মন্ত্রী আসবে বলে রাতারাতি পরিবর্তন!
একদিকে ধোয়ামোছা অন্যদিকে নতুন রং দিয়ে প্রলেপ দেয়া হচ্ছে দেয়ালে। প্রধান গেটে নেই যানবাহন ও দালালের জটলা। দুগর্ন্ধও যেন উধাও। চিরচেনা দৈন্য দশাও পাল্টে এ যেন নতুন রূপ। বলছি হঠাৎ ব্যাপক পরিবর্তন আসা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কথা। একদিনে পাল্টে গেছে হাসপাতালটির প্রতিদিনের সকল দৃশ্যপট। নতুন করে সাজানো হচ্ছে পুরো হাসপাতাল।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই সদর হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোর ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করার কাজ শুরু করে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মচারী, নার্স সবার চোখে-মুখেই যেন আতংকের ছাপ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের দেয়ালে তখনো চলছিল শেষ মুহূর্তের রং দেয়া। হাসপাতালের প্রধান ফটক এ বিভিন্ন লাইটিং, ব্যানার, ফেস্টুন।
দৈনদশা হাসপাতালটির ব্যাপক এই পরির্তনের কারণ বোঝা গেল ব্যানারে লেখা দেখে। রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসছেন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রোববার চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছাবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম। সকালে চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতালের নবনির্মিত আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন তিনি। বিকেলে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে ১৪ দলের আয়োজনে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। জনসংখ্যার সাথে সাথে রোগীর চাপও বেড়ে যাওয়ায় ২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় রুপ নিলেও ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চলে এর কর্যক্রম। হাসপাতালে ৪২টি পদের মধ্যে চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৭ জন। ২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের বাইকেমিস্ট্রি পরীক্ষা করার মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। রোগীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য অবশেষে ২০১১ সালের প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করে। দীর্ঘ সাত বছর পর জেলাবাসি তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পাবে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সদর হাসপাতালে এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষ ডাক্তার ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অনেক সমস্যার কারণে চিকিৎসা সেবার ব্যঘাত ঘটলেও কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। মরদেহ ব্যবচ্ছেদ করার জন্য এখনো হাতুড়ি-বাটাইলই ভরসা।
এছাড়াও মরদেহ সংরক্ষণের জন্য নেই হিমঘর। সদর হাসপাতালের যে সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপর ভরসা করে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসছে সেই ডাক্তার প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার এখন নাজুক অবস্থা।
সিভিল সার্জন খাইরুল আলম জানান, মন্ত্রী মহাদয় সদর হাসপাতালের আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন উদ্বোধন করলেও এটি জনসাধারণের জন্য এখনোই চালু হবে না। লোকবল নিয়োগের পরই এটি পুরোপুরি চালু হবে।