(পর্ব-১)

তৈমুর লঙ : ঘোড়ার পিঠে বিশ্ববিজয়



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
মায়ের দিক থেকে ধরলে তৈমুরের শিরায় ছিল চেঙ্গিসের রক্ত

মায়ের দিক থেকে ধরলে তৈমুরের শিরায় ছিল চেঙ্গিসের রক্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর একশ বছর পেরিয়ে গেছে। তার সাম্রাজ্য খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আছে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে। অনেকেই রীতিমতো তখতবিহীন। চেঙ্গিসের এক পুত্রের নাম চাগতাই, তার মৃত্যুর পর বংশধররা ১২২৭ সাল থেকে ১৩৬৯ সাল পর্যন্ত মধ্য এশিয়ায় শাসন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। তার নাম অনুসারেই বংশধরদের নাম হয় চাগতাই বংশ।

চাগতাইয়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসে তার নাতি কারা হালাকু। কিন্তু এ দফায় বেশিদিন টিকতে পারেননি। মোঙ্গল নেতা কুয়ুক খান তাকে সরিয়ে চাগতাইয়ের পঞ্চম পুত্র ইসু মসুকিকে সিংহাসনে বসান। মোঙ্গল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি কারাকোরামে স্থিত মঙ্গু খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হত্যা করা হয় ইসু মসুকিকে। ফলে আবার ক্ষমতায় আসেন কারা হালাকু। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ওরগানা সাময়িকভাবে শাসনকার্য চালাতে থাকেন। সময় হলে ১২৬৬ সালে মসনদে বসেন কারা হালাকুর পুত্র মোবারক শাহ।

চাগতাই সাম্রাজের তারুণ্যে তার অবস্থান


চাগতাইদের মধ্যে তিনিই প্রথম গ্রহণ করে ফেলেছিলেন ইসলাম ধর্ম। ফলে শাসন ব্যবস্থাতে আগাগোড়া পরিবর্তন আসে। আগেকার অভিজাত ও প্রতিষ্ঠিতদের বিষয়টা না মেনে নেওয়াই স্বাভাবিক। শীঘ্রই তাকে সরিয়ে দিয়ে সামনে আসলেন চাচাত ভাই বুরাক খান। বুরাক খানের পর পুত্র দুয়া খান এবং তারও পরে দুয়া খানের তিন পুত্র ইসেন বুকা, কাবাক এবং তারমাশিরিন একের পর এক গদিতে বসেন। সর্বশেষ জনের নাম তারমাশিরিন, যিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তিনি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আলাউদ্দীন নাম নেন।

তৈমুর পর্ব

আলাউদ্দীনের মৃত্যুর পর চাগতাই সাম্রাজ্য চরম গোলযোগে পতিত হয়। তখন চাগতাই মোঙ্গলদের সাথে তুর্কিদেরও যোগাযোগ বেড়ে গেছে। ঠিক সেই রকম এক বংশধর তরুণী তাকিনাহ খাতুন, যার বিয়ে হয়েছিল আমীর তুরঘাই নামের তুর্কি দলপতির সাথে।

আট দশটা বিয়ের মতো এই বিয়েটাও সাধারণ হতে পারত; কিন্তু হয়নি। কারণ তাদের ঘরে এমন এক সন্তান জন্ম নেয়, যার হাতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। আমৃত্যু রহস্যময় মানুষটির নাম তৈমুর; জীবনের প্রত্যেকটি ঘটনায় তার বিস্ময়কর নাটকীয়তা সাহিত্যিকের কল্পনাকেও হার মানায়। শত্রু শিবিরের ধ্বংসস্তূপের ওপর তার নৃশংস উল্লাস আর একই সাথে শিল্পের প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধ—বিপরীত বৈশিষ্ট্য খাপ খেয়েছিল তার সাথে। শত্রুকে যুদ্ধের মাঠে রেখেই মজে থাকতে পারতেন দাবা খেলায়। ইতিহাসের অনেকেই তাকে ‘এ ম্যান অব প্যারাডক্স’ বলে ডাকতে পছন্দ করেন।

তার রহস্যময়তার জন্যই ঐতিহাসিকদের কাছে তিনি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু


