ছাড় দিয়েই গ্রামীণফোন-রবির বকেয়া বিষয়ে সমাধান হবে
ছাড় দিয়েই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দু'টি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন এবং রবির কাছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘বকেয়া সংক্রান্ত যে সমস্যা রয়েছে, সেটি সমাধানে তারাও হারবে না, আমরাও হারব না। তারাও এ দেশে ব্যবসা করবে এবং আমাদের পাওনাও বুঝিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে আমরাও তাদের সাহায্য করব।’
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকা করে পাই। বকেয়া চার হাজার কোটি নিয়ে বিরোধ। তারা কিছু কিছু ব্যাপারে বিরোধ করছে। আমরা নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেছি। বিটিআরসির ব্যাপারটি আট হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ভুল বোঝাবুঝির জন্য এ সমস্যা হয়েছে। আমরা দেখছি কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে সমস্যা সমাধান হবে।’
‘তবে আমাদের লসের সম্ভবনা বেশি। কিন্তু সমাধানের বাইরে আমরা অন্য কোনো পদ্ধতিতে যাব না। আমরা আশা করি, দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি সমাধান হবে। আমরা এর জন্য আদালতে যাব না, নিজেরা বসেই সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান করব। সমাধান অবশ্যই হবে। তারাও জিতবে, আমরাও জিতব,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
দুই মোবাইল ফোন অপারেটর যে মামলা করেছে, তারা সেটি প্রত্যাহার করবে বলেও জানান তিনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘প্রকৃত পক্ষে বিটিআরসির সঙ্গে দু’টি মোবাইল ফোন অপরেটরের সঙ্গে দেনা-পাওনার বিষয় আছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে। তারা দেশের রেভিনিউ ও জনগণের যোগাযোগে ভূমিকা রাখছে। কাকতালীয়ভাবে বড় দু’টি অপারেটরের সঙ্গেই দেনা-পাওনা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তারা জনগণের সেবা করছে ২২ বছর ধরে, এর মধ্যে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। রবির বকেয়া ৮৬৭ কোটি টাকা, বাকি বকেয়া গ্রামীণফোনের।’
‘দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। অর্থমন্ত্রী যেটি বলেছেন, আমাদের সবার মত একই। আমরা চাই না, ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হোক। আবার জাতীয় রাজস্বও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। অর্থমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা কোনো পক্ষকে হারাতেও চাই না, আবার নিজেরাও হারতে চাই না। ব্যবসার জন্য সুন্দর পরিবেশ থাকুক সেটা চাই। কারও সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। আমরা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারব,’ আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরা সহযোগিতা করছি। এ সুন্দর উদ্যোগের জন্য আমরা সন্তুষ্ট। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান হবে। এটি আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দ্রুত সমাধানে আসতে চাই।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘তাদের কাছে বিটিআরসির পাওনার ৬০ থেকে ৭০ ভাগই ইন্টারেস্ট। তবে আমরা যে চার হাজার কোটি টাকা পাই, সেখানে ইন্টারেস্ট নেই। বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আগে টাকা দিয়ে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু এখন আগে সমাধান দরকার। তারা মন্ত্রীকে কথা দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধান হবে।’
এ সময় বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।