জাপানের বন্ধু ড. রাধা বিনোদ পাল

  • এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, কুষ্টিয়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাপানের বন্ধু ড. রাধা বিনোদ পাল। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের বন্ধু ড. রাধা বিনোদ পাল। ছবি: সংগৃহীত

আজ (১০ জানুয়ারি) বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের ৫২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৭ সালের আজকের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাপানিদের ইতিহাসে রাধা বিনোদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। জাপানে ইটের গায়ে এখনো লেখা রয়েছে আর বি ডি অর্থাৎ রাধা বিনোদ পাল। মানুষ বেঁচে থাকে নিজের কর্মে। যার মাধ্যমে তিনি অর্জন করেন সুনাম, খ্যাতি ও বিশ্বপরিচয়।

বিজ্ঞাপন

১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ‘মধুরাপুর’ ইউনিয়নের ‘মৌজা সালিমপুরের’ অধীন তারাগুনিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন রাধা বিনোদ পাল।

এলাকাটি এখন জজপাড়া নামে পরিচিত। তার বাবা বিপিন বিহারি পাল। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের গোলাম রহমান পণ্ডিতের কাছে তার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি। কুষ্টিয়া হাইস্কুলে তিনি মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯০৮ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে গণিতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক মনোনীত হন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করেন ১৯৪৪-৪৬ সাল পর্যন্ত।

তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় শেষ, অক্ষশক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে নুরেমবার্গ এবং টোকিওতে দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। হিটলারের মন্ত্রিপরিষদ এবং যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করা হয় নুরেমবার্গে এবং জাপানের সমরবিদ জেনারেল হিদেকি তোজোর বিচার করা হয় টোকিও ট্রাইব্যুনালে। টোকিও ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ড. রাধা বিনোদ পাল।

বিচারের একপর্যায়ে রাধা বিনোদ পাল বাদে অন্য সব বিচারপতি জেনারেল তোজোকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ফাঁসিতে ঝুলানোর সিদ্ধান্ত নেন। অন্যান্য বিচারপতির ধারণা ছিল, বিচারপতি পালও মিত্রশক্তির পক্ষে অনুগত থাকবেন। কিন্তু বিচারপতি রাধা বিনোদ পালের ৮শ পৃষ্ঠার ঐতিহাসিক রায় মিত্রশক্তি এমনকি বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। আইনের শাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল বিচারপতি পাল পূর্ববর্তী রায়কে বিতর্কিত প্রমাণ করে যুক্তি দেন।

এ কারণে রাধা বিনোদ পালকে জাপানিরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। মাত্র কয়েক বছর আগে জাপানি প্রধানমন্ত্রী ‘মিস্টার আবে’ (যিনি বর্তমান জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাবা) কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তিনি রাধা বিনোদ পালের ছেলেকে সমগ্র জাপানের তরফে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। জাপানের রাজধানী টোকিওতে তার নামে রাস্তা এবং কিয়োটো শহরে তার নামে রয়েছে জাদুঘর ও স্ট্যাচু।

তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়া সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহে বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলের দাতা সদস্য রোটারিয়ান আনোয়ারুল হক মোল্লা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কালের বিবর্তনে আজ আমরা অনেক মনীষীকে ভুলে গিয়েছি। বিশ্ববাসী আজ যে সকল মহান ব্যক্তিদের কারণে আমাদের দেশকে স্মরণ করে রেখেছে, রাধা বিনদ পাল তার মধ্য একজন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মহান ব্যক্তিরা খুব কম রয়েছে।’

বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পাল মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মিরপুর কাকিলাদহের এই কৃতীসন্তানকে নিয়ে সরকারি উদ্যোগে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণের কথা থাকলেও সেটি আজও ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা তার নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি।’