তিন লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক দুইজন!
নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘলাইন দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। প্রায় তিন লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক রয়েছে মাত্র দুইজন। আর এ কারণে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। তবে ৫০ শয্যার চিকিৎসক ও জনবল এখানো অনুমোদন হয়নি। শুধুমাত্র রোগীদের খাবার বরাদ্দ হয়েছে ৫০ জনের জন্য। অন্য সব কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যার ঘাটতি চিকিৎসক ও জনবল দিয়েই। ৩১ শয্যার হাসপাতালে নয়জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এখানে আছেন মাত্র দুজন। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় সেবা পেতে বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চেলের রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যায় চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলো এখনো শূন্য। শূন্য রয়েছে আরএমও পদও। শুধু কর্মরত আছেন ডেন্টাল সার্জন এবং দুজন মেডিকেল অফিসার। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার জামাল হোসেন গত ৮ জুলাই এ হাসপাতালে যোগদান করে তখন থেকেই ছুটিতে আছেন।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ রোগী হয়। ভর্তি থাকেন ৭০-৭৫ জন রোগী। এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে সাত কোটি ১৭ লাখ ৩৪১ টাকা ব্যয়ে নতুন তিনতলা ভবন ও কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ভবন হস্তান্তর করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নিচতলায় রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য ৮টি কক্ষ এবং ইপিআই ও ফার্মেসি কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার, একটি পোস্ট অপারেটিভ কক্ষ ও দুটি নরমাল ডেলিভারি কক্ষ। তিনতলায় রয়েছে রোগীদের জন্য ১৪ শয্যার একটি ওয়ার্ড, পাঁচটি কেবিন, একটি মিলনায়তন ও একটি মেডিসিন স্টোর। ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী এখানে নয়জন বিশেষজ্ঞসহ ২১ জন চিকিৎসক নিয়োগ করার কথা। চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হয়নি। অকেজো হয়ে পড়ে আছে ওই ভবন এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ। রোগীরা পাচ্ছে না তার প্রয়োজনীয় সুবিধা।
এ হাসপাতালে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে একটি অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন আসে। তবে সেটি এখনো চালু হয়নি। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্রায় চার বছর ধরে পড়ে আছে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন। চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ রয়েছে অপারেশন কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবসহ রয়েছে খাবার পানির সমস্যা।
চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ায় বহির্বিভাগ, ভর্তি ও রোগ নির্ণয়ে ফি দিতে হচ্ছে রোগীদের, অথচ ৫০ শয্যার কোনো সুবিধা এখানে নেই।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী রহিমা বেগম বলেন, `সকাল ৯টায় এসেছি, দুপুর ১২টা বাজলেও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। এখন চলে যাচ্ছি।
সোহরাব হোসেন, রহমান বেগ, কৃষ্ণ বিশ্বাসসহ আরও অনেকে জানান, হাসপাতালে রোগীরা আসে চিকিৎসা নিতে। অথচ এখানে আসলে রোগীর সুস্থ হওয়াতো দূরের কথা, উল্টা আরও খারাপ অবস্থা হয়।
বহির্বিভাগে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক ফাতিমা মাহজাবীন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় খুব চাপ পড়ে। সামাল দেওয়া কঠিন হয়। ছুটিও নিতে পারি না।’
লোহাগড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি বি এম কামাল হোসেন জানান, উপজেলায় প্রায় তিন লাখ জনসংখ্যার চিকিৎসার ভরসা এই হাসপাতালটি। অথচ প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানান, ৫০ শয্যার জনবলের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম জনবল নিয়ে চলছে এ হাসপাতালটি।