হাওরের হাতছানি-৩

ক্ষেতসমুদ্রে সান্ধ্য ভ্রমণআড্ডা

  • মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দিনের বেলা ক্ষেতসমুদ্র

দিনের বেলা ক্ষেতসমুদ্র

ইকো রিসোর্টে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল নতুন চমক। ‘ক্ষেতসমুদ্রে’ বসবে সান্ধ্য ভ্রমণআড্ডা। সঙ্গে চিকেন বারবিকিউ, মৌসুমী ফল আর গরম কফি। এই লোভনীয় সান্ধ্য আড্ডার হাতছানিতে মূল রিসোর্টে না ঢুকেই আমরা পাশের রাস্তা দিয়ে পেছন বা উত্তর দিকে ছুটলাম। সেখানে অপেক্ষমাণ ভ্রমণদলের নারী সদস্যগণ। মূল ভবনের পেছনে বেশ খানিকটা দূরে গাছগাছালিঘেরা সুইমিং পুল। তারও উত্তরে ফাঁকা মাঠ। একটি দ্বিচালা টিনের ঘর রিসোর্টের আঙিনা থেকে মাঠের মধ্যে ঝুলে পড়েছে। স্কুলঘরের আদলে কাঠের অনেকগুলো টেবিল-বেঞ্চিপাতা। সে বেঞ্চি অর্ধেক চালার নিচে, খানিকটা উন্মুক্ত আকাশতলে। মূলভবন থেকে মাঠের ঘর পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য হারিকেন, যার মধ্যে নানা রঙের বিদ্যুৎ বাতি ভরা। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে রঙিন আলোর বিচ্ছুরণ এক মায়াময় পরিবেশ তৈরি করে। এটাই ‘ক্ষেতসমুদ্র’, আমাদের ট্যুর আয়োজক ডালিয়া হোসেন যাকে ‘মাচান ঘর, মাচান ঘর’ বলে জানিয়ে আসছিলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/11/1562817441048.jpg
গ্রামের রাস্তা থেকে ক্ষেতসমুদ্র

 

বিজ্ঞাপন

হাওর ও গ্রামপর্যটন বিস্তারে জালালপুর ইকো রিসোর্ট

চালার নিচ ও উন্মুক্ত আকাশতলের বেঞ্চগুলোতে বসে আমরা বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠের অন্ধকার আর দূরগ্রামের সবুজ ছুঁয়ে আসা উন্মুক্ত বাতাস উপভোগ করতে লাগলাম। ঝিঁঝি পোকার একটানা শব্দ আর দূরমাঠে শিয়ালের হুক্কাহুয়ায় সবাই কেমন আনমনা, নস্টালজিক ভাবালুতায় আক্রান্ত। সবাই ফিরে গেলাম সেই কৈশোরে। অনেকক্ষণ চুপচাপ অবস্থার পর আমাদের সম্বিত ফিরল রিসোর্টকর্মীদের কথাবার্তায়। চিকেন বারবিকিউয়ের সঙ্গে মৌসুমী ফল আর গরম কফি পরিবেশন করার জন্য তারা হাজির। প্লেটে প্লেটে পরিবেশনের পর খাবার পালা। একে একে সব খাবার শেষ করে কফিপানের পর আমরা তৃপ্ত। আধখোলা মাঠ রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের মন ফুরফুরে। কথা ছিল, আড্ডা, গান আর কবিতা পাঠ হবে। দলের কামরুল হাসান আর আমি কবি অভিধায় ভূষিত। আমাদের বইপত্রও নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। আমাদের একাধিক কবিতা পাঠে প্রতিটি কবিতার শেষে হাততালি পড়তে লাগল। এতে উৎসাহিত হয়ে ডালিয়া হোসেনও ছাত্রজীবনের লেখা মোবাইল থেকে বের করে পড়লেন। খালি গলায় কিছু গানও হলো। সৈয়দ জাফর লেখালেখি করেন না, তবে চুটকি বলায় ওস্তাদ। তার উপস্থাপনাভঙ্গি ও পাঞ্চলাইন সবাইকে অট্টহাসিতে ভরিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/11/1562817484264.jpg
কবি কামরুল হাসান নোটবুকে, সৈয়দ জাফর মোবাইলে ব্যস্ত

 

শহুরের গ্রাম দরশন

একসময় ‘ক্ষেতসমুদ্রের’ আড্ডায় আলোকিত হারিকেনগুলোর চারপাশে মেঠোপোকার ওড়াউড়ি বাড়লে মাচানের আড্ডা ভাঙতে হলো, তবে আড্ডা ভাঙল না, তা বিস্তৃত হলো মূলভবনের ড্রইং রুমে। এখন আর কবিতা বা গান নয়। পরদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা, সব ভ্রামণিকের অতীত ভ্রমণের বিড়ম্বনা, সুখকর অভিজ্ঞতা ইত্যাদি প্রাণখুলে বলল সবাই।

রাত বাড়তে থাকলে ডাক পড়ল নৈশভোজের। রাতের মেন্যু পোলাও, মুরগির রোস্ট, সাদাভাত, গরুর গোশতের ঝোল। সাদা ভাত, ডালও ছিল পোলাও পরিহারকারীদের জন্য। জিভে পানি আনা এসব খাবার মজা করে খেয়ে যার যার রুমে চলে গেলাম। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার তাড়া দেওয়া হলো। আগামী দিন হাওরযাত্রার জন্য সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। যত আগে প্রাতঃরাশ খেয়ে বের হওয়া যাবে, ততই বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের সুযোগ।