নিষেধাজ্ঞা, মেঘনায় যায়নি অর্ধলক্ষাধিক জেলে

  • হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনায় যায়নি অর্ধলক্ষাধিক জেলে। ছবি: বার্তা২৪.কম

মেঘনায় যায়নি অর্ধলক্ষাধিক জেলে। ছবি: বার্তা২৪.কম

বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী একটি পরিপক্ক ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। আশ্বিন মাসের বড় পূর্ণিমার আগের চার দিন, পূর্ণিমার দিন ও পরের ১৭ দিনসহ ২২ দিন ইলিশের প্রজননের মৌসুম। আর এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ এসে মেঘনায় ডিম ছাড়ে। যার কারণে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনায় সকল মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শনিবার (৬ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে মেঘনায় যায়নি লক্ষ্মীপুরের অর্ধলক্ষাধিক জেলে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মেঘনা এলাকায় মাছ ধরার কোনো নৌকা দেখা যায়নি। মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সর্তক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

এদিকে এ মৌসুমের গত ২০ দিন আগেও জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পায়নি। নদীতে গিয়ে অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এতে জেলেদের লোকসান গুনতে হয়েছে। মাছ না পাওয়ায় অনেকে আবার নদীতেই যায়নি। যদিও গত ১৫ দিন থেকে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়েছে। কিন্তু মৌসুমের বেশিরভাগ সময়ই ইলিশ ধরা না পড়ায় ধারদেনায় ডুবে রয়েছে অধিকাংশ জেলে। এতে নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো কষ্টে কাটাতে হবে তাদের।

বিজ্ঞাপন

লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত একশ কিলোমিটার মেঘনা এলাকায় সকল প্রজাতির মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৬০ হাজার জেলের মাছ ধরেই জীবিকা অর্জন করতে হয়। মাছ ধরাই তাদের একমাত্র পেশা।

অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার নির্ধারিত সময়ে মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ আইন অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/07/1538887819736.jpg

জানা গেছে, গত মার্চ-এপ্রিল মেঘনায় নিষেধাজ্ঞার সময় এখানকার জেলেরা নদীতে নামেনি। অবসরে তাদেরকে অলস সময় কাটাতে হয়েছে। কেউ কেউ দোকানে ও হাটে গিয়ে আড্ডা দিয়েছে। আবার অনেকে নিজের নৌকা মেরামত ও ছেঁড়া-ফাটা জাল বুনেছে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে লক্ষ্মীপুরের জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হবে। এছাড়াও লিফলেট, পোস্টার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জেলেসহ সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্য কোথাও থেকে বরফ আসতে না দেওয়া, নদী সংলগ্ন খাল থেকে নৌকা বের হতে না দেওয়া, মাছঘাট সংলগ্ন বাজারের নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ রাখা, নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরের মাছঘাটগুলো বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সদর উপজেলার চররমনী মোহন গ্রামের জেলে শফিক আহমেদ বলেন,‘একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নৌকা মেরামত ও জাল কিনেছি। এ মৌসুমের বেশিরভাগ সময়ই মাছ ধরা পড়েনি। যার কারণে কোনো সঞ্চয় করতে পারিনি। ঋণের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এতে নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো ধারদেনা করেই চলতে হবে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিব উল্যা জানান, নিষেধাজ্ঞার এ ২২ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম। মা ইলিশ যেন নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এই মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে পুলিশ, কোস্টগার্ড, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত থাকবে।