জাকাত আদায়ের জন্য যা জানা জরুরি



মুফতি এহতেশামুল হক কাসিমী, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি, ছবি: সংগৃহীত

জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায়। কোরআনে কারিমের সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘জাকাত পাবে ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী, যাদের ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করা দরকার, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত, নিঃস্ব পথিক। আল্লাহর পথে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজেও এ অর্থ খরচ করা যাবে।’

ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক জাকাত প্রদান ফরজ যা বাধ্যতামূলক এবং অবশ্য পালনীয়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজের কোনো স্থানে যেন ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত না হয়ে ওঠে। যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত যথেষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েছে তারা যেনো তা জমা না করে রাখে, ব্যয় করা বন্ধ না করে দেয়। বরং তা এমনভাবে ব্যয় করে যার ফলে সমাজের আবর্তিত সম্পদ থেকে যেন বঞ্চিতরা জীবিকা অর্জন করতে পারে। এ লক্ষ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ লোকদের কাছ থেকে নেওয়াই হচ্ছে জাকাত।

জাকাত কোনো প্রকার কর বা শুল্ক নয়। কর রাষ্ট্রের সাধারণ ব্যয় নির্বাহের জন্য আরোপ করা হয়। কাজেই জাকাতকে কর বলা যায় না। এটাকে বড়জোড় বাধ্যতামূলক সামাজিক কর হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে এবং এই কর প্রযোজ্য হবে উদ্ধৃত্ত বিবেচিত সম্পদের ওপর। একজন ব্যক্তি তার হালাল আয় ও সম্পদ হতে সামাজিক জীবনযাত্রার মান রক্ষার জন্য ন্যায্য চাহিদা মেটানোর পর তার উদ্বৃত্ত সম্পদের ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে।

কারা জাকাত দেবেন
প্রত্যেক মুসলিম যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাকে জাকাত দিতে হবে। নেসাব হচ্ছে ওই সঞ্চিত সম্পদ, যা মানসিকভাবে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের নিজের মালিকানায় পূর্ণ এক চন্দ্র বছর ছিলো- তাহলে তাকে জাকাত দিতে হবে। অবশ্য ক্ষেতের ফসল, খনিজ সম্পদ, সমুদ্র থেকে পাওয়া সম্পদ ও মাছের ক্ষেত্রে সারা বছর এ সম্পদ হাতে থাকার শর্ত নেই। ফসল আহরণের পরপরই এসবের জাকাত দিতে হয়।

জাকাতের বছর কিভাবে হিসাব করবেন
এ বিষয়ে ইসলামি স্কলারদের মতামত হচ্ছে, শুধু বছরের দিনের হিসাবটা ধরতে হবে। অর্থাৎ যদি কারও জাকাত দেওয়ার বছর হয় ১ রমজান থেকে শাবানের শেষ দিন, তাহলে বছরের শেষের দিনের সম্পদের হিসাব করতে হবে এবং সেদিন নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে।

অবশ্য অন্য অনেক ইসলামি স্কলারদের অভিমত হচ্ছে, জাকাত নির্ধারণ করতে হবে বছরের শুরু ও শেষের দিনের হিসাব ধরে। অর্থাৎ ওপরে উল্লেখিত বছরে যদি কারও ১ রমজান ও শাবানের শেষ দিন নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে শাবানের শেষের দিনের সম্পদের হিসাবের ভিত্তিতে জাকাত দিতে হবে।

জাকাতের তাগাদা দেওয়া হয়েছে কোরআন-হাদিসে
জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। যেকোনো মুসলিম পুরুষ অথবা নারী যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন এবং সম্পদের ওপর বছর অতিক্রান্ত হয়, তবে ওই ব্যক্তির ওপর এই সম্পদের জাকাত আদায় করা ফরয। জাকাত ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ তা আদায় না করে, তবে সে কঠোর শাস্তির যোগ্য হবেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করার ফলে ইহকালীন ও পরকালীন বিভিন্ন শাস্তির কথা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত রয়েছে।

যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করে না সে একজন মহাপাপী, ফাসিক ও ফাজির। আর কেউ যদি জাকাতকে অস্বীকার করে এবং মনে করে বা বলে যে, জাকাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই; কে বলে জাকাত ফরয? এতে কোনো ফায়দা নেই অথবা যে বলে, জাকাত ফরজ করে আমাদের উপার্জিত ধনদৌলত কেড়ে নেওয়ার একটা কৌশল করা হয়েছে ইত্যাদি। মোটকথা যেসব কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, জাকাত ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করে কিংবা এর ওপর খুব অসন্তুষ্ট ভাব বুঝায়, তবে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।

