চরম সীমালঙ্ঘন!
আবারো চরম সীমালঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে সড়কে-মহাসড়কে। দায়িত্ব পালন বা ধর্মঘট, কোনও অবস্থাতেই কোনও সীমা মানা হচ্ছে না পরিবহন সেক্টরের পক্ষ থেকে। সীমালঙ্ঘন যেন তাদের মব্জাগত আচরণ!
আইনের সীমা-পরিসীমা লঙ্ঘন করে যেভাবে ওভারটেক, বেপরোয়া গতি ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে আহত-নিহত-দুর্ঘটনা ঘটানো হয়, তেমনি ভাবে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটের নামেও চরম সীমালঙ্ঘনের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
দাবি আদায়ের নামে কাজ না করে ধর্মঘটে গিয়ে দুর্বিনীত শ্রমিকরা অন্য মানুষের চলাচল আটকে দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বর্বরভাবে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে রেখে দুধের শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সাধারণ রোগিদের পর্যন্ত রেহাই দেয় নি তারা। এমন কি, ব্যক্তিগত বা ধর্মঘটের আওতামুক্ত গাড়ি থেকে লোকজনকে জোরপূর্বক নামিয়ে দিয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে পুড়া মবিলের কালো কালি মাখিয়ে লাঞ্ছিত করেছে তারা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল ধর্মঘটের আওতামুক্ত। মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করেই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বার্থে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। তারপরেও শিক্ষার্থীদের নানাভাবে নাজেহাল করা হয়। এমন কি, শিক্ষকদের নিয়ে চলাচলকারী বাস থামিয়ে রাখা হয় এবং চালককে মারপিট করা হয়।
মারাত্মক ভীতি ও নৈরাজ্য দিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘটকে পালন করেছে। বর্বর আচরণের মাধ্যমে ধর্মঘটকে কলঙ্কিত করেছে। চরম সীমালঙ্ঘন করে মানুষকে নাজেহাল করেছে। নগর জীবনকে তারা দুর্বিষহ করে তুলেছে।
উৎশৃঙ্খল শ্রমিকদের বেপরোয়া ও অমানবিক আচরণে মালিকরা বাধা দেওয়ার বদলে পূর্ণ মদদ দিয়েছে। কোথাও কোথাও শ্রমিকের সঙ্গে মালিকরাও দলবদ্ধ হয়ে অরাজকতা, আতঙ্ক ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। পুরো পরিবহন সেক্টরই মনে হয়েছে যে, একাট্টা হয়ে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে।
প্রশ্ন হলো, যানবাহন চালনকালের মতোই ধর্মঘটের সময়ও চরম সীমালঙ্ঘনের অধিকার পরিবহন শ্রমিকরা কোথায় পায়? তাদের বাধাহীন ও বেপরোয়া আচরণ করার শক্তির উৎস কোথায়? দাবি আদায়ের নামে সাধারণ জনতার বিরুদ্ধে হামলে পড়ার সাহস তারা কোথায় পায়?
ধর্মঘটের নামে উগ্র শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্সকে থামিয়ে রেখে চিকিৎসার্থী যে নবজাতককে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে, সে শিশুর কি অপরাধ? শিশুটি তো পরিবহন শ্রমিকদের কোনও ক্ষতি করে নি? তবু তাকে কেন চরম সীমালঙ্ঘনকারী শ্রমিকদের অনাচারের মূল্য দিতে হলো জীবন দিয়ে?
সাধারণ মানুষও শ্রমিকদের কোনও ক্ষতি করে নি। মানুষ নিরাপদ সড়ক চায়। একজন মানবিক পরিবহন শ্রমিকেরও উচিত নিরাপদ সড়ক চাওয়া। তাহলে পরিবহন শ্রমিক মানুষকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে হেনস্তা করছে কেন? জনতা তো শ্রমিকের প্রতিপক্ষ নয়। তবু জনসাধারণকে আক্রমণ করা হলো কেন?
এমনিতেই চালক, হেলপার ও পরিবহন সেক্টরের আচার-আচরণে সাধারণ মানুষ বিরক্ত ও অতিষ্ঠ। তাদের কাছ থেকে মানুষ ভালো আচরণ ও নিরাপত্তা পায় না। ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিকরা যে সীমাহীন অনাচার ও সীমালঙ্ঘন করলো, তাতে তাদের ইমেজ ও ভাবমূর্তি আরও কলঙ্কময় হলো।
জনঘৃণা ও নিন্দা তাদেরকে ঘিরে স্রোতের মতো বইছে। ক্ষুব্ধ ও অপমানিত মানুষের অভিশাপ ও হাহাকার তাদের দিকে তীরের মতো ছুটে চলেছে। সীমালঙ্ঘনকারীদের এই বোধোদয় হওয়া দরকার যে, মানুষে ঘৃণা কুড়িয়ে তারা কখনোই সফল হতে পারবে না। বরং আরও নিন্দিত ও অপমানিতই হবে।