এরশাদ-জিয়াকে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই এ দুজনের কেউ আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিন্তু থাকেন না। তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করা হাইকোর্টের রায়ে বৈধ নয়, সেটা করা যায় না।
রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতার মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এরশাদ’
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ হিসেবে জেনারেল এরশাদ সাহেব অমায়িক ছিলেন, মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল।
সংসদ নেতা বলেন, দোষে-গুণে মানুষ। আমাদেরও অনেক কিছুই বলার আছে। কারণ, আমরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। তারপরও দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে অনেক কিছু হজম করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের নেতা যিনি ছিলেন, সেই জেনারেল এরশাদ এক সময় যখন পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করান। এক সময় তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হন।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। সেনাপ্রধান হিসেবে সাত্তারকে প্রার্থী করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। একটি বিদেশি পত্রিকায় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বিচারপতি সাত্তার সাহেব তার প্রার্থী! সেখানেই আমরা আপত্তি তুলেছিলাম। বিচারপতি সাত্তার সাহেবকে বলেছিলাম, এ ধরনের প্রার্থী হওয়া উচিত না। বরং নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হতে দেন, গণতান্ত্রিক ধারা যেন বজায় থাকে। কিন্তু তারা তা করেনি।
… তখন খালেদা জিয়া কিন্তু রাজনীতিতে আসেনি। কিন্ত পরবর্তীতে রাজনীতিতে না আসলেও হঠাৎ করে বিচারপতি ছাত্তার সাহেবের বিরুদ্ধে একটা স্টেটমেন্ট দেন। বিচারপতি ছাত্তার সাহেব ছিলেন তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তখন খালেদা জিয়া তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় দেওয়ার জন্য স্টেটমেন্ট দেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ সাহেব যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, সেই ক্ষমতা দখলের সুযোগটা কিন্তু খালেদা জিয়াই করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে শুধু দুটি বাড়িই নয়, নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা জেনারেল এরশাদ দিয়েছিলেন। যে কারণে জিয়া হত্যার ব্যাপারে যে মামলা হয়েছিল চট্টগ্রামে, সেই মামলা কিন্তু বিএনপি কখনও চালায়নি।
তিনি বলেন, বহু বছর পর এসে ১৯৯৪ সালের দিকে জেনারেল এরশাদকে তার স্বামী হত্যার জন্য দায়ী করেছেন খালেদা জিয়া। এর পূর্বে কখনো দায়ী করেননি। এগুলো ইতিহাসের একটা অংশ, ক্ষমতাটাকে তুলে দেওয়া বা সুযোগ করে দেওয়া। তবে এর বিরুদ্ধে আমরাই প্রতিবাদ করেছি। কারণ, আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল প্রতিবাদ করেছিলাম এই জন্য যে, আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এক সামরিক শাসকের ক্ষমতা থেকে আরেক সামরিক শাসকের ক্ষমতা আসুক—এটা কখনো আমাদের জন্য কাম্য ছিল না।
সংসদ নেতা আরও বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। আমি দেশে ফিরে আসার পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আমাদের বাড়িতে জেনারেল জিয়া আমাকে ঢুকতেই দেননি। এটাও বাস্তবতা।
তিনি বলেন, প্রথমে মার্শাল ল’ জারি করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। এরপর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে নেন। এই ক্ষমতা দখল প্রথমে জিয়াউর রহমান করেন। জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এরপর জেনারেল এরশাদও নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালত জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের এই ক্ষমতা দখলটাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। উচ্চ আদালত অবৈধ যখন ঘোষণা করেছেন, তখন এ দুজনের কেউ আর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিন্তু থাকেন না। তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে উল্লেখ করাও হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বৈধ নয়, সেটা করা যায় না। কারণ, একটা রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ধারাটা অব্যাহত রাখার সুযোগ হয়েছে।