জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ইবাদতসমূহ

  • মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সারাবছর বিভিন্ন নফল ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বছরের বিশেষ কিছু সময় নফল ইবাদতের জন্য বাড়তি গুরুত্ব ও মর্যাদা রাখে। তেমনি একটি সময় হলো- জিলহজ মাসের প্রথম দশক।

সাহাবি আব্দু্ল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্য কোনো দিনের নেক আমল আল্লাহতায়ালার কাছে এ দশ দিনের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় নয়। -তিরিমিজি: ৭৫৭

বিজ্ঞাপন

বর্ণিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যারা নফল ইবাদতে অভ্যস্থ তাদের উচিৎ জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে নফল ইবাদত আগের চেয়ে আরও বেশি করে আদায় করা। আরা যাদের নফল ইবাদতের তেমন অভ্যাস নেই, তাদের উচিৎ এ দশকের প্রতিটি দিবসে ও রজনীতে কিছু পরিমাণে হলেও বিভিন্ন নফল ইবাদত করা।

নফল নামাজ, নফল রোজা তো আছেই। এ ছাড়া বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করা, বিভিন্ন তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-অজিফা করা এবং সাধ্যমতো দান-খয়রাত করা।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন হাদিসে এ দশকের আমল হিসেবে দু’টি আমলকে নির্দিষ্টভাবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যথা- রাতে নামাজ আদায় করা আর দিনে রোজা রাখা।

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ইবাদত, আল্লাহতায়ার কাছে অন্য যে কোনো দিনের ইবাদতের চেয়ে বেশি পছন্দনীয়। এ দশকের প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং প্রতিটি রাতের নামাজ শবে কদরের নামাজতুল্য। -তিরমিযি:৭৫৮

যদিও তিরমিজির ৭৫৮ নম্বর হাদিসটি সনদের মানে দূর্বল (যয়িফ) তবুও হাদিসের বক্তব্যের ওপর নির্দ্বিধায় আমল করা যাবে। কেননা, এ দশ দিনের নফল ইবাদার বিশেষ গুরুত্ব বিভিন্ন সহিহ ও জয়িফ হাদিস দ্বারা সমর্থিত। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে এর জনৈকা স্ত্রী বলেছেন, নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই জিলহজের প্রথম নয় দিন নিয়মিত রোজা রাখতেন। -আবু দাউদ (সহিহ): ২৪৩৯

প্রথম নয় দিনের রোজার মধ্যে আবার নবম দিনের রোজা সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ। সাহাবি আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, আরাফা দিবসের রোজা তার পূর্বের বছরের সগীরা গুনাহগুলো মার্জনা করবে এবং পরের বছরের সগীরা গুনাহগুলোও মার্জনা করবে। -মুসলিম: ২৮০৩

আরাফা দিবস ইসলামের একটি পরিভাষা, দিবসের একটি নাম। জিলহজ মাসের ৯ তারিখের নাম আরাফা দিবস। যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখন্ডে চাঁদের উদয়স্থলের ও উদয়কালের পার্থক্য রয়েছে, সেহেতু আরাফা দিবস স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হবে। প্রত্যেক অঞ্চলের আরাফা দিবস গণ্য হবে সে অঞ্চলের চাঁদের স্থানীয় গণনা অনুযায়ী ৯ তারিখ। নচেৎ আরাফা ময়দানে হাজিদের অবস্থানের দিনকেই যদি সারা পৃথিবীর জন্য আরাফা দিবস ধরা হয়, তাহলে আরাফা ময়দানে হাজিদের অবস্থান সময়ে পৃথিবীর যে সকল স্থানে রাত হবে সে সকল স্থানের মানুষ আরাফা দিবসের রোজা কিভাবে রাখবে?

এ দশকের আরেকটি বিশেষ আমল আছে। তা হলো, যারা কোরবানি করবে তারা জিলহজের চাঁদ উঠার পর থেকে পশু কোরবানি করার পূর্বপর্যন্ত হাত-পায়ের নখ ও শরীরের কোনো পশম, গোঁফ ইত্যাদি কাটবে না। -মুসলিম: ৫২৩৬

এটি একটি মুস্তাহাব মাত্র। করলে সওয়াব আছে। না করলে গুনাহ হবে না। তাই এ আমল করাটাই শ্রেয়। আবার বিশেষ সমস্যা হলে তা না করারও অবকাশ আছে। কারও গুপ্ত পশম কাটার সময় যদি চল্লিশ দিন অতিক্রম করে থাকলে, তার জন্য এ আমল করা জায়েজ নয়। বরং তার জন্য পশম কেটে শরীর পরিষ্কার করাটাই জরুরি।