বার্তা২৪.কম-কে জানালেন ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল

‘তাপপ্রবাহে বোরো আবাদে শঙ্কার সঙ্গে সুখবরও আছে’



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. আবদুস সাত্তার মণ্ডল চলমান তাপপ্রবাহে চলতি বোরো মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের আংশিক শঙ্কার সঙ্গে সুখবরও রয়েছে বলে জানিয়েছেন। দেশের সব অঞ্চলেই বোরোর ফলন সন্তোষজনক জানিয়ে এই কৃষি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অপেক্ষাকৃত বিলম্বে রোপণ করা ধানের ফোর্স ম্যাচিউরড হওয়ার শঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত আবাদের ফলে সম্ভাব্য বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার সম্ভাবনাও আছে।

বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে চলমান তাপপ্রবাহে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিবর্তিত জলবায়ুতে বাংলাদেশের কৃষিখাতের সংকট ও সম্ভাবনার নানা দিকও তুলে ধরেন ড. মণ্ডল। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম

বার্তা২৪.কম: চলমান এই তাপপ্রবাহে আমাদের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া কতখানি ব্যাহত হতে পারে কিংবা এর কি নেতিবাচক প্রভাব কি পড়তে পারে?

ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল: এটা এখনি বলা মুশকিল। এটা নিয়ে এখনও প্রামাণ্য কোন তথ্য আমাদের হাতে নেই। তাই আমরা যেন বিষয়টিকে কিছুতেই গুলিয়ে না ফেলি। আমরা যারা শহরের মানুষ, এই তাপে খুবই কষ্ট পাচ্ছি। সেটা যদি আমরা অন্য জায়গার সঙ্গে মিলিয়ে বোঝার চেষ্টা করি তাহলে অনেক ক্ষেত্রে একটু অতিরঞ্জন হয়ে যেতে পারে। ভুলও হতে পারে। ঢাকা শহর নিয়ে আমরা বেশি কষ্টে আছি বলে মনে করি গোটা বাংলাদেশ বোধহয় এরকম হয়ে গেছে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চল অর্থাৎ যেখানে ফসল চাষাবাদ হয়, উন্মূক্ত মাঠ-ঘাট আছে, কিছুটা বায়ু প্রবাহ আছে (যদিও সূর্যের তাপটা বেশি) তবুও সেখানে তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি কম থাকে। খবরে যেগুলো দেখি সেগুলো সাধারণত শহরাঞ্চলে। এই দিকগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। তার মানে এই নয় যে তাপমাত্র বেশি না। বৈশাখ মাস এমনিতেই হটেস্ট মাস। এটা মনে রেখেই আমাদের আলাপটা করতে হবে। অনেক দিন বৃষ্টি নেই। প্রখর সূর্য রশ্মি। দেশের অনেক জায়গায় ধান কাটা লেগেছে। এই ধান কাটা হচ্ছে প্রধানত হাওর এলাকাতে। সেখানে ইতিমধ্যে যতদূর খবর পাচ্ছি, প্রায় অর্ধেক ধান কাটা হয়ে গেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে লবনাক্তপ্রবণ এলাকাতে আমাদের গবেষণালব্ধ যে নতুন জাতের ধান (লবনসহিষ্ণু ধান) কাটা হচ্ছে, সেগুলোরও ফলন ভালো। হাওরে ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে তাহলে কৃষি নিয়ে আমাদের শঙ্কাটি কোথায়? শঙ্কার দিকগুলো যদি দেখি তা হচ্ছে-যে ধানগুলো বিলম্বে লাগানো সেগুলো পরিপক্ক হতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। যেহেতু তাপমাত্রা বেশি সেক্ষেত্রে এগুলোকে বলা হয় ফোর্স ম্যাচিউরড হতে পারে...নরমাললি ধানের থোর উঠার পর থেকে পরিপক্ক হতে এক মাস সময় লাগে। এখনো পরিপক্ক না হওয়া ধানের ক্ষেত্রে বলা যায়, যতটা পরিপক্ক হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়ত নাও হতে পারে। অনেকটা ইম্যাচিউর বেবির মতো।

বার্তা২৪.কম: এবারের বোরো মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের কোন শঙ্কা কি আপনি দেখেন?

ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল: বিষয়টি হল বাংলাদেশের কি পরিমাণ জমির ধান এখনো অপরিপক্ক সেই তথ্য আমাদের এখনও জানা নাই। এসব জমিতে তাপের প্রভাবে সময়ের আগেই পরিপুষ্ট না হয়ে পেকে গেলে ফলন বিপর্যয় হতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে-একেবারে নাভিতে যেগুলো লাগানো হয়েছে, তাপমাত্রার কারণে ফলন বিপর্যয়ের যে শঙ্কার কথা বললাম তা হচ্ছে মেইন ল্যান্ডে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বিলম্বে যারা ধান রোপণ করেছেন; বিশেষ করে আলুসহ অন্যান্য ফসল উঠানোর পর-এগুলোর ব্যাপারে যা হবে তা হচ্ছে-(এগুলো ভেজিটেটিভ গ্রোথ বলে) চলমান এই তাপের কারণে সেগুলো শুকিয়ে যেতে পারে। শুকিয়ে গেছে এমন কোন রিপোর্ট যদিও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, যদি তা হয় তবে ক্ষতি হতে পারে। এটা আমি বলছি, আশঙ্কার দিক বিবেচনা করে। কিন্তু আমাদের একটি সুখবরও আছে। সেটা হল এই বছর ধানের আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। আমাদের ৫০ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান লাগানোর টার্গেট ছিল। কিন্তু হয়ে গেছে আরও বেশি। অন্ততঃ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও ২০ হাজার একর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়ে গেছে। তাই যদি হয়-তাহলে সেখানে ফলন ভালো হবে। এই তীব্র তাপদাহে জনজীবনের দুর্বিষহ অবস্থা হচ্ছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বোরো ফলনে বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়বে এমন কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নেই।

বার্তা২৪.কম: পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাব খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কতটা প্রকট হয়েছে?

ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল: কিছু বিষয় ছাড়া পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়েছে এ কথা বলা যাবে না। অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। একটা বড় চ্যালেঞ্জ হল-আমাদের সেচ ব্যবস্থাটা এত বেশি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে যে সারা বছরই তা লাগছে। এতে কৃষির উপর বাড়তি খরচের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে যে দামে ফসল কৃষকরা ব্রিক্রি করছেন, তাতে করে ধানের উৎপাদন অক্ষুন্ন রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এটা বোধগম্য হচ্ছে যে, আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে একটি চৌকষ কৃষি হতে হবে। এই যে পরিবর্তনগুলি আসছে, যুগ যুগ ধরে পরিবর্তন চলতেই থাকবে। আমরা জানি, কৃষি উৎপাদন মূলতঃ পানি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল, এটি নির্বিঘ্ন ও প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে বিপুল বিনিয়োগ লাগবে। এটা কেবল সরকারের নয়, কৃষকের নিজেরও করতে হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে এই যে সেচ দেওয়া হচ্ছে, এতে ধান ও চালের যে দামটা পড়বে, তাতে খরচ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সেটার জন্যও তৈরি থাকতে হবে।

বার্তা২৪.কম: পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমাদের কৃষি খাতকে সংহত রাখতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের বিষয়ে বলুন...

ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল: অনেক পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ করার বিষয় যে, কৃষি গবেষণায় জলবায়ুসহিষ্ণু জাত ও পারমাণবিক কৃষি গবেষণায় উদ্ভাবিত কিছু জাত এরই মধ্যে মাঠে গড়িয়েছে। এই জাত উদ্ভাবনটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কার্যকর একটা পদক্ষেপ, যা সরকারের এ সংক্রান্ত পলিসির কারণে হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে-বেসরকারি খাতও সরকারের পলিসির কারণে কৃষিতে যুক্ত হয়েছে, বিনিয়োগ করছে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে যেখানে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনার উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন এখন পর্যন্ত হয় নাই। বিনিয়োগেরও প্রশ্ন আছে। যে প্রশ্ন আছে সেটা বহুদিনের, সেখানে এখন পর্যন্ত কিছু আগায়নি। আরেকটি প্রসঙ্গ বলা হচ্ছে যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এনিয়ে সরকারের পাশাপাশি একটি কোম্পানি কাজ করছে। তবে তেমনভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, কারণটা আমাদের বুঝতে হবে। এটা প্যানেলের দাম বেশি নাকি অন্য কোন সমস্যা আছে-নতুন করে অর্গানাইজেশনাল কোন ড্রাইভ দিতে হবে কিনা তাও জানা জরুরি।

বার্তা২৪.কম: পরিবর্তিত জলবায়ুর ফলে কৃষিজ উৎপাদনের পরিবর্তনের সঙ্গে বৈচিত্র্যও এসেছে...

. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল: পরিবর্তিত জলবায়ু কৃষিতে আমাদের জন্য সুফলও বয়ে এনেছে। পূর্বে রবি মৌসুম ছিল মাত্র দুই মাসের, তা এখন সাত-আট মাস ধরে থাকে। মানুষ প্রচুর ফসল ফলাতে পারছে। জমি খালি থাকছে না। কারণ সেইভাবে বর্ষা হয়ে জমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত থাকে না। এসবও বুঝতে হবে। ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে, নতুন নতুন জাতের ফসল আমরা ফলাতে পারছি। সমস্ত মাঠজুড়ে ফল তৈরি হচ্ছে। আমরা কি জানতাম আগে? এর সবই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই হয়েছে।

বার্তা২৪.কম: সামগ্রিক বিবেচনায় আগামীর কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

ড. মো. আবদুস সাত্তার মণ্ডল: এখন আমাদের কৃষিতে আসলে যা করতে হবে সেটা হচ্ছে, গ্রামে কৃষকরা উৎপাদন করে দেবেন আর আমরা শহরের মানুষরা কম দামে খাব, কৃষি এভাবে টিকবে না। কৃষককে তাহলে কে বাঁচাবে? তাকে (কৃষককে) ভালো একটা মূল্য দিতে হবে। এই জায়গাটা শক্তিশালী না করা গেলে কৃষি নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাবে।

কচু চাষে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল ইসলাম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরের উত্তর জয়পুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম। থাইল্যান্ড থেকে আনা ‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। চলতি বছরের কচু চাষ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এই সফল কৃষি উদ্যোক্তার।

প্রথমে প্রবাসী বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে ২৮০ টি থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা গাছ এনেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। চারাগুলো বড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে লাগানো হয়। বছর না ঘুরতেই সেই চারা থেকে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার কচুর ফলন হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এ জাতের প্রতিটি কচুর উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত এবং কাঠের ওজন ( ডাল ছাড়া মূল কচু) ৪০ কেজি পর্যন্ত  হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি লতির দৈর্ঘ ৪ ফুট ও বেড় ১২ মিলি মিটার হয়ে থাকে। বর্তমানে তার চাষকৃত একটি কচুর ওজন  ৪ মাসে ২০ থেকে ২৫ কেজি ও উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত হয়েছে এবং ৮ থেকে ১০ পিস লতির ওজন ১ কেজি হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী চার মাসের মধ্যে তার চাষ করা প্রতিটি কচু ৪০ কেজি ওজন হবে।

সিরাজুল ইসরামের কচু চাষের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা  থেকে সাধারণ মানুষ কচু ক্ষেত দেখতে ছুটে আসছেন।  তিনি  জানান ইতিমধ্যে ১০ জন চাষীকে এ কচুর চাষ করার জন্য চারা দিয়েছেন। তার কচু ক্ষেতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ঢুকে হাত উঁচু কররেও বাহির থেকে দেখা সম্ভব হয়না।

লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের  উত্তর জয়পুর দৌলত বাড়ির স্কুল শিক্ষক মরহুম আজহারুল ইসলাম মাষ্টারের তৃতীয় পুত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফিরে শখের বসে নার্সারী দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন। পশাপাশি তিনি এলাকার যুবকদের হাতে কলমে চারা উৎপাদন করা শিখাতে থাকেন। তার কাছে চারা উৎপাদন শিখে ইতিমধ্যে ৫০ জন বেকার যুবককে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।  সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে লাউ, কলা, লেবু চাষ করে যাচ্ছেন। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী সিরাজুল ইসলাম ইউটিউবে থাইগোল্ড জাতের কচুর চাষ দেখেন। পরে তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে  থাইল্যান্ড থেকে এ কচুর চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে তার উৎপাদিত কচুর লতি নিয়ে গেলে মানুষ এক নজর তার উৎপাদিত কচুর লতি দেখার জন্য ভীড় জমিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি তার ক্ষেতে উৎপাদিত কচু বিক্রি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২০টি কচু চার হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি জানান সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর কচু চাষ থেকে তার ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