যে সব সম্পদের জাকাত দিতে হবে
জাকাত নির্ণয়ের প্রক্রিয়া
১. নগদ বা ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ, শেয়ার সার্টিফিকেট, বন্ড বা ওই শ্রেণির ঋণপত্র (আপাতত মূল্য Face value জাকাত বছরের মধ্যে প্রাপ্ত জীবন বীমার অর্থ (পরিপক্কতা Maturity বা জীবিতকালীন সুবিধা Servival benefit বা স্বত্বত্যাগ Surrender করার কারণে), জাকাত বছরের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি Final settlment বা অফেরতযোগ্য উত্তোলনের non-refundable withdrawal), কারণে প্রাপ্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ ৫২.৫ তোলা রৌপ্যের মূল্য ২.৫%
২. স্বর্ণ, রৌপ্য, মূল্যবান পাথর, স্বর্ণ বা রৌপ্যের অলংকার স্বর্ণের ক্ষেত্রে ৭.৫ তোলা, রৌপ্যের ক্ষেত্রে ৫২.৫ তোলা এবং স্বর্ণ-রৌপ্য একত্রে থাকলে ৫২.৫ তোলা রৌপ্যের মূল্য বাজার দামের (Market Value) ২.৫ %
৩. শিল্প বা ব্যবসা-বানিজ্যের মজুদ (তৈরি পণ্য, আধা তৈরি পণ্য ও কাঁচামাল) ৫২.৫ তোলা রৌপ্যের মূল্য লিখিত মূল্য (Book Value) বা বাজার মূল্যের (Market Value) ২.৫%

যার ওপর জাকাত ফরজ
প্রতিটি সম্পদশালী মুসলিম, বালেগ, সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন নর-নারীর ওপর জাকাত ফরজ

নেসাব
নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর জাকাত ফরজ। কোন জিনিসের নেসাব কি? তা উত্তমরূপে জেনে রাখা সবার জন্য একান্ত প্রয়োজন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ-
শুধু স্বর্ণের নেসাব: সাড়ে সাত ভরি (তোলা)।
শুধু রৌপ্যের নেসাব: সাড়ে বায়ান্ন ভরি (তোলা)।
স্বর্ণ-রূপার একত্রে নেসাব: স্বর্ণ ও রূপা উভয় জিনিসই যদি কারও নিকট থাকে এবং এর কোনোটাই নেসাব পরিমাণ নাও হয়; তবে উভয়টির মূল্য হিসাব করে দেখতে হবে। মূল্য যদি একত্রে রূপার নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, অর্থাৎ ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান হয়ে যায়, তবেই জাকাত আদায় করতে হবে।

নগদ টাকা পয়সার নেসাব
বাজার দর হিসাবে অন্তত ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের পরিমাণ টাকা এক বছরকাল জমা থাকলে এর জাকাত আদায় করতে হবে।

ব্যবসায়ী পণ্যের নেসাব
কোনো জিনিস বিক্রি করার উদ্দেশ্যে রাখা হলেই তাকে ব্যবসার পণ্য মনে করা হবে। ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান মূল্যমান সম্পন্ন ব্যবসার পণ্যের জাকাত দিতে হবে। বছরান্তে তখনকার বাজারদর হিসেবে মূল্য ধরতে হবে। খরিদ মূল্য ধরলে চলবে না।

জাকাত আদায় ফরয হওয়ার একটি মৌলিক শর্ত
স্বর্ণ, রূপা, টাকা-পয়সা বা ব্যবসার পণ্য নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর তৎক্ষনাৎ জাকাত আদায় করা ফরয হয় না; বরং এক বছরকাল নিজের মালিকানাধীন থাকলেই জাকাত আদায় করা ফরয হয়। অতএব নেসাব পরিমাণ হওয়ার সাথে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

বছরের শুরুতে যদি নেসাব পরিমাণ মাল বা টাকা-পয়সা থাকে আর বছরের মধ্যবর্তী সময় নেসাবের চেয়ে কম হয়, আবার বছরের শেষাংশে নেসাবের পরিমাণ হয়ে যায় অথবা বছরের মধ্যবর্তী সময় আরও বৃদ্ধি পায় উভয় অবস্থাতেই বছরান্তে যে পরিমাণ মাল বা টাকা থাকবে তার জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, বছরের শেষে কি পরিমাণ থাকে তাই ধর্তব্য। মধ্য বছরের হ্রাস-বৃদ্ধি ধর্তব্য নয়।

জাকাতের পরিমাণ
সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ জাকাত আদায় করতে হয়। জাকাত ফরজ হওয়া মালের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা জাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। সামান্য কম হলেও জাকাত আদায় হবে না।

বিশেষ কথা
১. অনেক লোককে দেখা যায়, নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ না থাকার কারণে জাকাত দেওয়ার বিষয়ে চুপ থাকেন। কিন্তু তার কাছে সামান্য রূপা রয়েছে, যার ফলে স্বর্ণ ও রূপার সমষ্টিগত মূল্য রূপার নিসাবের পরিমাণ হয়ে জাকাত ফরজ হয়ে রয়েছে- এদিকে খেয়ালই করছেন না। কাজেই বিষয়টির প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছি। স্বর্ণ ও রূপা একত্রে রাখবেন না, যদি রাখেন তবে জাকাতের ব্যাপারে সজাগ থাকবেন।

২. স্বর্ণ-রূপা, তা যে অবস্থাতেই থাকুক অর্থাৎ টুকরা আকারে অর্থবা অলংকার, বাসনপত্র, ঘড়ি, কলম, চশমার ফ্রেম, কাপড়ের আঁচলে জড়ানো আকারে এবং তা ব্যবহারে আসুক বা না আসুক সর্বাবস্থায় জাকাত আদায় করতে হবে।

