প্রস্তুত ইজতেমার ময়দান: স্বেচ্ছাশ্রমে হচ্ছে সব কাজ

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইজতেমার ময়দানের দৃশ্য, ছবি: বার্তা২৪.কম

ইজতেমার ময়দানের দৃশ্য, ছবি: বার্তা২৪.কম

বিশ্ব ইজতেমার ময়দন থেকে ফিরে: টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে। ওই দিন বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার শুরু হলেও মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকেই অনেককে জামাতবদ্ধভাবে ইজতেমার মাঠে আসতে দেখা দেখা গেছে। তারা মাঠ প্রস্তুতির কাজে অংশ নিয়ে ইজতেমা শেষ করেই তবে বাড়ি ফিরবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম ২ দিনে ইজতেমা। এই দুইদিন ইজতেমা পরিচালনা করবেন আলমি শুরার পক্ষে হাফেজ মাওলানা যোবায়ের।

আর দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারী ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের অনুসারীদের ইজতেমা ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ। এভাবে দুই দিন করে মোট চার দিন অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ইজতেমার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমার মাঠ প্রায় প্রস্তুত। হাজার হাজার তাবলিগি সাথী, সাধারণ মুসল্লি ও কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ইজতেমা ময়দানে চট টাঙানোসহ যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাজ করছেন।

মাঠের পূর্ব পাশে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বালু দিয়ে মাঠ ভরাটের কাজ করছে। প্রতিদিন ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দল বেঁধে ইজতেমা ময়দানে এসে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিত্বে বিশাল প্যান্ডেলের কাজ করছেন।

মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের দক্ষিণ অংশে এখনও চটের ছাউনি দেওয়া বাকি। তবে বাঁশের খুঁটি পুতা হয়ে গেছে। নতুন চটের বান্ডেল মাঠে এসেছে, সেখান থেকে টানানোর জন্য তা নিয়ে যাচ্ছেন মুসল্লিরা।

বিদেশি মুসল্লিদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে টিনের ঘর। বিদেশি মেহমানদের কামরার দক্ষিণ পূর্ব পাশে মূল মঞ্চের কাজ করা হচ্ছে। বানানো হয়েছে নামাজের মঞ্চ। খুঁটিতে লাগানো হয়েছে মুকাব্বিরদের স্থান নির্দেশক কাগজও।

মাঠে জেলা অনুযায়ী বিভিন্ন খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান করবেন। খিত্তা নম্বর দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে প্রস্তুত ছাতা মাইক লাগানো, বিদ্যুতের তার টানানো, গ্যাসের লাইন স্থাপন ও পানির পাইপ টানার কাজও চলছে একইসঙ্গে। অজুর হাউজ ও বাথরুম পরিষ্কার করার পাশাপাশি মাঠের ভেতরে চলাচলের রাস্তার প্রয়োজনীয় মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের ৮ হাজার পাকা টয়লেট ও ১ এক হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে তুরাগ নদীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৮টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।

বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন এবং দ্বীনের মেহনত কায়েমের লক্ষ্যে মুসল্লিরা দলে দলে ভাগ হয়ে ইজতেমার মাঠে কাজ করছেন। তিতাস গ্যাস, ডেসকো, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও সিটি কর্পোরেশন মাঠ প্রস্তুতির কাজে সহায়তা করছে।

বিদেশি মেহমানদের জন্য ময়দানের উত্তর পশ্চিম পাশে তৈরি করা হচ্ছে টিনসেডের আলাদা থাকার জায়গা। মাঠের বাইরে ও মাঠের ভেতরে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার নিরাপত্তা আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে।

তাবলিগের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৩৮টি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব ট্রেন বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। অন্যদিকে বিআরটিসি ৩০০ বিশেষ বাস সার্ভিসের সেবা দেবে।

ইজতেমা ময়দানে ১৭টি প্রবেশপথ আছে। এসব গেটে আর্চওয়ে থাকবে। ১৫টির বেশি ওয়াচ টাওয়ার বানানো হয়েছে। ময়দানের ওপর হেলিকপ্টারের টহল থাকবে। তাৎক্ষনিক বিচার, নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ খাবার এবং আনুষঙ্গিক বিষয় সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩০টি মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠের আশেপাশে কাজ করবে।

ইজতেমা দুই গ্রুপের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকেই স্ব স্ব অংশের শেষের দিকে একটি করে মোনাজাত করবে।