গ্রাহকদের আস্থা ফেরাচ্ছে বীমা মেলা
মো. দেলোয়ার হোসেন। পেশায় একজন চালক। পাঁচ বছর আগে স্ত্রী মরিয়ম বেগম লুকিয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আগ্রাবাদ শাখায় বীমা করেছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী মারা যাওয়ার কয়েকদিন পরে ঘরের আলমারিতে বীমার কাগজপত্রের সন্ধান পান তিনি।
এরপর কাগজপত্র নিয়ে বীমা অফিসে কয়েকবার ধরনা দিলেও মেলেনি কোনো সুরাহা। উল্টো বীমার কাগজপত্র নিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা পাঁচ বছর মেয়াদি এই বীমার টাকা পরিশোধ হওয়ার কথা এ বছরে। এর মাঝে স্ত্রীর এই বীমা খুলে দিতে সেই সহায়তাকারীও লাপাত্তা।
দেলোয়ার শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে নগরীর জিমনেসিয়াম হলের মাঠে বীমা মেলার কথা জানতে পারেন এক সহকর্মীর মাধ্যমে। শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় ছুটে আসেন মেলায়। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি আর হয়রানির কথা তুলে ধরেন স্টলে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানের শাখার একজন কর্মকর্তার কার্ড দিয়ে তাকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্র ছাড়া কীভাবে বীমার টাকা পরিশোধের কাজ করবেন সে সম্পর্কে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়নি।
দুপুর সাড়ে ১২টায় মেলার এক পাশে হতাশাগ্রস্ত দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের এই প্রতিবেদকের। এমন সময়ে মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মী দেলোয়ারকে ঘিরে ধরেন। তারা দেলোয়ারের সমস্যার কথা শুনতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। সাফাই গাইলেন প্রতিষ্ঠানের সুনাম নিয়েও। তার অভিযোগের সত্যতা মিলল স্টলে থাকা প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. ফরিদ উদ্দিন নিজামীর কথায়। তিনি দেলোয়ারকে ডেকে পুনরায় নিজের কার্ড দেন। অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে কোনো সমস্যা হলে তার সঙ্গে যোগাযোগের কথা জানান।
দেলোয়ারের মতো এমন অসংখ্য বীমাকারী গ্রাহক ঘুরে বেড়িয়েছেন স্টলে স্টলে। তাদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। দেলোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মো. ফরিদ উদ্দিন নিজামী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অনেক গ্রাহক একেবারে বীমা সম্পর্কে অজ্ঞ। এ সুযোগে অনেকে তাদের বিভিন্নভাবে প্রলোভিত করে টাকা হাতিয়ে নেয়। বীমার কিছু কাজ নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে। আমরা আশা করব তারা চিন্তা ভাবনা করে বীমার কাজ করবেন। এক্ষেত্রে আমরা হেল্প ডেস্কসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা করছি।’
মেলায় ৮০টি স্টল গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে। এর পাশাপাশি বীমার নিষ্পত্তি এবং প্রতিষ্ঠান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
শনিবার মেলা প্রাঙ্গণে বীমা নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বীমা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ নিয়ে অনিয়ম, হয়রানি, বিশৃঙ্খলার অন্ত নেই। এ বিষয়ে সচেতনতা, আস্থার জায়গা তৈরি না হলে বীমা ব্যবসায় সফলতা আসবে না। গ্রাহকদের ভোগান্তি নিরসনে ক্যাম্পিং এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জোর দেন উপাচার্য।
বীমা শিল্পের প্রসার ও প্রচারণার জন্য মেলার আয়োজন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ঢাকা, সিলেটের পরে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামে এই মেলা শুর হয় শুক্রবার। মেলার পর্দা নামছে আজ। এ নিয়ে কথা হয় মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ইদরা) সদস্য গকুল চন্দ্র দাশের সঙ্গে।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বীমা নিয়ে বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের কোম্পানিগুলোর কাজের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশন এবং কোম্পানির কাজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছি। এছাড়াও বীমা নিয়ে মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। মানুষ প্রতিনিয়ত নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছে। এসব বিষয়ে মেলায় কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহায়তা করছে। আমরা আশা করব মানুষ এখন থেকে বীমা করতে সাহস পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের বীমা সংক্রান্ত কাজগুলো এখনো সময়সাপেক্ষ এবং পুরনো পদ্ধতির চালু রয়েছে। এ বছর বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পেয়েছি। এর মাধ্যমে অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় আনা হবে। এতে কাজের গতি ও হয়রানি কমে আসবে।’