বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়: তথ্যমন্ত্রী



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
ভারতীয় হাইকমিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

ভারতীয় হাইকমিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ-ভারতের মানুষের মেলবন্দন দুই দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আমাদের সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে ভারতীয় হাইকমিশনে ‘ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটেক)’ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত এখন পৃথিবীর দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আমাদের দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হবার চেষ্টা করেছি। ভারতও বিভিন্ন জায়গায় আইসিটি হাব গড়ে তুলে চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যুগে; আমরা কাছাকাছি সময়ে যুক্ত হতে সক্ষম হয়েছি।

ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটেক) হলো ভারত সরকারের ডেভলপমেন্ট পার্টনারশিপ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি কর্মসূচি। ১৯৬৪ সালে এ প্রোগ্রাম চালু হয়। এটি এশিয়া, আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ছোট দ্বীপ দেশগুলোসহ ১৬১ দেশজুড়ে বন্ধুত্বের সেতু গড়ে তুলতে অসামান্য ভূমিকা রাখছে।

   

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়তা করতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৮ মে) বিকেলে গণভবনে যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ট্রেভেলিয়ান কক্সবাজার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো উত্থাপন করলে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যাম্পে লোকজনের ভিড় বেশি। তাই এসব সুবিধা ক্যাম্পে নিশ্চিত করা অসম্ভব। তবে তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর দ্বীপে সব সুযোগ-সুবিধাসহ ঘর নির্মাণ করেছে।

ভাসানচরের সুবিধার মধ্যে রয়েছে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ, বলেন তিনি।

বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনকে বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পারস্পরিক সুবিধার্থে সরাসরি বিনিয়োগের জন্য তিনি ব্রিটেনকে বাংলাদেশে স্থাপিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

ব্রিটেনে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্রিটেনের সাথে একটি এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) স্বাক্ষর করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই কেউ যেন অবৈধভাবে বিদেশে না যায়। এ লক্ষ্যে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।

;

নকল স্যালাইন তৈরি চক্রের ৬ সদস্য গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর পুরান ঢাকায় সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)’র নাম পরিবর্তন করে এসএনসি নামে চিনি ও লবন দিয়ে নকল স্যালাইন তৈরি করা চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ উত্তর। এ সময় তাদের কাছ থেকে নকল স্যালাইনসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিন, স্যালাইন, নকল কোমল পানীয়, নকল ড্রিংকো উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- আনোয়ার হোসেন (৩৮), শাহ নেওয়াজ খান (৩৩), মোরশেদুল ইসলাম (৫১), সবুজ মিয়া (২৩), আরিফ (২৩) ও হানিফ মিয়া (৩০)।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে শ্রমজীবি মানুষকে টার্গেট করে দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এ স্যালাইন ছড়িয়ে দিতো চক্রটি। তীব্র গরমে এই ধরনের নকল স্যালাইন পানে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাসহ মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, নকল পণ্য তৈরির চক্রটি এক দিকে পুরান ঢাকায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া স্যালাইনের নকল প্যাকেট বানাচ্ছে, অপর দিকে লবণ চিনি দিয়ে স্যালাইন বানাচ্ছে। কোটি কোটি নকল স্যালাইন তৈরি করে তারা রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে ধান কাটার সিজন, আরেক দিকে নির্বাচন। ফলে বাজারে প্রচুর স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে সবাইকে গ্রেফতার করেছি। তারা নকল স্যালাইনের পাশাপাশি ভেজাল কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস তৈরি করত। নামীদামী ব্র‍্যান্ডের মোড়কে কেমিক্যাল দিয়ে শিশু খাদ্য, কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস তৈরি করত।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, চক্রের সদস্যরা সবাই বিভিন্ন ব্যবসা করতো। আনোয়ার হোসেন এক সময় সেলুন ব্যবসা করত, হানিফ মিয়া বিক্রি করতো সনপাপড়ি। তারা এখন নকল টেস্টি স্যালাইনের কারখানা মালিক। তারা পুরান ঢাকার কদমতলি থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় এসব নকল পন্য তৈরি করতো। এটির মূলহোতা হলো আনোয়ার হোসেন। কোনো তারিখ ছাড়াই বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া তৈরি করা পণ্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অনলাইনে ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ডিলার নিয়োগ দিত। শিশু খাদ্যে সোডিয়াম স্যাকারিন আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার, মানহীন কেমিক্যাল দিয়ে এসব ভেজাল খাদ্য তৈরি করত। এসব কাজে তাকে সহায়তা করত শাহ নেওয়াজ ও মোর্শেদ। শাহনেওয়াজ প্রাণ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর। প্রাণ কোম্পানির পাশাপাশি নকল শিশু খাদ্য বিক্রি করত। এজন্য বড় আকারের কমিশন পেতো আনোয়ার।

