শতাব্দীতে একটি সুযোগ পায় মিয়ানমার, কিন্তু কাজে লাগে না



খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিগত তিন শতাব্দীতে একটি করে সুযোগ এসেছে মিয়ানমারের জন্য। কিন্তু তা টেকেনি।

মিয়ানমারের ১৯, ২০ এবং ২১ শতাব্দীর ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৮৮৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ বিগত ১৩০ বছর ধরে মিয়ানমার দু’টি অযাচিত রাজনৈতিক প্রবঞ্চণা সহ্য করেছে, এর একটি সাম্রাজ্যবাদ ও অন্যটি কর্তৃত্ববাদ (সামরিক কর্তৃত্ববাদ)।

মিয়ানমারে ২০২০ সালের শেষের দিকে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জাতিগত সংখ্যালঘু অঞ্চল বিশেষত রাখাইন রাজ্যে, নির্বাচন, গণতন্ত্র সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সহিংসতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

১৮৮৫ সালের ২৮ নভেম্বর মিয়ানমারের মান্ডালে অবস্থিত রাজপ্রাসাদ চূড়ান্ত দখল এবং রাজা থিবাওয়াকে পদচ্যুত করা হয়।

১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত মিয়ানমারে উপনিবেশ স্থাপন করল। ১৯ শতকে দেশটির কেউ কল্পনাও করতে পারত না যে তারা ব্রিটিশদের অধীনে বাস করবে।

ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর জেনারেল নে উইন যখন দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখনও মিয়ানমারের কেউ স্বপ্নেও দেখেনি যে তাদের দেশ প্রায় পরবর্তী ৬০ বছর সেনাবাহিনী দ্বারা শাসিত হবে।

ব্রিটিশরা ১৮৮৬ সাল থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত ৬২ বছর সময়কালে মিয়ানমার শাসন করেছিল। স্বাধীনতার পর ১০ বছর গণতন্ত্র ছিল মিয়ানমারে। স্বাধীনতার পরে প্রধানমন্ত্রী ইউ নয়ের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এক দশক টিকেছিল।

১৯৫৮ সাল থেকে শুরু হল সামরিক শাসন। সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল নে উইন যে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন তা ৫৮ বছর টিকেছিল।
এ উভয় রাজনৈতিক শক্তির একই রকম প্রভাব ছিল, তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে মিয়ানমারের জনগণের ক্ষমতা দাবিয়ে রেখেছিল।

১৮৫২ সালে ব্রিটিশরা দেশটি উপনিবেশের জন্য দ্বিতীয় অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধের সময় মিয়ানমারের ইতিহাসের অন্যতম শ্রদ্ধেয় ও জনপ্রিয় রাজা মিনডন দেশটি পুনর্নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার রাজত্বকাল (১৮৫৩-১৮৭৮) আধুনিকীকরণের সময়কালে তার প্রগতিশীল রাজ সদস্য এবং মন্ত্রীদের সহায়তায় রাজা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বব্যাপী উত্থানের কারণে তার দেশ পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।
রাজা মিনডন মিয়ানমারের কংবাং রাজবংশের সংস্কারবাদী শাসক ছিলেন। তিনি যে সংস্কার চেয়েছিলেন, তারই প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৪৮ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর। এতে মিয়ানমার পুনর্নির্মাণের দ্বিতীয় সুযোগটি এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী ইউ নয়ের এক দশকের শাসনামল মিয়ানমারের জন্য স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত। এ সময় এখানে নাগরিকদের স্বাধীনতা ও অধিকার দ্বারা চিহ্নিত এবং এশিয়ার অন্যতম প্রাণবন্ত অর্থনীতি ছিল। তবে এ দ্বিতীয় প্রচেষ্টাটিও গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে জেনারেলদের দ্বারা সামরিক শাসন চাপানো ব্যাহত করা হয়।

২০১১ সালে সামরিক সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবং তাদের উত্তরাধিকারী, ইউ থেইন সেনের নেতৃত্বে মনোনীত একটি বেসামরিক সরকার, ন্যাশনাল লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

