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় কয়া হয়। দয়া করে কোন মামলা দিবেন না’।  তার এই কাজে অর্থনৈতিকভাবে নানান সময়ে সাহায্য করেন তার দুই ট্যাক্সিচালক ছেলেও।

শুধু শিক্ষা নয়, দুপুরের খাবারও দেওয়া হয় সকল শিক্ষার্থীদের। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদানের বন্দোবস্ত করার প্রবল ইচ্ছা জালালুদ্দীন ও তাসলিমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি মোটেও।

উদ্ভাবনশীল ও দৃঢ়চেতা জালালুদ্দীন খুব চমৎকার একটি বিষয়ে পরিবর্তন আনার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, অর্থনৈতিক অবস্থা কারোর শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র নির্ধারক হতে পারে না। এই ধারণাকে বাস্তবায়নের পক্ষে যতদিন সম্ভব নিজ অবস্থান থেকে পরিশ্রম করেন যাবেন তিনি।

শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে কলেজ খোলার ইচ্ছাও রয়েছে তার। তিনি যদি কলেজ করতে না পারেন, তবে তার দুই ছেলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করেন জালালুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘কলেজ শুরু করার বিষয়ে আমি আমার ছেলেদের উপর বিশ্বাস রাখি। আমি গাজী জালালুদ্দীন ভারত থেকে নিরক্ষরতা সম্পূর্ণরূপে দূর করতে চাই’।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;