বিমানবন্দরের রানওয়েতে শুকানো হয় ভুট্টা
ঠাকুরগাঁও: নানা জটিলতার কারণে ৩৪ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি। দীর্ঘদিন ধরে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে এই বিমানবন্দরের রানওয়েটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ভুট্টা শুকানোর কাজে।
বিমানবন্দরের রানওয়ে ঘুরে দেখা গেছে, ভুট্টা শুকানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে স্থানীয়রা। কথা হয় চাষি আব্দুল বাসেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আর চালু হবে না। অনেক শুনেছি- এই হচ্ছে, এই হবে। অনেক নেতা-মন্ত্রী এসেছে। ঘুরে গেছে, কথা দিয়েছে এবার হবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। আমরা গরীব মানুষ, পাশেই বাসা। কাজ করে খাই। ভুট্টা আবাদ করেছি, আমার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে এখানে ভুট্টা শুকাচ্ছি।’
শুধু আব্দুল বাসেদ নয়, এমন আরও অনেক চাষিই তার জমির ভুট্টা এনে শুকাচ্ছে এই বিমানবন্দরের রানওয়েতে।
ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুইবার বন্ধ হয়ে যায়। ঠাকুরগাঁওবাসীর দীর্ঘ দিনের চাওয়া ছিল এই বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা হোক। কিন্তু তা আর হয়নি। বর্তমানে সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে ভুট্টা শুকানোর কাজে।
জানা গেছে, বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে এমপি-মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষদের আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিপূর্বে বহু আন্দোলন সংগ্রাম হলেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। গত বছরের শুরুর দিকে বর্তমান সরকারের পর্যটন ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন দুই দফায় ঠাকুরগাঁও এসে বিমানবন্দর পরিদর্শনকালে একটি জনসভায়ও যোগ দেন। সভায় তিনি বিমানবন্দরটি ৬ মাসের মধ্যে চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী এসে বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।’
অথচ গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জেলায় সফর করে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্থ স্থাপন করলেও বিমানবন্দরটির ব্যাপারে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর তাই আবারো বিমানবন্দরটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধের বিশেষ কৌশল প্রয়োগের জন্য ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ এলাকার সাড়ে ৫শ একর জমির উপর স্থাপিত হয় এ বিমানবন্দরটি। যার রানওয়ে ছিল ৩টি এবং এতে সাব-রানওয়ে ছিল ১০টি। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমান বন্দরটিকে ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশন বিভাগ আরও ১১০ একর জমি বর্ধিত করে সেখানে বিমানবন্দরের বর্তমান স্টল ভবন নির্মাণ এবং রানওয়ে বর্ধিত করে বিমানবন্দরটি চালু করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল এবং ওই সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান সার্ভিস চালু ছিল। এরপর আবারো বন্ধ হয়ে যায় এটি। ১৯৮০ সালের দিকে বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের কাজসহ রানওয়ে মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটিকে আর চালু করা হয়নি। দীর্ঘ কয়েক যুগ বন্ধ থাকার পরে বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর লার্নার ড্রাইভারদের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে আর্থিক ও শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই দুই জেলার মানুষ।
ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুরে বিমানের টিকিট বুকিং দেয়ার জন্য এখানে রয়েছে ৪ থেকে ৫টি বুকিং এজেন্সি। এদের মধ্যে রয়েছে মাহিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, টাঙ্গন এয়ারলাইন্স, এস এস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, জয় এয়ারলাইন্স। এই এজেন্সি গুলি থেকে এ জেলার মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন যাত্রী দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের টিকিট গ্রহণ করেন। বিমানবন্দরটি চালু হলে এসব যাত্রীদের সুবিধা অনেকাংশে বেড়ে যেত বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
এস এস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের পরিচালক রফিকুল ইসলাম রোহান বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘যেহেতু আমাদের এ অঞ্চলটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এবং বাংলাবান্দা চেকপোস্ট খুব কাছেই, তাই বিমানবন্দরটি চালু হলে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হত। যা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি বড় অবদান রাখত।’
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। সব চাওয়া তো আর একবারে পূরণ করা সম্ভব হয় না। আশা করি আগামীতে আমরা বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারে ভালো সংবাদ পাব।’