সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ইভিএম ক্রয়ের প্রস্তাব
সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার ইলেক্ট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটির বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ণ কমিটি (পিইসি) মতামত দিয়েছে।
গত ১৯ আগস্ট পিইসির সভায় এ মতামত দেয়া হয়। সম্প্রতি ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯ আগস্টের সভাটি বিশেষ কিছু কারণে মূলতবি করা হয়েছে। পিইসির সভায় প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মর্মে মতামত এসেছে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আলোচনার তাগিদ দিয়েছে পিইসি।
প্রকল্পে ২০৪ জন পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা জানতে চেয়েছে পিইসি। এক্ষেত্রে পরামর্শকের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মপরিধি ডিপিপিতে উল্লেখের জন্য বলা হয়েছে। দেড় লাখ ইভিএমের যন্ত্রপাতি ও সিস্টেম ক্রয়ের কথা প্রকল্পে বলা হয়েছে। তবে কোথায় থেকে কিভাবে এসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে তা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকল্পে ৩ হাজার ১১০ জনের প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ থাকলেও তারা কারা সে বিষয়ে উল্লেখ নেই। এছাড়া ৩০জনকে বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা বলা হলেও তাদের পরিচয় জানানো হয়নি। প্রকল্পে বিজ্ঞাপন প্রচার, পরিবহন, মোটরযানবাহন ক্রয়, কম্পিউটার সফটওয়্যার, আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনের কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে কিছু জানানো হয়নি। মাননীয় মন্ত্রী এর আগে একটা সভা ডেকেছিলেন। ওই সভা মূলতবি হয়েছে। সভার পরবর্তী তারিখ এখনও জানানো হয়নি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এজন্য প্রায় দেড় লাখ ইউনিট ইভিএম ক্রয়ের জন্য ৩৮২৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাবও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করেছে ইসি।
এর আগে ইসি জানিয়েছিল, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমে ব্যবহারে সফলতা পেলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে ইসি।
সিইসি কেএম নূরুল হুদা একাধিকবার বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেই ইসির। রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা সর্বসম্মতি দিলেই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে।
এরও আগে ২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনে বুয়েটের তৈরি ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজশাহী সিটির পিটিআই কেন্দ্রে রণক্ষেত্র তৈরি হয়। ইভিএমের কারণে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বিতর্কিত হয়ে পড়ে। সর্বপ্রথম তত্বাবধায়ক সময়কার এটিএম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি মেশিন কেনা হয়। ব্যবহার করতে গিয়ে ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কেনা হয়।