এলাকার আরেক সবজি চাষী মো. শরীফ বলেন, সিরাজুল ইসলাম থেকে তিনি ইতি মধ্যে থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা নিয়ে লাগিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। তার কাছে কৃষি চাষাবাদ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জাহান বলেন, সিরাজুল ইসলামের কচুর ক্ষেত আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। এ কচুর চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবো।

;

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ২২ ব্যক্তি পাচ্ছেন এআইপি সম্মাননা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ পাচ্ছেন ২২ জন। এআইপি নীতিমালা-২০১৯ এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা হলেন- কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন- এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম।

মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।

রফতানি যোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারীর জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।

এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে ১ বৎসর। এআইপিগণ সিআইপিদের (CIP) মতো সুযোগসুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি সম্মাননা পেয়েছিলেন ১৩জন।

৭ জুলাই ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হবে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

;

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,সাতক্ষীরা
কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

  • Font increase
  • Font Decrease

উপকূল ঘেঁষা ধুমঘাট গ্রামের বাসিন্দা অল্পনা রাণী মিস্ত্রি। গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ, কর্দমাক্ত রাস্তা সবকিছু পেরিয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের এই বাসিন্দা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ ভান্ডার। পেয়েছেন শেখ হাসিনার থেকে পাওয়া পুরষ্কারও।

প্রত্নতত্ত্ব এলাকায় থেকে ও বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৫৫০ জাতের। তার বীজ ভান্ডারে রয়েছে অচাষকৃত কিন্তু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নানা উদ্ভিদ বৈচিত্রের বীজও। ২২ প্রকার শিম, আট প্রকার ডাটাশাক, ১০ প্রকার মরিচ, শতাধিক ওষুধি, ৫০-৬০ প্রকার সবজি, ২২ প্রকার অচাষকৃত উদ্ভিদসমূহ।

ছায়া সবুজময় গ্রামের মাঠে ঘাঠে দেখা যায় গরু ছাগলের বিচারণ। মাটির রাস্তার ঘ্রাণ নিয়ে অল্পনা রানীর বাড়িতে ঢুকতেই চোখে মেলে বীজ রাখার ঘর, যেখানে বোয়ামে, প্যাকেটে বা বস্তায় রাখা হয়েছে বীজ। এই বীজ দিয়েই চাষাবাদ করেন অল্পনা রানী, বিতরণ করেন গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও।

অল্পনা রানীর মতে, স্থানীয় জাতের বীজ চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। এই বীজ থেকে উৎপাদিত ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা যায়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা যায় বলে মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আমরা রাসায়ানিক সার ও কীটনাশক দেওয়া শাক সবজি খেয়ে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি। যার কারণে আমাদের জৈব পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ না করলে কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা যদি বীজ সংরক্ষণ না করি তো এক সময় আমাদের কৃষকদের কাছে কোনো প্রকার বীজ থাকবে না। ফলে আমাদের বীজ প্রয়োজন হলে তাদের কাছে হাত পাততে হবে। তাই সেখান থেকে ২০১০ সাল থেকে আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি।

এজন্য স্থানীয় কৃষকদের সাথে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সাধারণ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত সবজির খামার এবং সংরক্ষণ করে রেখেছেন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক শাকসবজি। যা সচারচর বাড়ির আনাচে কানাচে জন্মাতো কিন্তু এখন আর সেগুলো চোখে মেলে না। তবে তার বাড়ির আঙিনায় গেলে দেখা মিলবে সেইসব বিলুপ্ত প্রায় শাকসবজির সাথে।

স্থানীয় বীজ সংরক্ষণে তিনি নিজে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে বার্তা২৪.কম’কে অল্পনা রানী বলেন, ২০১০ সাল থেকে আগে দু’একটি বীজ রাখতাম। ২০১২ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আমাকে বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝায়। প্রশিক্ষণও দেয়। নানাভাবে সহায়তাও করে। বারসিকের উৎসাহ পেয়েই আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি। যা এক যুগের ব্যবধানে বীজ ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, হাইব্রিড বীজ কিনে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ঠকছে। হাইব্রিড বীজ চাষ করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে, হাইব্রিড বীজের ফসল থেকে বীজ রাখাও যায় না। এখন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষের নানা রকম রোগ বালাই হচ্ছে। আর বীজ রাখতে না পারায় কৃষক কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।