যদিও তার সরকার কিছুটা হলেও দেশটিকে উন্মুক্ত করেছিল। তবে এটি কোনও উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক সংস্কার ছিল না এবং এনএলডি ও প্রধান নৃগোষ্ঠীসহ বেশিরভাগ গণতন্ত্রপন্থী দলগুলো বয়কট করেছিল এমন একটি ‘কারসাজির’ নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে তার সরকার গঠিত হয়েছিল।

দেশটি পুনর্নির্মাণের তৃতীয় সুযোগ আসে ২০১৫ সালে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে ভোটে বিজয়ীরা ৫৮ বছরে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সরকার গঠন করতে পেরে দেশটি পুনর্নির্মাণের তৃতীয় সুযোগটি সত্যিই শুরু করে দিয়েছিল।
মিয়ানমারের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক হচ্ছেন সু চি এবং ২০১৫ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) ভূমিধস জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভা এবং তার দলের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন সু চি।

১৯, ২০ এবং ২১ শতক। প্রতি শতাব্দীতে একটি করে সুযোগ এসেছে মিয়ানমারের জন্য। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম ১০ বছরে দেশটি চলমান গৃহযুদ্ধ মোকাবিলা করছে। যদিও এখন আরও বেশি সশস্ত্র দল সক্রিয় রয়েছে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে।

পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কট, দেশটিকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ফলে দেশটি আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে এবং বেসামরিক সরকার ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে এ নিয়ে বিভেদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এসব সমস্যা এ তৃতীয় সুযোগটিকেও ডুবিয়ে দেবে কিনা কেউ জানে না।
যদি মিয়ানমার আবার ব্যর্থ হয়, তাহলে এ শতাব্দীতে নিজেকে পুনর্নির্মাণের আরেকটি সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মিয়ানমারের কেউই এ বিরল সুযোগটি হারাতে চায় না। কেউ চায় না, আবার ৬০ বছরের জন্য সাম্রাজ্যবাদ ও কর্তৃত্ববাদের অধীনে থেকে এ শতাব্দী শেষ করতে।

আপাতত, কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভঙ্গুরতার কারণে এ তৃতীয় সুযোগটি ব্যাহত হবে কিনা, যেমন ১৯ এবং ২০ শতকে হয়েছিল।

দেশের নেতাদের পাশাপাশি মিয়ানমার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষকসহ প্রায় সবাই মিয়ানমারের ইতিহাসে এ সময়কে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা ভুল না। মিয়ানমারের পক্ষে গণতান্ত্রিক রূপান্তর অন্য দেশে যতটা না হয়েছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের তার পুরনো রাজনৈতিক রীতিটি ভেঙে ফেলার সুযোগ রয়েছে। কারণ গণতন্ত্র এলেও এখনও দেশটির কর্তা সেনাবাহিনী। দেশটির পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন এখন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী আরো বেশি ক্ষমতা দাবি করছে।

   

সৌদির বাদশাহ সালমান অসুস্থ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথায় ভুগছেন। বেশি অসুস্থ্যতাবোধ করায় এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

রবিবার (১৮ মে) জেদ্দার আল সালাম প্যালেসের রয়্যাল ক্লিনিকে এই পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি।

সৌদির রয়্যাল কোর্ট জানিয়েছে, জেদ্দার রাজপ্রাসাদের ভেতর অবস্থিত রয়্যাল ক্লিনিকেই বাদশার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তারা বলেছে. “সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে জেদ্দার আসসালাম রাজপ্রাসাদের রয়্যাল ক্লিনিকে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বাদশার অসুস্থতার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা।”

৮৮ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান ২০১৫ সাল থেকে সৌদির সিংহাসনে আসীন। তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হলেও কার্যত তিনিই দেশটি শাসন করছেন। সৌদি বাদশাহর স্বাস্থ্যের খবর খুব কমই প্রকাশ্যে আসে। তবে গত এপ্রিলে রয়্যাল কোর্ট কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতালে তার ভর্তির হওয়ার খবর জানিয়েছিল। এর আগে, শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ২০২২ সালের মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তার কোলোনোস্কপি ও মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।

