খুলনার সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা, দুর্ভোগে যাত্রীরা
খুলনার সড়কে ফিরেছে শৃঙ্খলা। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের পর পরই খুলনা মহানগরীর সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরেছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে খুলনার সড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, সড়কে নেই অতিরিক্ত রিকশার জটলা। নিয়ম মেনে পায়ে চালিত রিকশায় চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। রিকশা চালকরাও যাত্রী ওঠা-নামায় তাড়াহুড়ো করছেন না। চিরচেনা যানজট থেকে প্রায় মুক্ত পুরো খুলনা। নগরবাসী মনে করছে, বদলে যাওয়া এই দৃশ্যপটের মূল কারণ নগরী থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত।
তবে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের আশায় এখনো অনেক ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক তাদের রিকশা থেকে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন অপসারণ করেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সাধারণ চালকরা পায়ে চালিত রিকশার অভাবে রাস্তায় বের হতে পারছেন না।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, খুলনা নগরীর ৩৫০টি অবৈধ রিকশা চার্জিং পয়েন্টে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব পয়েন্টে এতদিন রিকশার ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া হতো। এতে বিপুল অংকের টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
কেসিসির সূত্রে আরো জানা যায়, খুলনা মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা আর চলতে দেওয়া হবে না। ব্যাটারি অপসারণের সময়ও আর বাড়ানো হবে না। তবে প্যাডেলচালিত রিকশা চলাচলে কোনো বাধা নেই।
উল্লেখ্য, গত ২ বছর আগে হঠাৎ করেই খুলনা মহানগরীতে প্যাডেলচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেই স্থান দখল করে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতদিন ধরে কোনো বাধা ছাড়াই এই ব্যাটারিচালিত রিকশা অবাধে নগরীতে চলাচল করেছে। এইসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে প্রায় ঘটাতো ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এছাড়া নগরীর ৩৫০টি অবৈধ রিকশার চার্জিং পয়েন্টে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কারণে সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে কেসিসি ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) নগরী থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের তিন দফা সময় দিয়ে গত ১৫ অক্টোবর থেকে নগরীতে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর থেকে চালকরা নগরীতে ধর্মঘট শুরু করে। হঠাৎ করে চালকরা ধর্মঘট শুরু করায় নগরীর সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। এই সুযোগে ইজিবাইক ও মাহিন্দ্র চালকরা তাদের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের ধর্মঘট সত্ত্বেও গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে নগরীতে প্যাডেলচালিত রিকশা চলাচল কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু তা যাত্রী তুলনায় অনেক কম।
এদিকে, নগরীতে প্যাডেলচালিত রিকশা কম চলাচলের কারণে চালকরা ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে দু-তিন গুণ ভাড়া দাবি করছে। এতে দুর্ভোগ পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ। নগরবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী প্যাডেল চালিত রিকশা সরবরাহের জন্য কেসিসির প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
নগরীর জোড়াগেট মোড়ের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশায় চলাচল করার সময় আমি ৩ বার দুর্ঘটনায় পড়েছি। দ্রুতগতিতে রিকশা চালানো, অপ্রতিরোধ্য গতি ও অদক্ষ চালকের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা হতো। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত খুবই ভালো হয়েছে। ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের ফলে যানজট মুক্ত নগরী চিরচেনা রূপে ফিরেছে। তবে পায়ে চালিত রিকশার পরিমাণ খুব কম হওয়ায় কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
পূর্ব বানিয়া খামারের হারুনুর রশিদ বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে বলেন, আমার এলাকা থেকে সাত রাস্তার মোড়ের ভাড়া ছিলো ১৫ থেকে ২০টাকা, কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের পরে একই দূরত্বে পায়ে চালিত রিকশায় ৩০টাকা ভাড়া হাকানো হচ্ছে। তাছাড়া পায়ে চালিত রিকশার পরিমাণ এত কম, দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
করিম শেখ নামের একজন রিকশা চালক বলেন, প্যাডেলচালিত রিকশা চালানো কিছুটা কষ্টকর হলেও গ্যারেজ থেকে অল্প টাকায় নেওয়া যায়। প্রতিদিন প্যাডেলচালিত রিকশা ভাড়া দিতে হয় ৬০ টাকা। এজন্য একবেলা রিকশা চালালেই দিনের খরচ উঠে যায়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশার ভাড়া দিতে হতো ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ফলে মালিকদের ভাড়ার টাকা মিটিয়ে অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য দীর্ঘ সময় ও অতিদ্রুত তাদের রিকশা চালাতে হতো। যার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতাে।
তিনি আরো বলেন, রিকশার মালিক অতিরিক্ত লাভের আশায় রিকশা থেকে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন খুলছেনা। তারা বিভিন্ন শ্রমিক নেতা ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। গোপনে রিকশায় চার্জও দিচ্ছে।
কেসিসির প্যানেল মেয়র আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, কাউন্সিলররা স্ব স্ব ওয়ার্ডের রিকশা মালিকদের বুঝিয়ে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন খুলে ফেলতে উদ্বুদ্ধ করছেন। পাশাপাশি কেসিসির পক্ষ থেকে অবৈধ চার্জিং পয়েন্টে অভিযান চালানো হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে বলেন, প্যাডেলচালিত রিকশা খুলনার ঐতিহ্য। এই রিকশায় ব্যাটারি সংযোজন করে একে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। দ্রুতগতির এই রিকশা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সড়কে দুর্ঘটনা ও যানজট কমাতে কেসিসি এই রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে রিকশা মালিক ও চালকরা এতে সমর্থন দিয়েছেন। নগরীর সড়ক ঝুঁকিমুক্ত করতে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।