আশরাফুলের চোখে বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন
১৩। সংখ্যাটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে পরমুহূর্তে কোন শব্দের দেখা মিলে?
জ্বি, ঠিক ধরেছেন।
আনলাকি! আনলাকি থার্টিনের সঙ্গে যে তেমন কেউ যেতে চান না।
তবে এই ধারণার সঙ্গে এই মূহূর্তে মোটেও একমত নন মোহাম্মদ আশরাফুল। ঠিক যাকে বলে অধীর অপেক্ষায় চেয়ে থাকা- তেমনই এক দৃষ্টি নিয়ে এবারের ১৩ আগস্টের জন্য দিন গুণছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের একসময়ের ওয়ান্ডার বয় মোহাম্মদ আশরাফুল। পেছনের পাঁচ বছর ধরে চলছে আশরাফুলের এই অপেক্ষা প্রহর। এদিনই যে তার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফেরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে! সেই সঙ্গে ঘরোয়া টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিপিএলে খেলার জন্যও যোগ্যতা ফিরে পাবেন।
আশরাফুল এখন ইংল্যান্ডে। দেশে ফিরবেন ১৬ অগাস্ট। ইংল্যান্ডে বেড়াতে নয়, ক্রিকেট চর্চা ঝালিয়ে নিতেই গেছেন এবার। লন্ডনের কিয়া ওভালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সাবেক কোচ শহিদুল আলম রতনের তত্ত্বাবধায়নে লম্বা সময় ধরে নিজের ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। শহিদুল আলম রতন এখন লন্ডন প্রবাসী। সেখানে ক্রিকেট নিয়েই দিন কাটে তার। আশরাফুলের শেখার ক্ষিদে এবং তার দৃঢ়তায় রতনও মুগ্ধ।
লন্ডন থেকে শনিবার দুপুরে বার্তা২৪ এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ আশরাফুল জানান- ‘এদিনটির (১৩ অগাস্ট ২০১৮) জন্যই আসলে পেছনের পাঁচটা বছর অপেক্ষা করছি। অপেক্ষায় ছিলাম যে কবে আমার সব নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। যদিও আমি পেছনের দুই বছর ধরে প্রথম শ্রেনীর এবং লিস্ট ‘এ’র ম্যাচ খেলেছি বাংলাদেশে। আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ও বিপিএলের খেলায় ফিরে আসার নিষেধাজ্ঞাটা আমার উঠে যাচ্ছে এই বছরের ১৩ আগস্ট। এই তারিখটা শেষ হলেই আমি আবার বাংলাদেশ দলের হয়ে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ এবং বিপিএলে খেলার জন্য যোগ্যতা ফিরে পাবো।’
আশরাফুলের বয়স এখন ৩৪। ভালই জানেন এই বয়সে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসতে হলে ফিটনেস এবং পারফরমেন্স দুটোই আবশ্যিক শর্ত। সেই শর্ত পুরুণের জন্যও জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে কমবয়সী সেঞ্চুরিয়ান। বললেন-‘গত দুটো বছরে নিজের ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছি। বিশেষ করে পেছনের দুই মাসে আমি এই ফিটনেসের তাগিদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। এই সময়ে আমি আট/নয় কেজির মতো ওজন কমিয়েছি। ফিটনেস এখন আমার আগের থেকে অনেক ভাল। বাংলাদেশ দলের হয়ে আবার খেলবো এই স্বপ্ন আমি কখনো দেখা বন্ধ করিনি। আশায় আছি এই মৌসুমে প্রথম শ্রেনী এবং ঘরোয়া লিগে যে ক্রিকেট হবে সেখানে আমার পারফরমেন্স আরো ভাল হবে। গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আমার পারফরমেন্স ভাল হয়েছিল।’
বিপিএলে ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে পড়ে আশরাফুল পাঁচ বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। শাস্তির সেই কঠিন সময়টাও আশরাফুল দেখেছেন কাঁধের ওপর অনেকের সহমর্মিতার পরশ। সেই কঠিন সময়ে যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেনি তিনি- ‘আমি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে। আমাকে সবাই খুব সহায়তা করেছেন। বোর্ড সভাপতি থেকে নির্বাচকরা সবাই আমাকে সহায়তা করেছেন পেছনের এই পাঁচটা বছর। দেশে এবং দেশের বাইরে সর্বত্রই আমার ভক্ত-সমর্থকরাও আমাকে অকুণ্ঠ হৃদয়ে সমর্থন দিয়ে এসেছে। আমি তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। প্রায় সময় তাদের প্রশ্ন ছিল-আমি কবে আবার দেশের হয়ে খেলবো ? কবে ফিরবো? আমি তাদের জন্য হলেও আবার বাংলাদেশ দলে খেলবো ইনশাল্লাহ্।
-সেই ফেরার সম্ভাব্যতা কবে? সম্ভাবনাই বা কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দৃঢ়তা নিয়েই আশরাফুল বললেন- ‘সামনের বছর বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলবে। ইংল্যান্ডে হবে সেই বিশ্বকাপ। আমি স্বপ্ন দেখছি এখন সেই বিশ্বকাপে খেলার। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাবার জন্য যা যা প্রয়োজনীয়, যেমন ফিটনেস ঠিক রাখা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভাল পারফর্ম করা। বিপিএলে ভাল সাফল্য দেখানো। জাতীয় লিগ, বিসিএল- যে পর্যায়ের ক্রিকেটেই খেলি না কেন, চাইবো যাতে আমি ভাল পারফরমেন্স করতে পারি। তাহলেই হয়তো বা বাংলাদেশ দলে আমাকে নির্বাচন করাটা সহজ হবে। আমার স্বপ্ন যেন পুরণ হয় সেজন্য আমি সবার কাছ থেকে দোয়া কামনা করছি।’