ঢাবি বিতর্ক সংসদের নির্বাচন স্থগিত
গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, ভোটার নিয়োগে অনিয়ম এবং ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদকের অবৈধ হস্তক্ষেপসহ নানা বিতর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের (ডিইউডিএস) নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল।
বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় নির্বাচন স্থগিত রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ডিইউডিএস’র চিফ মডারেটর দেশে ফিরলে তার পরামর্শ ও নিদের্শনা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
নির্বাচন কেন স্থগিত করা হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাওহীদা জাহান জানান, বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে ডিইউডিএসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান স্যার আমাকে ফোন করেন এবং নির্বাচন নিয়ে যেহেতু বেশ কিছু জটিলতা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাই আপাতত অনিবার্য কারণবশত নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে পরামর্শ দেন। চিফ মডারেটরের দেশে ফিরে আসলে তার নির্দেশনা ও পরামর্শ নিতে বলেছেন তিনি।
নিবার্চন কবে নাগাদ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চিফ মডারেটরের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্তের দ্বায়িত্ব পালন করছি। চেষ্টা করেছি তাকে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে ও পরামর্শ নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে। তিনি রাতে দেশে ফিরতে পারেন। তার সাথে আমরা কাল যোগাযোগ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।
এর আগে ভোটার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার বিরুদ্ধে। রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনেরই একাধিক সদস্য এই অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, তিনি নিয়মবহির্ভূত এমন একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, যে প্রক্রিয়াটি বিতর্ক সংসদের গঠনতন্ত্রসম্মত নয়।
অভিযোগ আছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক এবং ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের অনুরোধেই জিনাত হুদা এটি করেছেন।
সূত্রে জানা যায়,আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য বিতর্ক সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে একজন ভোটার নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য হল শাখাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল থেকে একজন করে ভোটার নিয়োগ করা হয়। হলের প্রাধ্যক্ষ বা বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর ভোটার মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এদের ভোটেই নির্বাচিত হন বিতর্ক সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। হল প্রশাসন বরাবর পাঠানো চিঠিতে প্রত্যেক হলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ করা হয়। এর বাইরে অন্য কাউকে মনোনীত করতে হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারা অনুসারে হল বিতর্ক ক্লাবের সবার সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মনোনয়ন দিতে হয়। কিন্তু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম না মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
বিতর্ক সংসদের গঠনতন্ত্রের ২৭নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক হল ডিবেটিং ক্লাব থেকে একজন করে ভোটার ভোট দিতে পারবেন। হল ডিবেটিং ক্লাব ভোটারের নাম চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্দিষ্ট দিনে ডিইউডিএস কার্যালয়ে জমা দিবে। ভোটারের নাম প্রেরণের কাগজে অবশ্যই হল প্রাধ্যক্ষ বা মডারেটরের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ছাত্রত্ব থাকা সাপেক্ষে ভোটারকে স্ব স্ব ডিবেটিং ক্লাব থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।’
রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের বর্তমান কমিটির একাধিক বিতার্কিক অভিযোগ করেন, হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা ক্লাবের কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে ‘সৌমি সপ্তপর্ণা’নামে একজনকে ভোটার হিসেবে মনোনীত করেছেন। তিনি ছাত্রী হল বিতর্ক ক্লাবে অনিয়মিত। এর আগে হল বিতর্ক অঙ্গনের নির্বাচনের সময় তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সভাপতি না হতে পেরে তিনি বিতর্ক অঙ্গনে না আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ভোটার হওয়ার বিষয়টি সামনে এলে সম্প্রতি তিনি আবার নিয়মিত হন।
রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের সাবেক কমিটির কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ‘ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের পরামর্শে হল প্রাধ্যক্ষ এই কাজ করেছেন। শয়ন তার বান্ধবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী ইসরাত জাহান নুর ইভাকে ডিইউডিএসের সভাপতি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এর আগে, রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের নতুন কমিটি দেওয়ার সময় সেখানে তিনি তার অনুগত সৌমি সপ্তপর্ণাকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিতার্কিকদের বাধায় সেটা পারেননি।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক কথা বলতে রাজি হননি।
নির্বাচন স্থগিতের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জন বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। এখন এ তথ্যগুলো শুনে একটা সুরাহা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমি তাদের বলছি, তোমরা কিছুদিন অপেক্ষা করো। তোমাদের চিফ মডারেটর আসুক। তিনি তোমাদের সব কথা শুনে তারপর ব্যবস্থা নেবেন। যাতে কোনো নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটে।