ডিসি আতঙ্কে মেহেরপুরের শিক্ষকরা

  • মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

মেহেরপুর: মেহেরপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আতঙ্ক। আকস্মিক পরিদর্শনে বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতিতে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে। এতে শিক্ষকদের পাশাপাশি সক্রিয় শিক্ষা বিভাগ। দীর্ঘদিনের নানা অব্যবস্থাপনায় চলা প্রাথমিকে শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেনের এই বিশেষ পরিদর্শনে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলায় রয়েছে ৩০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জনবল স্বল্পতায় পর্যাপ্ত পরিদর্শন হয় না। অপরদিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষক সমিতির নেতারা বিদ্যালয় সময়ে কারণে বা অকারণে উপজেলা শিক্ষা অফিসেই সময় কাটিয়েছেন। স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে অনেক শিক্ষক স্কুলে দায়িত্ব পালন করেন নিজের ইচ্ছে মতো। মন চাইলে স্কুলে পাঠদান হয়, না চাইলে নয়। এমন পরিস্থিতি চলে আসছে বহুদিন ধরে।

এদিকে বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে। শিক্ষকরা নিজেরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর অমনোযোগী।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/29/1535545946470.jpg

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, গত মে মাসের মাঝামাঝি মেহেরপুর জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন আনোয়ার হোসেন। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শন শুরু করেন। পরিদর্শনের ফলাফল তিনি জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজে তুলে ধরেন। যার একটি হচ্ছে- ‘গাংনী চৌগাছা প্রা: বিদ্যালয়ে হঠাৎ যাওয়া। সময় ১:২০। ছাত্র ছাত্রী খাতা কলমে ১২৩ জন। উপস্থিত পেলাম ২০/২২ জন। শিক্ষক ৭ জন। ৩ জন স্যারের উপস্থিতির খাতায় হাজিরা আছে, কিন্তু তারা স্কুলে নেই। খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ১ জন ম্যাডামের আগমন। এরকম কেন জানতে চাইলে ম্যাডাম জানান টিফিন বক্স দেয়ার ফলে সবাই চলে গেছে। কেন এরকম হচ্ছে? শিক্ষা বিভাগ কী করে?’

জেলা প্রশাসকের পরিদর্শনে বিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ওই বিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী শিক্ষক থাকায় প্রশাসন কোনো কিছুই করতে পারবে না বলে শুঞ্জন শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সব সমালোচনার জানালা বন্ধ করে তিন শিক্ষকের ১ দিনের বেতন কাটেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।

এদিকে চৌগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের বেতন কাটার খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে সচেতন হতে শুরু করেন। এর মাঝে গত দুই মাস অন্তত ৩০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকরাই সমিতি পরিচালনা করেন। তারা বিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি সময় দেন রাজনীতিতে। সরকারি বিধি-নিষেধ থাকলেও তারা রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও বিদ্যালয় চলাকালীন বেশিরভাগ সময় তারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কাজের নামে সময় কাটান। এই শিক্ষক নেতাদের কারণেই শিক্ষা অফিস কোনো শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে এখন বদলে গেছে পরিস্থিতি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/29/1535545976264.jpg

কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে এখন ডিসি আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি কখন কোন বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন তা আগে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। তাই এখন সময় মতো বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হচ্ছে এবং নির্ধারিত সময়েই বিদ্যালয় ছুটি হচ্ছে। শিক্ষকরা বিদ্যালয় চলাকালীন পুরো সময়ই সেখানে অবস্থান করছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্রাথমিকের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আশা করছেন শিক্ষকরাই।

এদিকে শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন নির্মাণ কাজের সাইড পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসক। অসঙ্গতি ও অনিয়ম তুলে ধরে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কাজেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আসছে বলেও মনে করছে এলাকাবাসী।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেছের আলী জানান, সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এগুলো পরিদর্শনের জন্য জেলা প্রশাসকের এখতিয়ার রয়েছে। এই পরিদর্শনে অবশ্যই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আরও গতি ফিরছে। এটি ইতিবাচক দিক।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন,‘আমরা সব সময়ই বলি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। প্রাথমিক স্তরে ভালো করতে পারলে যে বাংলার স্বপ্ন আমরা দেখছি তা সফল হবে। প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সকলেরই খেয়াল রাখা দরকার।’