বিপরীতে স্থানীয় জাতের বীজ চাষ করতে কোনো রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেই ফসল উৎপাদন করা যায়, এর বীজও রাখা যায়, মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে- যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের মাধ্যমেই কৃষক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদাও নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য কোনো বীজই আমি হারিয়ে যেতে দেই না।

অল্পনা রানীর মতে, উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বীজ সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রতিবছর শ্যামনগর উপকূলে অন্তত দুটি করে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। এতে অনেক সময় রোপণকৃত বীজ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বীজ হারিয়ে যায়। এমন সময় কৃষকের হাতে বীজ থাকলে তিনি আরও রোপণ করতে পারেন। কিন্তু বীজ না থাকলে আবার কেনা ছাড়া উপায় থাকে না।

কীটনাশকের বদলে ফসলের ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমি নিমপাতা ও মেহগুনির ফল দিয়ে বালাইনাশক তৈরি করি। এছাড়া সহনীয় মাত্রায় ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে বা ঘুটের ছাই কিংবা তুতে ও চুন দিয়ে মিকচার তৈরি করে ক্ষেতে ব্যবহার করি। বালাইনাশক হিসেবে এগুলো খুবই উপকারী।

বীজ সংরক্ষণ ও স্থায়িতশীল কৃষি চর্চার জন্য তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভোলেননি স্বশিক্ষিত কৃষাণী ও খাদ্য যোদ্ধা অল্পনা রানী মিস্ত্রী।

তিনি বলেন, নদী পার হতে গেলে যেমন সাঁকো লাগে, বারসিক আমার জীবনে সেই সাঁকো হিসেবে কাজ করেছে। আমার জীবনে আলো দিয়েছে। জ্ঞানের আলো। যদি তারা আমাকে কোনো অনুদান দিতো, হয়তো তা খেয়ে ফেলতাম। কিন্তু তারা তা না দিয়ে আমাকে দিয়েছে জ্ঞানের আলো। এই জ্ঞানের আলোয় আমার জীবন ভরে উঠেছে। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এছাড়াও আমি ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক, ২০২০ সালে অন্যান্য পুরস্কার, উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। দেশ বিদেশের টেলিভিশন চ্যানেল আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে আসে। আমার জীবনে আর কী চাওয়া আছে?

;

হাওরে বৃষ্টির পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে গত দুইদিনের বৃষ্টিতে কিছু জমিতে পানি জমেছে। ফলে কাটা ধানগুলি জমিতে স্তূপ করে রাখছে। এমনকি ধান মাড়াই করার জায়গায় পানি জমে থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। ধান শুকানোর পরিবর্তে সবাই এখন ধান কাটাতে বেশি মনোযোগী। কারণ বৃষ্টির পানি জমে আছে বিস্তীর্ণ মাঠে। এতে ম্লান হতে বসেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।

সোমবার (৬ মে) সরজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন হাওরে কৃষকরা আগেভাগেই ভোর থেকেই ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন। 

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আর একসপ্তাহ দিনটা ভালো থাকলে ফসল নিয়ে আসতে পারতাম। একদিন ধান কাটছি আরেকদিকে মাড়াই করছি৷ শুকিয়ে ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। গতকালের শিলাবৃষ্টি ভয় তৈরি করেছে। কারণ শিলাবৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়। 


কিশোরগঞ্জে রোববার (৬ মে) রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। প্রায় পাঁচ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল তীব্র বাতাস। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে কখনো থেমে, কখনো অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে রাত তিনটা পর্যন্ত। বৃষ্টিতে স্বস্তি এলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টিতে শেষ মুহূর্তে ধানের ক্ষতি হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে কৃষকদের।

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টি পড়েছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে প্রশান্তি নেমে এসেছে। জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলায় শুরু হয় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। থেমে থেমে কয়েকদফা বৃষ্টিতে নেমে আসে স্বস্তি।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।


কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উঁচু-নিচু জমি হাওরের একটা বড় সমস্যা। অতি বৃষ্টি হলে ধান ডুবে যায়। এর ফলে কৃষকরা নিচের দিকে ধান কেটে ওপরের দিকে আসছে। আমরা আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। তাদেরকে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

 

;