১৩৩৬ সালে মধ্য এশিয়ার কেস নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আমীর তুরঘাই ছিলেন বারলাস গোত্রের গুরগান শাখার প্রধান। গুরগান শব্দের মানে গৌরবময় আর তৈমুর মানে লৌহ। নিজের জীবনে নামের অর্থ ভালোভাবেই প্রমাণ করেছেন আমীর তৈমুর গুরগান।

বাল্যকাল থেকেই তার দাপুটে স্বভাবের পরিচয় পাওয়া যেতে থাকে। সামরিক বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন মাত্র বারো বছর বয়সেই। পিতার মৃত্যুর পর থেকেই মূলত নানা বিপদ আর প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে থাকেন। তখন ট্রান্সঅক্সিয়ানার সিংহাসন নিয়ে গোলযোগ চলছে। মঙ্গোলীয় শাসনকর্তা তুঘলক তৈমুর খানের আক্রমণের কারণে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন তৈমুর। সন্তুষ্ট হয়ে তুঘলক খান প্রথমে শাসক এবং পরে পুত্রের উপদেষ্টা মনোনীত করেন। কিন্তু শীঘ্রই ষড়যন্ত্রের কারণে সমরকন্দ ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।

এক ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবন

চরম সহায়হীন অবস্থায় এক হতভাগ্যের জীবন কাটছে তখন তৈমুরের। ভাগ্যান্বেষণে কী না করেছেন? খিভার শাসনকর্তার কাছে সাহায্যের আবেদন করলে তিনি মুখে হ্যাঁ করলেও বাস্তবে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। অবস্থা বুঝতে পেরে মরুভূমিতে পলায়ন করেন তৈমুর। সময়টা ছিল আসলে তার পরীক্ষার, অন্তত ভাগ্যবিধাতা তাকে প্রস্তুত করছিলেন এভাবেই। নাহলে বিপদের পরে আরো বিপদে কেন পড়বেন? একদল তুর্কি তাকে বন্দী করলে তিনি আরো একবার কঠিন কৌশলে সেখান থেকে পলায়ন করলেন।

ভাগ্য বিড়ম্বিত তৈমুর এখানে-সেখানে ঘুরে ক্লান্ত। কোথাও আশার কোনো বাতি নেই। তারপরেও তিনি অধৈর্য হননি। ইতোমধ্যে সিস্তানের শাসনকর্তা জালালউদ্দীন মাহমুদ এক বিদ্রোহ দমনের জন্য তার কাছে সাহয্য প্রার্থনা করল। তিনি সাড়া দিলেন। অধিকৃত হলো বিদ্রোহীদের দূর্গ।

এত দ্রুত কি আর ভাগ্য বদলায়? দ্রুত পাল্টে গেল দাবার ছক। শত্রুরা যাবার আগে জালালউদ্দীনকে তৈমুরের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে যায়। তাছাড়া তৈমুরের সম্ভাবনা এবং ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি তাকে ভবিষ্যৎ বিপদ হিসাবে গণ্য করলেন। ফলে আক্রমণ করলেন তৈমুরকে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেও পায়ে গুরুতররূপে আঘাত পান। সারাজীবন আর সেই পা ভালো হয়ে ওঠেনি। এই খোঁড়া পায়ের জন্যই তার নামের সাথে ‘লঙ’ যুক্ত হয়।

পরবর্তী-জীবনে আর পা-টা ঠিক হয়নি


সিস্তান বিজয়ের পর তার চোখ পড়ল সাম্রাজ্য বৃদ্ধির দিকে। ধীরে ধীরে কুনদুজ থেকে কেস পর্যন্ত দখল করে আধিপত্য বৃদ্ধি করলেন তৈমুর। ততদিনে তুঘলক খানের মৃত্যু হয়ে পুত্র খাজা ইলিয়াস পরবর্তী শাসক হিসাবে সমরকন্দের গদিতে বসেছেন। সুযোগ পাওয়া মাত্রই আক্রমণ করে সমরকন্দ দখল করে নেন তৈমুর। এবার যেন পা রাখার একটা জায়গা হলো।

