বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় শ্রমিকদের জোর আপত্তি
নৌযান শ্রমিক, ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীদের জোর আপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধের অটল সিদ্ধান্তের কথা ব্যক্ত করেছেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খাঁন খসরু।
তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘উপকূলের নৌযান শ্রমিকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার বৃহৎ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রদানসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে প্যাকেট জাতীয় খাবার প্রদান করা হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে নৌযান শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সকল ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও নৌযান শ্রমিকদের সহায়তা চেয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ সভার আয়োজন করেন।
সভার শুরুতে নৌযান শ্রমিকরা জানান, বছরের বেশকিছু সময় প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলদস্যুদের কারণে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়। নতুন করে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তাদের অনেকে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, চীনসহ বিভিন্ন দেশে মৎস্য সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে একটি সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। বাংলাদেশেও কাছাকাছি সময়ের সাথে মিল রেখে মাছ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে মাছের প্রজনন বৃদ্ধিসহ উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘মাছ ধরতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা জেলে রিবারগুলোর জন্য সরকার বেশকিছু প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে কৃষকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সমুদ্রের এক প্রকার শ্যাওলা, যা সবজী হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে, এটিকে জনপ্রিয় ও রফতানির কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নৌযান শ্রমিকদের স্বার্থে মাছ বন্ধের সিদ্ধান্তটি কোনোভাবে কমানোর যায় কিনা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
এমনকি জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনও বেঁধে দেওয়া সময়টি এগিয়ে আনা কিংবা পেছানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছুল আলম মণ্ডল সভার সভাপতিত্ব করেন। সভায় বিভিন্ন নৌযান ও ট্রলার মালিক সংগঠনের প্রতিনিধি, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উচ্চপর্দস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এদিকে মতবিনিময় সভার পূর্বে সার্কিট হাউসের মূল ফটকে প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক অবস্থান নেন। তারা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানেন না বলে স্লোগান দেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার পথে প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি রোধ করার চেষ্টা করেন নৌযান শ্রমিকরা।