ফরাসি বিপ্লব নাকি বেলজিয়াম রুপকথা?
শিরোনামই যেন সব কথা বলে দিচ্ছে? মঙ্গলবার (১০ জুলাই) রাতে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে কি দেখা যাবে? ফরাসি বিপ্লব নাকি বেলজিয়ামের রূপকথার যাত্রা? এর উত্তর অবশ্য সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে রাশিয়া বিশ্বকাপের এই সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখতে হয়। বেলজিয়াম সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত খেললেও বিশ্বকাপে কখনোই ফরাসিদের সঙ্গে পেরে উঠেনি তারা। তবে টানা ২৪ ম্যাচ অপরাজিত থেকে সত্যিকার অর্থেই রূপকথা জন্ম দিয়েছে তারা!
ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের অল-ইউরোপিয়ান এই দ্বৈরথ শুরু হয়েছে সেই চল্লিশের দশকে৷ বিশ্বকাপের ১৯৩৮ সালে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে বেলজিয়ামকে ৩-১ হারিয়েছিল ফ্রান্স। সেই শুরু। এরপর বারবারই বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে ফরাসিরা।
অবশ্য সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এই দুই দল দুইবার মুখোমুখি হয়েছে। দুইবারই জিতেছে ফ্রান্স। একইসঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দল দুটি চারবার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে দুইবার ফ্রান্স আর বেলজিয়াম জিতেছে একবার।
তবে সব মিলিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে বেলজিয়ানরাই। ৭৩ ম্যাচে তারা ৩০ ও ফ্রান্স জিতেছে ২৪টি ম্যাচে । একইসঙ্গে এই ম্যাচ খেলার আগে ফিফা র্যাংকিং থেকেও অনুপ্রেরণা পাচ্ছে বেলজিয়াম। তারা আছে তিন নম্বরে আর ফ্রান্স সাতে।
কিন্তু বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে অভিজ্ঞতায় ফরাসিরাই এগিয়ে। অনেক আগে থেকেই সৌরভ ছড়িয়ে যাচ্ছে তারা। এরমধ্যে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপও উঠেছে তাদের হাতে। এনিয়ে দলটি ষষ্ঠবারের মতো খেলতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। অন্যদিকে বেলজিয়ামের এটি দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ১৯৮৬ সালে প্রথমবার শেষ চারে উঠেছিল ইউরোপের এই দলটি।
ইতিহাস জানাচ্ছে-ফ্রান্স বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিতে খেলেছিল সেই ১৯৫৮ সালে। সুইডেনের স্টকহোমের ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচটাতে ২-৫ গোলে হেরে যায় তারা। সেই ম্যাচেই কৈশোর ছাড়িয়ে উঠা পেলে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। সেই বিশ্বকাপেই ফ্রান্সের জাস্ট ফঁতেই করেন রেকর্ড ১৩ গোল।
তারপর ১৯৮২'র বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে হেরে যায় মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্স। সেই ধাক্কা মুখে ১৯৮৬ সালেও সেমিফাইনালে ওঠেছিল ফরাসিরা। আবারও সেই জার্মানির কাছে হার। এবার ২-০ গোলে। তবে ১৯৯৮ এর বিশ্বকারের সেমিফাইনালে ২-১ গোলে তারা হারায় ক্রোয়েশিয়াকে। এরপর ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপাও জিতে নেয় দলটি।
২০০৬ সালে পঞ্চমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠে আসে ফ্রান্স। জিনেদিন জিদানের হাত ধরে ফরাসি বিপ্লবটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠলেও ইতালির সঙ্গে পেরে উঠা হয়নি।
উল্টোদিকে এর আগে একবারই সেমি ফাইনালে উঠেছিল ইউরোপের রেড ডেভিলস বলে পরিচিত বেলজিয়াম। সেটা ১৯৮৬ সালে। কিন্তু ডিয়েগো ম্যারাডোনার ম্যাজিকে সঙ্গে পেরে উঠা হয়নি। ওই কিংবদন্তির জোড়া গোলে জিতে আর্জেন্টিনা। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্সেরকাছে অতিরিক্ত সময়ে ৪-২ গোলে হারে!
এবার সেই হারের প্রতিশোধটা নিতে পারলে লেখা হয়ে যাবে আরেকটি রূপকথা! ফরাসি বিপ্লব থামিয়ে দিতে পারবে তো বেলজিয়ামের এই সোনালী প্রজন্ম?