৩. অনেকে মনে করেন, নিত্য ব্যবহার্য অলংকারের জাকাত দিতে হবে না, কেবল তুলে রাখা অলংকারের জাকাত দিতে হবে। এ ধারণা সম্পুর্ণ ভুল। এরূপ যারা করেছেন তাদেরকে বিগত বছরগুলোর অনাদায়ী জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে। অন্যথায় গোনাহগার হতে হবে।

ভাড়ায় প্রদত্ত জিনিস
ভাড়ায় খাটানো ঘর- বাড়ি, দোকান-গাড়ি, যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি বা অন্যকোনো জিনিসের ক্ষেত্রে বিধান হলো- মূল জিসিনটির জাকাত দিতে হবে না; বরং ভাড়ায় উপার্জিত টাকা বা মেশিন থেকে উৎপাদিত বস্তুর মূল্য নেসাব পরিমাণ হলে তবে বছরান্তে জাকাত আদায় করতে হবে।

কর্জ প্রদত্ত টাকা
কাউকে টাকা কর্জ দিয়ে রাখলে সে টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তার জাকাত দিতে হবে না। যখনই ফিরে পাওয়া যাবে, তখন বিগত বছরগুলোর জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে, অন্যথায় নয়।

প্রভিডেন্ট ফান্ড
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা যাখন হাতে আসবে, তখন থেকে বছরান্তে জাকাত দিতে হবে। হাতে আসার পূর্ববর্তী বছরসমূহের জাকাত আদায় করা জরুরি নয়।

বিগত বেতন
চাকরির বেতন, যা কয়েক বছর যাবৎ বাকি রয়ে গিয়েছিল, তা উসূল হওয়ার পূর্ববর্তী বছরসমূহের জাকাত আদায় করা ফরজ হবে না।

বিমা কোম্পানিতে জমাকৃত টাকা
প্রিমিয়াম হিসেবে যে টাকা বিমা কোম্পানিতে জমা করা হয়েছে, প্রতি বছর হিসাব করে তার জাকাত দিতে হবে। ব্যাংকে জমাকৃত টাকারও অনুরূপ জাকাত দিতে হবে।

শরিকানা কারবার
শরিকানা কারবারে লাগানো টাকার জাকাত দিতে হবে। শরিকের অন্যরা যদি জাকাত নাও আদায় করে তবুও নিজের অংশের জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে।

জরুরি পরামর্শ
প্রত্যেক সম্পদশালী লোকের কর্তব্য হলো- চান্দ্রমাস হিসেবে কোনো একটা মাসকে বছরের শুরু বলে ধার্য করে নেওয়া এবং এই শুরু থেকে বার মাস অতিক্রান্ত হওয়ার হিসাব রেখে নিজের জাকাত দেওয়ার উপযোগী মালের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে জাকাত আদায় করা। এ কাজের সুবিধার জন্য প্রতি রমজান মাসকে বছর শুরু ধার্য করাই উত্তম। রমজান মাস থেকে পরবর্তী শাবান মাসে এক বছর পূর্ণ হবে। এতে জাকাত আদায় করার কাজটা পবিত্র মাহে রমজানে সমাধা করা যায়। ফলে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়ার সুযোগ হয়।

একটি ভুল ধারণার অপনোদন
অনেকেই মনে করেন, প্রয়োজনাতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন টাকা হাতে থাকলেই জাকাত বা ফিতরা দিতে হবে; তা ঠিক নয়। আসল কথা হলো- সাড়ে বায়ান্ন (ভরি) রূপা বর্তমান বাজার দর অনুসারে মূল্যের সমান টাকা হাতে থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান বাজারে রূপার দর হলো ২০০ টাকা ভরি। এ হিসেবে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্য ১০,৫০০ টাকা। অতএব, অন্ততপক্ষে এই পরিমাণ টাকা অথবা এই মূল্যের প্রয়োজনাতিরিক্ত কোনো সম্পদ হাতে থাকলে নেসাবের মালিক বলে ধরা হবে, অন্যথায় নয়।

জাকাত আদায়ে অবহেলা নয়
আমাদের দেশে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের অনেকে মনোযোগসহকারে যথাযথভাবে হিসাব করে জাকাত আদায় করেন না। সাধারণত দেখা যায়, রমজানের ২৭ তারিখে বেশ কিছু টাকা অথবা শাড়ি-কাপড় গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন, কিন্তু মালের পরিমাণের সঙ্গে মিলিয়ে জাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করেন না। এতে কিন্তু জাকাত আদায় হয় না। অতএব একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আদায় করার মনোভাব নিয়ে যথাযথ হিসাব নিকাশ করে সঠিক পরিমাণ জাকাত সহিশুদ্ধ নিয়তে আদায় করার প্রতি বিশেষ তৎপর হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া দারুল কোরআন, উত্তর দেওয়ানপুর, মেজরটিলা, সিলেট।

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;