হারুন আরও বলেন, কেমিক্যাল ও আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার ব্যবহার করে ভেজাল খাদ্য তৈরি করছে। এসব খেয়ে লোকজন অসুস্থ হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে ও পানি শূন্যতা পূরণের জন্য এসব স্যালাইন মানুষ পান করে। নকল স্যালাইন খাওয়ার পর মানুষ শরীরের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতো। এমন কি ব্রেন, হার্ট ও কিডনিতেও নানা সমস্য দেখা দিত।

ডিলারদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দেওয়ার পরেও তাদের অনেক টাকা লাভ হতো। আসলে তাদের তেমন কোনো উৎপাদন খরচ নেই। কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

;

বিনামূল্যে সার ও বীজ পেলেন তালতলীর ৩ হাজার কৃষক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরগুনা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বরগুনার তালতলীতে ৩ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।

বুধবার (০৮ মে ) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদের মাঝে এ প্রণোদনা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের খরিপ ০১ মৌসুমে উফসী আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদনের বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে আউশ ধান বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। যেখানে প্রতিজন কৃষকে ৫ কেজি উফসী আউশ ধান বীজ, ২০ কেজি সার প্রদান করা হয়েছে।

বীজ ও সার বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন, তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবী-উল-কবির, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুমপা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ইলিয়াস, বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর মিয়া আলম মুন্সী প্রমুখ।

;

আলতাদিঘী যেন খেলার মাঠ, পুনঃখননের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
আলতাদিঘী যেন এখন খেলার মাঠ, পুনঃখননের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ

আলতাদিঘী যেন এখন খেলার মাঠ, পুনঃখননের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ‘আলতাদিঘী পুনঃখননের মাধ্যমে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ’ প্রকল্পের জন্য দিঘীটির চতুর্দিকের কয়েক হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, কিছুদিন আগেও আলতাদীঘি ছিলো সবুজের আভা। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এখন খাঁ খাঁ করছে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান। সম্প্রতি উদ্যানের দীঘি খনন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও গাছ রোপনসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাটা পড়ে নানা প্রজাতির হাজারো গাছ।

নওগাঁ জেলা শহর থেকে সাব্বির হোসেন বন্ধুকে সাথে নিয়ে এসছেন আলতাদীঘি দেখতে। কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, দিঘীটি অবশ্যই সংস্কার জরুরী কিন্তু তাই বলে এভাবে নির্বিচারে চর্তুদিকের সারিবদ্ধ সব গাছগুলো কাটতে হবে? গাছগুলো রেখে কি সংস্কার করা যেতোনা? দিঘীর চতুর্দিক দেখে এটাকে আর দিঘী বলা যায়না । এ যেন এক মরুভূমি।

উদ্যানের উন্নয়ন কাজে গঠিত কমিটির সদস্য কায়েস উদ্দিনের দাবি, আলোচনা সভায় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়নি। হঠাৎ করে আলতাদিঘীতে এসে দেখি গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

তবে ধামইরহাটের বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নতুন বনায়ন হবে, একটা গাছ তো আর সারাজীবন থাকবে না। এটি সামাজিক বনায়নের অওতায় স্বল্প মেয়াদি সৃজিত উডলট বাগান।

বন বিভাগ বলেছে, সামাজিক বনায়নের আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির চারা দ্বারা বনায়নকৃত গাছগুলি অপসারণ করে স্থানটি দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আলতাদিঘীর খননকৃত মাটি দিয়ে নীচু স্থান ও পাড় সংস্কার করার জন্য দীঘির চারপার্শ্বে বিদ্যমান ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ১৫টি লটে ৩৫,৯৫,২৫৬/- (পঁয়ত্রিশ লক্ষ পঁচানবাই হাজার দুইশত ছাপান্ন) টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়।

এখানে ঘুরতে নওগাঁ শহরের একটি কলেজ এর শিক্ষার্থী লুবনা ইয়াসমিন বলেন, ‘গাছ কাটার আগে এসব জায়গাতে বেশ কিছু পাখির বাসা দেখেছি। এখন সেখানে বালুর স্তুপ। এগুলো মেনে নেয়া যায়?

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই অযুহাতে ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস গাছ কাটার বিষয়টি হয়তো মেনে নেয়া যায় তবে দিঘীর চতুর্দিকে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো পরিবেশ বান্ধব বিশাল আকৃতির ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ কাটার বিষয়টি অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফকুল ইসলাম বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধন বৃক্ষরোপনের মধ্যে নিহিত, নিধনে নয়। আজকের কর্তনকৃত গাছগুলো হতে সময় লেগেছে ১৫ থেকে ২০ বছর। অথচ নিমিষের মধ্যে তা ধংস করা হচ্ছে। আধুনিক নকশায় গাছ রেখেই সুন্দর পরিকল্পনা করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান এঅঞ্চলে ফুসফুসের মতো কাজ করে। আমরা এবিষয়ে অনেক মিটিং মিছিল মানববন্ধন করেছি কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। পুরানো হাজার হাজার গাছগুলো যারা নির্বিচারে কাটছেন তারা অবশ্যই অপরাধ করছেন। এসব উদ্যেশ্য প্রনোদিত।’

রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান এ বিষয়ে জানিয়েছেন, আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত আলতাদীঘিটি দীর্ঘদিন যাবত খনন ও সংস্কার না করার কারণে দীঘিটির গভীরতা কমে গিয়ে প্রায় ১ ফুটের উচ্চতার নিচে পানি ছিল এবং চারপাশের পাড়গুলো ভেংগে যাওয়ায় দীঘিটি পুন:খনন ও পাড় সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছিল।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৬৪৯.৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মাধ্যমে দীঘিটির খনন কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। খননকৃত মাটি দিয়ে দীঘিটির চর্তুপার্শ্বের পাড় মেরামত ও উচুকরণ করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আলতাদীঘির পাড় জুড়ে সামাজিক বনায়নের আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির চারা দ্বারা বনায়নকৃত গাছগুলি অপসারণ করে স্থানটি দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়।

পুকুরের খননকৃত মাটি দিয়ে নীচু স্থান ও পাড় সংস্কার করার জন্য আলতাদীঘির চারপার্শ্বে বিদ্যমান ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ১৫টি লটে ৩৫,৯৫,২৫৬/- (পঁয়ত্রিশ লক্ষ পঁচানবাই হাজার দুইশত ছাপান্ন) টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়েছে। এ অর্থ সংশ্লিষ্ট ১৬ জন উপকারভোগীগণের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের চারিপাশে বিদ্যমান গাছগুলো স্থান উপযোগী না হওয়ায় গাছগুলি কর্তন করে দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা চলতি অর্থবছরের বর্ষাকালে বনায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আলতাদীঘিটি ২.৫০ মিটার খনন করা হয় এবং বর্তমান তাপদাহ ও তীব্র খড়ার কারণে দীঘিটি শুকিয়ে যায়।

"সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্পের" মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন আলতাদীঘির জলাশয়ের চারিপাশে ২ মিটার প্রন্থ ইটের সোলিং এবং পাকা রাস্তা তৈরী করা হবে এজন্য দীঘির পাড়ের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছগুলি কর্তন করে আলতাদীঘির চর্তুপার্শ্বের পাড় মেরামত ও উচু করা হয়েছে।

দেশীয় প্রজাতির ৩০০০টি চারা দ্বারা দীঘিটির চারপাশে বনায়নসহ দীঘিটিতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চলতি অর্থ বছরের নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে সমাপ্ত হলে পুরো আলতাদীঘি এলাকা আবারও সবুজে পরিণত হতে শুরু করবে। দীঘির পানির পাপ্যতা নিশ্চিত ও বনাঞ্চল ব্যবস্থাপনার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্টির কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন এবং ইকো টুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

আলতাদীঘির নামকরণেও রয়েছে ঐতিহাসিক মজার ঘটনা। অনেক অনেক দিন আগের কথা। এ এলাকা ছিল বটু রাজার। জগদ্দলে ছিল সেই রাজার বাড়ি। তাঁর ছিল এক দয়াবতী রাণী। রাণী একদিন আবদার করলেন, তাকে বড় এক দীঘি খুঁড়ে দিতে হবে। রাজা বললেন, ঠিক আছে। তুমি হাঁটতে শুরু কর। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ফেটে রক্ত বের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এখান থেকে হাঁটা শুরু করে যেখানে গিয়ে পা থেকে রক্ত বের হবে সেই পর্যন্ত দীঘি কাটা হবে। রাণী হাঁটতে থাকলেন। হাঁটা আর শেষ হয় না। রাজা পড়ে গেলেন চিন্তায়। শেষ পর্যন্ত পাশের দেশে গিয়ে দীঘি কাটতে না হয়। তাই কৌশলে তার সৈন্য দিয়ে রাণীর পায়ে আলতা লাগিয়ে বললেন, রানীর পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। দীঘি সে পর্যন্তই খোঁড়া হল। ধীরে ধীরে সে দিঘি ভরে গেল টলটলে কাকচক্ষু জলে। তাতে পদ্ম ফুটল। প্রজাদের পানীয়জলের কষ্ট শেষ হলো। আর সে থেকেই এর নাম হয়েছে আলতাদীঘি। প্রায় হাজার বছরের স্মৃতি নিয়ে আজও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী আলতাদীঘি।

এত প্রাচীন আর এমন বিশাল দীঘি বাংলাদেশে আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ দীঘির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, চওড়া প্রায় ৪০০ মিটারের মতো। গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত আছে বৌদ্ধ যুগের কীর্তি এটি। দীঘির পাড় ঘেঁষে ভারত সীমান্ত। উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, বিএসএফের সীমান্ত টইল, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে দেখা খুবই সহজ। আলতাদীঘির পাড়ে দাঁড়ালে মনে হবে অনেকটাই সুন্দরবনের মতো, শীতের সময় অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

;