সারাদেশে ব্যাপকভাবে রেল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
‘আজকে সারা বাংলাদেশে আমরা রেল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে চাই। খুব অল্প খরচে আরামদায়ক ভ্রমণ একমাত্র রেল দিতে পারে। কাজেই রেললাইনকে এ জন্য আমি সব থেকে গুরুত্ব দিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিয়েছি। কারণ, যখন এটা সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল তখন দেখতাম বাজেটের টাকা যখন ভাগ হয় তখন রেলের ভাগে খুব সামান্য টাকা পড়তো। সেজন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করে আলাদা বাজেট, আলাদা সবকিছু আমরা করে দিয়েছি। আলাদা প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি।’
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সবুজ রঙের পতাকা নাড়িয়ে বিরতিহীন ট্রেনটির উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন রেলখাত কোনো ধরনের লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শ ছিল বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া এবং বিএনপি সে পথেই যাচ্ছিল। অনেকগুলো রেল স্টেশন বন্ধ, রেল লাইন বন্ধ, বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। অথচ আমাদের ঘনবসতি পূর্ণ দেশ । ৫৪ হাজার বর্গমাইলে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। মানুষের যোগাযোগের জন্য ব্যাপকভাবে সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। আমাদের নৌপথ, রেলপথ, সড়কপথ এবং বিমান পথ সবই আমাদের উন্নতমানের হওয়া দরকার।’
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতমানের করে দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রাজশাহীদের বিমানবন্দর বন্ধ ছিল, আমরা সরকারে আসার পর চালু করে দিয়েছি। সৈয়দপুরে বিমানবন্ধর প্রায় বন্ধ ছিল, বরিশালে বিমানবন্দর বন্ধ ছিল সেগুলো আমরা চালু করেছি। রেললাইনগুলোর অনেকগুলো রেলপথ বন্ধ ছিল সেগুলো আমরা চালু করেছি। আমরা নতুন নতুন রেলপথ যেমন চালু করেছি তেমনি পুরোনোগুলোকে উন্নতমানের করে নতুন স্টেশন করে সেগুলো চালু করেছি। ৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারতের যখন যুদ্ধ হয়, এ যুদ্ধের পর আমাদের এই অঞ্চলে যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছিল। সেই রেল সংযোগগুলোও আবার আমরা চালু করছি। কাজেই রেলের যোগাযোগটা আমরা আরও উন্নত মানের করে দিতে চাই। যাতে সমগ্র বাংলাদেশ রাজধানীর সঙ্গে একটা ভালো সংযোগ সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে পোর্টগুলোর সাথেও যেন রেল সংযোগটা থাকে। ফলে আমাদের আমদানি রফতানিতেও ভালো কাজে লাগবে। তাছাড়া আমরা ১০০টা অর্থনৈতিক জোন করে দিচ্ছি। সেখান থেকে পণ্য উৎপাদন হবে, কিংবা তার কাচামালটা রেলের মাধ্যমে স্বল্প খরচে পরিবহন করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যমুনা নদীর উপর রেল সংযোগ দিতে গিয়ে যাদের সঙ্গে আমাদের কথা শুনতে হয়েছিল সেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এখন আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে যে সেতুর সঙ্গে যে রেল আছে সেটা ছাড়াও আলাদা একটা রেল সেতু তারা করে দিতে চায়। কাজেই এতদিন পরে তারা বুঝল এটার প্রয়োজন কত বেশি, কত লাভজনক। দেশটা আমাদের। আমরা আমাদের দেশের যতটা ভালো বুঝব, বাইরে থেকে হঠাৎ হঠাৎ কেউ এসে সেটা বুঝবে না। এটা হল বাস্তবতা।’
উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখার জন্য দেশে শান্তি রক্ষা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২১ বছর পর আমি এসে যেটা দেখলাম দেশ খাদ্যে পরনির্ভর, মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, দেশের রাস্তাঘাট সবকিছুর একটা অচলাবস্থা। শুধু ক্ষমতাসীনদের ভোগবিলাস ছাড়া সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যখন পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম আমরা অনেকক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করেছিলাম। মানুষের মধ্যে একটা আশার সঞ্চার হয়। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি জামায়াত জোট আবার যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ৫০০ জায়গায় একই সময়ে বোমা ফোটে, গ্রেনেড হামলা, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার, জেল জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার ছাড়া আর কিছু তারা করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী এ বিভাগটায় সেই বাংলাভাই এবং জঙ্গিবাদের একটা আখড়া ছিল। সব থেকে দুর্ভাগ্য যে তখনকরা সরকার, বিএনপি জামায়াত সরকার এদের মদত দিত। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে তারা মিছিল করত, পুলিশ তাদের পাহাড়া দিত। অর্থাৎ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে এ দেশকে সৃষ্টি করেছিল। যার প্রভাব এখনো আমরা দেখি ‘
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রাজশাহীর জন্য নৌপথের যেন উন্নয়নটা হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নৌপথে পণ্য পরিবহন আরও অল্প খরচে হবে। ঠিক সেইভাবে একটা সার্বিক উন্নয়নের আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা চাই আমাদের দেশটার আরও উন্নয়ন হোক, আরও এগিয়ে যাক। রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাঙালির উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে তারা দেশের উন্নয়ন নয় বরং নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন বলে ও দাবি করেন সরকারপ্রধান। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ আবারও ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার আদর্শ অনুসরন করে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাটা শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজীবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন। গণভবনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়র আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিপ্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আরও অনেকে।