ক্ষমতায় আরোহণ

এতদিন এতগুলো অভিযানে তৈমুরের সাথে আরো এক ব্যক্তি সবসময় পাশে ছিলেন—আমীর হুসাইন। ক্ষমতার প্রবেশদ্বারে এসে তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরল। আমীর হুসাইন সাবেক শাসনকর্তার পুত্র বলে দুজনের সমান যোগ্যতার অর্জনকেও তিনি নিজের হাতে রাখলেন। উপরন্তু বারলাস বা তৈমুরের গোত্রের ওপর কর বাড়িয়ে দিলেন। মনঃক্ষুণ্ণ তৈমুর তার সীমাবদ্ধ ক্ষমতাকে মেনে নিলেন উদারভাবে।

সময় তো আর একরকম যায় না। হঠাৎ তৈমুরের প্রিয়তমা স্ত্রী আলজাই মৃত্যুবরণ করলেন। আলজাইয়ের আরেক পরিচয় ছিলে আমীর হুসাইনের বোন হিসাবে। মূলত আলজাইয়ের কারণে আত্মীয়তার বন্ধন হেতু এতদিন সংঘর্ষ হয়নি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তা সম্ভব হলো। তৈমুর এবার ক্ষমতা হাতে নেবার জন্য সচেষ্ট হলেন।

আরো পড়ুন ➥ চেঙ্গিস খান : রহস্যময় এক বিশ্ববিজেতা

প্রথম দিকে আমীর হুসাইন মোটামুটি নিশ্চিন্ত ছিলেন নিজের শক্তির অধিকতার কারণে। কিন্তু জাঠ বিদ্রোহ দমনের জন্য দীর্ঘ ছয় বছর ব্যস্ততার দরুন শক্তি অনেকটাই ক্ষয়ে এসেছিল তার। এই সুযোগটাই নিলেন কৌশলী তৈমুর। দু্ই পক্ষের মধ্যকার সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হলেন হুসাইন। দীর্ঘ হতভাগ্য জীবনের শেষে ১৩৬৯ সালে সিংহাসনে আরোহণ করলেন আমীর তৈমুর। রাজধানী হলো সমরকন্দ। যেন অন্ধকারের বুক ছিঁড়ে সবেমাত্র ভোর হলো।

পারস্য বিজয়

তৈমুরের বিশ্বাস ছিল—“আসমানে যেমন একজন খোদা, জমিনেও তেমনি একজন বাদশাহ থাকবে।” তাই সিংহাসন লাভের সাথে সাথেই রাজ্য বিজয়ে মনোনিবেশ করেন। মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক গোলযোগ তাকে উক্ত অঞ্চল জয় করতে প্ররোচিত করে। ১৩৬৯ সাল থেকে ১৩৮০ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় জাঠ এবং খাওয়ারিজম রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন তিনি। তারপর নজর ঘুরান পারস্যের দিকে। ১৩৮০ সালে তৈমুর খোরাসান আক্রমণ করে শাসক গিয়াসউদ্দীন পীর আলিকে পরাজিত করেন। তারপর একে একে দখল করেন হেরাত, কান্দাহার এবং কাবুল। কালাত-ই নাদিরী এবং তুরশীজ নামে দুটি দুর্গ বিজয় করেন।

সমসাময়িক শিল্পীর আঁচড়ে তৈমুরের পারস্য আক্রমণ


তৈমুরের পরের লক্ষ্য সিস্তান। সিস্তানের যুবরাজ কুতুবউদ্দীন শাহের নিকট সন্ধিপ্রস্তাব পাঠানো হলো। তারা প্রস্তাবে তেমন কোনো গুরুত্ব দিল না। বরং নতুন গজিয়ে ওঠা শাসক ভেবে আক্রমণ করে বসল। তার মাশুল গুনতে হলো শীঘ্রই। তৈমুর প্রবল প্রতাপে তাদের পরাজিত করলেন। পরাজিত সিস্তানিরা আরো বড় ভুল করল পরে রাতের অন্ধকারে আবার আক্রমণ করে। এবার তৈমুরের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। শুধু বিজয় অর্জন করেই থেমে গেলেন না; নিলেন চরম প্রতিশোধ। ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তা পরিণত হলো জনমানবহীন শ্মশানে। এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পি সাইক্স বলেছেন, “নগরটি এখন হিংস্র জন্তু ও পেঁচাদের আবাসে পরিণত হয়েছে।”

