ব্লাস্ট ফিশিং: বাংলাদেশ-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস
ব্লাস্ট ফিশিং তথা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মৎস্য শিকারের জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উপকূলরেখা বরাবর ২৮৩৩ কিলোমিটার প্রসারিত প্রবাল প্রাচীরের ৭০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অপরিকল্পিতভাবে সম্পদ আহরণের জন্য এ অঞ্চলের প্রবাল প্রাচীরের ৭০ শতাংশ কমেছে।
হাঙর এবং মান্টা রে রক্ষা বিষয়ক মিয়ানমারে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনার বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন, এ অঞ্চলের প্রবাল দ্বীপগুলো বেশিরভাগই অনাবিষ্কৃত। এই বাস্তুতন্ত্রের প্রজাতির বৈচিত্র্য এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এসব প্রবাল প্রাচীরগুলো মূলত শক্ত এবং নরম হয়ে থাকে। উভয়ই বাংলাদেশের কক্সবাজার, মিয়ানমারের রাখাইন এবং থাইল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে- বিশেষত মের্গুই দ্বীপপুঞ্জের আশপাশে পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাল প্রাচীর হ্রাসের মূল কারণ হলো ব্লাস্ট ফিশিং। অবৈধ ছোট জাল বা ফিশিং নেট ব্যবহারের ফলে এসব প্রাচীরের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষয় সাধন হচ্ছে।
তারা আরও বলছেন, ব্লাস্ট ফিশিং অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক এবং অবৈধ। ডায়নামাইট কিংবা অন্যান্য ধরনের বিস্ফোরক সমুদ্রের পানিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শক-তরঙ্গ পাঠানো হয়। এর ফলে সমুদ্রের মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যায় যা পরে সংগ্রহ ও বিক্রি করা হয়। বিস্ফোরকগুলো শৈবাল প্রাচীরের আবাসস্থলকে ধ্বংস করে দেয়। নির্বিচারে সামুদ্রিক প্রাণীকে হত্যা করে তাদের ভবিষ্যৎ শেষ করে ফেলা হচ্ছে, খাদ্য সুরক্ষা এবং মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা প্রভাবিত করে।
এই ব্লাস্ট ফিশিং সাধারণত প্রবাল প্রাচীরের ওপর সংঘটিত করা হয়। এর ফলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় প্রাচীর। ভবিষ্যতের কয়েক দশকের জন্য এখানকার জীববৈচিত্রের পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখানকার শিলাগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে শতাব্দীরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে। বিস্ফোরণের মাধ্যমে মৎস্য শিকার বা ব্লাস্ট ফিশিং বিশ্বজুড়ে ৪০টিরও বেশি দেশে ঘটে। তানজানিয়ার প্রবাল প্রাচীর এ কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্লাস্ট ফিশিংয়ের কারণে দেশটির আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্পকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ইউ জাও লুন বলেন, 'এখনো এ অঞ্চলের প্রবাল প্রাচীরের ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত ও সুন্দর আছে। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ইকো-ট্যুরিজমের জন্য এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।'
২০১৩ সাল থেকে এই অঞ্চলের প্রবাল নিয়ে গবেষণা করেছেন ডুবুরি ইউ জাও লুন। তিনি বলেছেন, 'প্রবাল প্রাচীর, ম্যানগ্রোভ অঞ্চল এবং সমুদ্র ঘাসের অঞ্চলগুলো একটি সুস্থ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন। এগুলো বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রজাতি এবং জীবের বাঁচার জন্য খাদ্য ভাণ্ডার।'
তিনি বলেন, 'কিছু দ্বীপের প্রবালগুলো এখনো ভাল অবস্থানে রয়েছে। তবে মানুষ যে অঞ্চলে অবারিতভাবে চলাচল করে তার নিকটে অবস্থিত বেশিরভাগ প্রবাল প্রাচীর খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অঞ্চলের উপকূলরেখায় রয়েছে ৮০০টিরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মের্গুই দ্বীপপুঞ্জ। যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য মিয়ানমার সরকার প্রস্তাব করার পরিকল্পনা করেছে।'