নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন অবাস্তব: নোয়াব
নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের রোয়েদাদ বাস্তবসম্মত নয় বলে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকার কয়েকটি সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নোয়াব এ বিবৃতি প্রকাশ করে।।
সংগঠনের সভাপতি মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদপত্র শিল্পের বর্তমান সংকট এবং নোয়াবের প্রস্তাবসমূহ বিবেচনায় না নিয়েই সরকার গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশ করেছে (যদিও ওয়েজবোর্ডের গঠনের বিষয়ে আইনগত প্রশ্ন আছে এবং তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি রিট মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে)।
এতে আরও বলা হয়, নোয়াব কখনো ওয়েজ বোর্ডের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু, ওয়েজ বোর্ডকে মালিক-সাংবাদিক উভয় পক্ষের জন্য বাস্তবসম্মত করার অনুরোধ করেছে নোয়াব। কিন্তু, সংবাদপত্রশিল্পের বর্তমান সংকট এবং নোয়াবের প্রস্তাবসমূহ বিবেচনায় না নিয়েই সরকার ১২ সেপ্টেম্বর নবম সংবাদপত্র ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করেছে। এই গেজেটে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেক প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা নোয়াবের বিবেচনায় বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য নয়।
সার্বিকভাবে নোয়াব থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়, ওয়েজ বোর্ড কমিটি এবং মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে সংবাদপত্রশিল্পের সংকট ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে বিবেচনার জন্য যেসব প্রস্তাব করা হয়েছিল, তার অধিকাংশই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে এই ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ সংবাদপত্রগুলো কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এ অবস্থায় নবম ওয়েজ বোর্ডের রোয়েদাদ পুনর্বিবেচনাসহ সংবাদপত্রশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে অধিক মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে নোয়াব মনে করছে।
এর আগে নবম ওয়েজ বোর্ড বিষয়ে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নোয়াবের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নোয়াব সদস্যরা নবম সংবাদপত্র ওয়েজ বোর্ডের রোয়েদাদ বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মতামত দেন।
নোয়াবের ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন, দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, মুদ্রাকার উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান সংবাদপত্রশিল্প কঠিন সময় পার করছে উল্লেখ করে নোয়াব সদস্যরা বলেন, সরকার সংবাদপত্রশিল্পে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করলেও সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব আয় দিয়ে এই ওয়েজ বোর্ডের ব্যয়ভার বহন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের তেমন কোনো বিশেষ সহায়তা ও অনুদান থাকে না। সংবাদপত্রের মালিকেরা সব সময় সাংবাদিক-কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা ও বেতন-ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে সংবাদপত্রশিল্প অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন সময় পার করছে। পত্রিকার বিজ্ঞাপন আয় ও সার্কুলেশন উভয়ই কমছে ধারাবাহিক ও আশঙ্কাজনকভাবে। অন্যদিকে সরকারি বিজ্ঞাপনের রেট অনেক কম এবং সরকারের কাছে বড় অঙ্কের বিল বাকি পড়ে থাকে। ভ্যাট-ট্যাক্স তো রয়েছেই। এ অবস্থায় টিকে থাকতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নবম সংবাদপত্র ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুমুখী সংকটের মধ্যে ফেলবে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নবম ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশ। অবিলম্বে এ গেজেট বাতিল করে সংশোধিত গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তাদের দাবি, সংবাদকর্মীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মালিকপক্ষের আবদার রক্ষা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেট বাতিল না হলে সাংবাদিক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে সারাদেশে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা।
সমাবেশে নেতারা বলেন, গত শনিবার (১৪ সেপ্টম্বর) প্রকাশিত গেজেটে সাংবাদিকরা বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে তার কয়েকটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এর আগের সব কয়টি ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদে সাংবাদকিদের অবসর, চাকরিচ্যুতি অথবা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি করে গ্র্যাচুইটির বিধান রাখা হয়েছিল। এবার নবম ওয়েজবোর্ড অনুরূপ সুপারিশ করেছে। তা ছাড়া সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মীদের আয়কর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছিল। মালিকপক্ষ প্রতিটি ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদের সময়ই এ দুটি বিষয়ে সংশোধন দাবি করলেও তা গ্রাহ্য হয়নি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদের গেজেটে সাংবাদিকদের গ্র্যাচুইটি দুটি থেকে কমিয়ে একটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য।