খোরসান ও সিস্তান বিজয় নিশ্চিত হলে তৈমুর বের হন উত্তর পারস্য বিজয়ের উদ্দেশ্যে। ১৩৮৪ সালে অতিক্রম করলেন অক্সাস নদী। দীর্ঘ একমাস অবরোধের পর দখলে এলো অস্ত্রাবাদ। নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করলেন রাই, মাজেনদারান, সুলতানিয়াসহ একের পর এক নগরী। এক ভাগ্য বিড়ম্বিত তরুণ থেকে এখন একটা সম্ভাবনাময় রাজ্যের অধিপতি।

কিন্তু তখনও তৈমুরের গল্পের মূল আখ্যান শুরুই হয়নি। গোল্ডেন হোর্ড থেকে অটোম্যান সুলতান অব্দি তার কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হয়েছে সিনেমার মতো। সেই গল্প আসবে পরবর্তী পর্বে।

● পর্ব-২ পড়তে ক্লিক করুন

   

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গা ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না, অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;

অকালে আম পাকে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বৈশাখে তোর রূদ্র ভয়াল,

কেতন ওড়ায় কালবৈশাখী!

জষ্ঠি মাসে বনে বনে

আম কাঠালের হাট বসে কি...’

রবিঠাকুরের কলমে রচিত এ পংক্তি যেন, কেবল কাগজের উপর কালিতে সাজানো কিছু শব্দ নয়। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর সকল বৈশিষ্ট্য খুব অল্প ভাষায় সুসজ্জ্বিত করে গানের রূপে সামনে আনেন বিশ্বকবি।

দিন গুনতে গুনতে বছরের প্রথম মাসটি অনায়াসে কেটে গেল। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। ভয়ংকর কাল বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে; জৈষ্ঠ্যের পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুই যেন গ্রীষ্মের আসল আনন্দ।  

গ্রীষ্মের পরিপূরক হলো আম। আম পছন্দ নয়, এমন মানুষটি খুঁজে পাওয়া দায়! এজন্যই আমকে বলে ফলের রাজা। ত্যক্ত-বিরক্ত করা গরমেও পাকা টসটসে আমের সুঘ্রাণই যেন আনন্দের স্বস্তি। তবে সে আনন্দেও বালি ঢেলে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভোজন-রসিক মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে রসে টসটসে তাজা ফলের স্বাদ আস্বাদনের জন্য। অনেক ভোক্তদের সেই অপেক্ষা বৃথা হয়ে যায় অপরিপক্ক ফলের কারণে।

অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকানোর চেষ্টা করে। আম যখন কাঁচা অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে সাইট্রিক এসিড ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড থাকে। এ কারণে আমের হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রার লগারিদম মান খুব কম হয়, ফলে আম অম্লধর্মী হয়। এছাড়া কাঁচা অবস্থায় আমে উচ্চ ওজনের পেকটিনের মজুদ বেশি থাকে।

অপরিপক্ক পাকা আম

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাঁকার সময় এই পেকটিনের ওজন কমতে থাকে। আমের মধ্যকার ভিটামিন ‘সি‘ কালক্রমে বদলে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ক্লোরোফিল পরিবর্তিত হয়ে গ্লোবুলার ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের  উপসি্থতি বাড়তে থাকে।(‘বিজ্ঞানচিন্তা’র তথ্যমতে) এই কারণে কাঁচা আমের সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে লালচে-হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এভাবে পাকার ফলে আম হয় সুস্বাদু। আমের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যায়।

তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)  এর প্রয়োগের কারণে আমের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে থাকা (৮০থেকে৮৫ভাগ) ক্যালসিয়ামের কারণে আমের অম্লত্ব নষ্ট হতে শুরু করে। অম্ল-ক্ষারের প্রশমনের কারণে আমের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই আমের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আমের ভিটামিন বি১ পানিতে দ্রবনীয়। আমের আর্দ্র অংশের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিক্রিয়া করে অ্যাকটেলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে আম অসময়েই পাক শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমের রাসায়নিক পরিবর্তন না ঘটলেও বাহ্যিকভাবে রঙের পরিবর্তনের কারণে দেখলে মনে হয় আম পেকেছে। এই অপরিপক্ক আম খেলে কেবল রুচি ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাই নয়! শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

;

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;