রয়্যাল কোর্ট আরও জানিয়েছে, চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাদশার অসুখ খুঁজে বের করতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এছাড়া তার শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখা হবে। গত মাসেও একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ।

সেসময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাদশাহ সালমান তার হার্টের পেসমেকারের ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানী রিয়াদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগে ২০২০ সালে গলব্ল্যাডার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করেছিলেন তিনি। সেই সময় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ধরেনের জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।

;

ইয়েমেন উপকূলে তেল ট্যাঙ্কারে হামলা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ইয়েমেন উপকূলে গ্রীকের একটি তেল ট্যাঙ্কার লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে জাহাজটির সামান্য ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড এ কথা জানিয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় সেন্টকম বলেছে, ১৮ মে রাত ১টার (সানা সময়) দিকে ইরান-সমর্থিত হুতিরা লোহিত সাগরে গ্রীক মালিকানাধীন একটি তেল ট্যাঙ্কার লক্ষ্য করে জাহাজ বিধ্বংসী একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জাহাজটি পানামা পতাকাবাহী ছিল।

সেন্টকমের বার্তায় বলা হয়, জাহাজটি সম্প্রতি রাশিয়ায় নোঙর করে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।পরে জাহাজটি ফের যাত্রা শুরু করে।

এরআগে মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে এ হামলার কথা জানিয়ে বলেছিল, ইয়েমেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মোখা নগরী উপকূলে জাহাজটিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

;

নেতানিয়াহুকে গ্যান্টজের হুমকি



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরােয়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধর্মান্ধের পথ ছেড়ে জাতির স্বার্থ রক্ষার কথা বলেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা না থাকলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।

শনিবার (১৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজার জন্য ৮ জুনের মধ্যে ছয়টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনার দাবি করেছেন গ্যান্টজ।

গ্যান্টজের এ ধরনের মন্তব্য ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ও নেতানিয়ানহু সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরেছে। গ্যান্টজ গাজায় ৬ টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৮ জুনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা করার ওপরও জোর দেন । যার মধ্যে আছে গাজায় হামাস শাসনের অবসান এবং অঞ্চলটিতে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, ‘‌নেতানিয়াহু যদি জাতীয় বিষয়কে ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপর স্থান দেন, তাহলে এ সংগ্রামে আমাদের পাশে পাবেন। কিন্তু তিনি যদি ধর্মান্ধের পথ বেছে নেন এবং পুরো জাতিকে অতল গহ্বরে নিয়ে যান, তাহলে আমরা এ সরকার ছাড়তে বাধ্য হব। ’

অবশ্য নেতানিয়াহু তার এই মন্তব্যকে ফালতু কথা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এর অর্ধ ইসরায়েলের পরাজয়।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন গাজায় বেসামরিক ও সামরকি শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসরায়েলের যে কোনো পরিকল্পনা নেই তা যেন নেতানিয়ানহু জনসম্মুখে বলেন।

;

‘একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’ রোধে কানাডায় প্রশাসনিক চাপ 



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় সব মহাসাগরে প্লাস্টিকের পরিমাণের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন দেশে নেওয়া হচ্ছে আইনি বা বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পণ্যের উৎপাদনের পদক্ষেপ।

সম্প্রতি কানাডার পার্লামেন্টে প্লাস্টিক দূষণ রোধের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কনজারভেটিভ দল থেকে আবারও দাবি তোলা হয়। এর আগে ২০২০ সালে প্রথম দাবিটি তোলা হয়েছিল। দেশটির সংবাদমাধ্যম সিবিসির প্রতিবেদনে সে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক হল ডিসপোজেবল প্লাস্টিক যা একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের পানীয়ের বোতল ও বোতলের ক্যাপ, খাবারের মোড়ক, প্লাস্টিকের প্যাকেট, প্লাস্টিকের মোড়ক, স্ট্র, স্টিরার্স, স্টাইরোফোমের কাপ বা প্লেট, এয়ারবাড, প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট-চামচ-গ্লাস-ছুরি, ট্রে, মিষ্টির বাক্স বাঁধার রিবন, থার্মোকল, স্টিয়ারার, সিগারেটের প্যাকেট, আইসক্রিম ও ক্যান্ডি স্টিক ইত্যাদি হল একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক।

সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,  টরন্টো ইউনিভার্সিটি অব আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মরিয়ম ডায়মন্ড বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি  প্লাস্টিক উৎপাদন করেছি যা শেষ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে পরিবেশকে দূষিত করছে এবং এতে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।’

ডায়মন্ড বলেছেন, বৃহত্তর পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্লাস্টিকের এমন অধিক ব্যবহার দেখে  তিনি উদ্বিগ্ন। 

ডায়মন্ড সায়েন্টিস্ট কোয়ালিশন ফর অ্যান ইফেক্টিভ প্লাস্টিক ট্রিটির সদস্য এবং রাসায়নিক দূষণের আন্তর্জাতিক প্যানেলেরও ভাইস-চেয়ার। তার পরামর্শ হল- তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক স্ট্র পরিহার করতে হবে। যাদের  শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারা ছাড়া বাকিদের স্ট্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।  প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করার কোনো দরকার নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কনজারভেটিভ দলের এমপি কোরি টোচর গত মাসে হাউস অফ কমন্সে সি-৩৮০ বিল নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কানাডিয়ান এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্টের অধীনে বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে উৎপাদিত প্লাস্টিক আইটেমগুলোকে তালিকাভুক্ত করে সেসব নিধনের পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি। 

অবশ্য এমন একটি তালিকা এরই মধ্যে করা হয়েছে যার অন্যতম উপাদান এই একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। এই তালিকাটি ছিল ফেডারেল সরকারের একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যা বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপ।

হাউসে টোচরের বিল নিয়ে বিতর্ক হওয়ার পাঁচ দিন পরে, কনজারভেটিভ এমপি ব্র্যান্ডেন লেসলি একটি আট মিনিটের ভিডিও পোস্টে বলেন, পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার বাড়াতে হবে। কেনাকাটা, খাওয়া, সমুদ্রে ভ্রমণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্লাস্টিক এড়িয়ে এর বিকল্প ব্যবহারে ঝুঁকতে হবে।

ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্স এবং পরিবেশগত গবেষণার স্কুলের অধ্যাপক টনি ওয়াকার বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।’ 

উল্লেখ্য, কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী,, ২০১৬ সালে কানাডার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার টন। ২০১৯ সালে সেই প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৪০ টনে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার অংশ হিসেবেই ২০২০ সালে দেশটিতে সি-৩৮০ বিল উত্থাপন করা হয়। সেই ফেডারেল মূল্যায়নে বলা হয়, যেহেতু প্লাস্টিক খুব ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং পরিবেশে স্থায়ী অবস্থান নেয়, তাই প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই থাকবে। প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাতে উদ্বেগ বাড়ছে। এর সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।’

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) অনুসারে, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক ধীরে ধীরে এবং ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে যায় যা মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। এসব প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কারণ এটি অ-বায়োডিগ্রেডেবল এবং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হতে কয়েক বছর সময় নেয়। প্লাস্টিকের ব্যাগগু পঁচতে হাজার হাজার বছর সময় লাগতে পারে, এতে মাটি এবং জল দূষিত হয়। প্লাস্টিক তৈরি করতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো প্রাণীর টিস্যুতে স্থানান্তরিত হয় এবং অবশেষে, মানব খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে।

কোনো প্লাস্টিকই বায়োডিগ্রেডেবল নয়। তবে কোনো প্লাস্টিক ১০০ মাইক্রনের থেকে পাতলা হলে, তার চরিত্র বেশি ভঙ্গুর হয়। অর্থাৎ, অল্পসময়ের মধ্যেই ছোটো ছোটো টুকরোতে ভেঙে যায় এই ধরনের প্লাস্টিক। যা আমাদের কাছে পরিচিত মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে। সাধারণ প্লাস্টিক পণ্যের থেকেও আণুবীক্ষণিক এই প্লাস্টিক কণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এই সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ-সর্বত্রই হদিশ মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। বাস্ততন্ত্রের ক্ষতিসাধন তো বটেই, খাদ্য এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের দেহেও অবাধে প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।

;