অনুভব



মেহেদী হাসান
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

এই কিছুদিন হলো এক মলিন বিকেলে এক বন্ধুর আসার অপেক্ষায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি চা-স্টলে খোটখাট একটা বেঞ্চের ঠিক মাঝখানে একাকী বসে আছি। আশেপাশের লোকজন একা বা কয়েকজন মিলে এদিক-সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে নির্দিষ্ট কক্ষপথহীন ধূমকেতুগুলো যেমনভাবে মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়ায়, উদ্যানের ভেতর দিয়ে মানব-শরীরের অভ্যন্তরে স্নায়ুর মতো বয়ে চলা পিচের রাস্তাগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে কেউ কেউ হঠাৎ পরিচিত কারো দেখা পেয়ে দাঁড়ানো অবস্থাতেই গল্পে মশগুল, জায়গায় জায়গায় শূন্য ক্যানভাসে হাতের আঙুল দিয়ে ছিটে দেওয়া রঙের ফোঁটা সদৃশ্য চক্রাকারে বাঁধানো ইট-সিমেন্টের বেঞ্চগুলোতে কতক বসে আছে; দূর থেকে তাকালে মনে হয় যেন পাথরে খোঁদাই করা ভাস্কর্য, কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই কেবল তাদের জীবিতাবস্থা ধরা পড়ে। মাঝে মাঝে বাতাসে ভেসে আসছে দু-একটা উচ্চারিত শব্দ, উচ্ছল হাসির টুকরা, জুটিদের হালকা মেজাজের খুনসুটি, গাছের ডালে বসে থাকা পাখিদের ডাকাডাকি, হঠাৎ এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে যাওয়ার সময় ডানার ঝটপটানি; পাখির, মানুষের, পতঙ্গের, কীটের দু-চারটা দীর্ঘশ্বাসও বোধ হয় পড়ে থাকবে, তবে সেগুলোর কোনোটাই আমার কান পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না।

দীর্ঘশ্বাস অন্যের অস্বস্তির কারণ হতে চায় না বলেই কি পড়ার প্রায় সাথে সাথেই কৃষ্ণগহ্বর থেকে বের হয়ে আসা আলোর মতো উৎসের ভেতরেই নীরবে সেঁধিয়ে যায়, চতুর্দিকে সরবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে না? আমার-বসা-বেঞ্চটির ঠিক বিপরীত পাশের বেঞ্চটিতে একটা জুটি পরস্পরের সাথে মাথা ঠেকিয়ে রয়েছে যেন থোকায় ঝুলে থাক দুটি ডাব; দুজনেরই হাতে-ধরা-চায়ের কাপ দুটি একটা তাল বজায় রেখে কোলের কাছ থেকে ঠোঁট পর্যন্ত উঠানামা করছে অবিরতভাবে। স্টলটির সামনে—বেশ দূর পর্যন্ত দেবদারু গাছের মতো সোজা তারপর আকস্মিকভাবে বেঁকে যাওয়া পিচের সরু রাস্তাটির উপরে—তরুণ ছেলে-মেয়ের একটা জমাট দল তিক্ত মুখভাব করে চায়ের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। চায়ের অভাবে আড্ডাটা ঠিক জমে উঠবে না—এই ভয়েই বোধ হয় তারা চুপ মেরে আছে। এমনকি সবারই চোখ নিচের দিকে, পরস্পর মুখের দিকে তাকাবে—এই সাহসটুকু কেউ করে উঠতে পারছে না। এই বিশ্বচরাচরে বোধ হয় কেবলমাত্র যৌন-প্রেমই কথাহীনভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার স্পর্ধা যোগায়! যাহোক, চায়ের কাপ হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই তাদের মুখ থেকে বের হওয়া অজস্র বাক্যস্রোত অন্যদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে—এমন সম্ভাবনাই পরস্পরকে একসাথে ধরে রেখেছে, অন্যথায় বেশ আগেই হয়তো তারা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত। মুমূর্ষু বিকেলে লালচে আভা ফুটে ওঠা আকাশের কিনার ধরে দূর থেকে এগিয়ে আসা ঝাঁকবাঁধা পাখির মতো সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। নদী, খাল, বিল, হাওড়, ঝিল বা পুকুরের পানিতে ছড়িয়ে দেওয়া মাছ-ধরার-জাল যেমন জেলে লোকটির ধীর টানে ক্রমান্বয়ে গুটিয়ে আসে ঠিক তেমনিভাবে অন্ধকার গুছিয়ে আসছিল। আঁধারের জমে ওঠার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠা আমার অনস্তিত্ব-বোধটি শিরা-উপশিরা দিয়ে প্রবাহিত রক্তে নিকোটিনের অভাব বাড়িয়ে তুলতে তুলতে একপর্যায়ে আমাকে বেঞ্চে-বসা-অবস্থা থেকে মাটিতে দুপায়ের উপর দাঁড় করিয়ে দিল। স্টলের টেবিলটির সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে সিরামিকের কাপের ভেতরে স্টিলের চামচের খটখট শব্দ তুলে চা বানাতে থাকা ছেলেটির দিকে এগিয়ে যাই। চা-পিয়াসী দলটির প্রত্যেকের জন্য চা বানানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো। তারপর সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা টান দিতে দিতেও আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনা। ছেলেটার কাছ থেকে বাকি টাকা ফেরত না নিয়ে তো চলে আসতে পারি না! এরই মধ্যে অসংখ্য মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের এই মহাবিশ্বটি বা বিস্তৃত মহাবিশ্বের অন্তর্গত আমাদের এই অঞ্চলটি খানিকটা প্রসারিত হলো।

খানিকটা গোল হয়ে আসা ঠোঁটের মাঝ দিয়ে বের হতে থাকা ধোঁয়ার আধিপত্যে সামনের শূন্য জায়গার (ধোঁয়া ঘনীভূত অবস্থায় যতটুকু পথ অতিক্রম করে; ক্রমান্বয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাওয়ার সীমানা পর্যন্ত) অধিকার নিতে নিতে বেঞ্চটির বেশ খানিকটা নিকটে চলে আসতেই দেখি যে, বেঞ্চটির যে অংশটাতে আমি বসেছিলাম ঠিক সেইখানে একটি সুবেশী তরুণী বেশ আয়েশ করে বসে আছে। খানিকটা প্রসারিত দুই হাটুর ওপর কনুইয়ের ভর রাখা, মোনাজাতের ভঙ্গিতে থাকা দুই হাতের তালুর ওপর রাখা একটা স্মার্ট ফোন; যন্ত্রটির স্ক্রিনটিকে যদি মনে করি গ্রাম্য উঠান তাহলে তার বুড়ো আঙুল দুটো যেন সেখানে হুড়োহুড়ি রত দুষ্ট ছেলে-মেয়ের দল। তার দিকে একটা শরীর এগিয়ে আসছে—এটা বুঝতে পারা মাত্রই, সে হালকা নড়ে উঠল। মনুষ্যপ্রজাতির কেউ নিকটে চলে এসেছে টের পেয়ে আপন মনে মাছের কাঁটা-খেতে-থাকা বিড়াল যেমনভাবে আনত মুখ তুলে উপরের দিকে তাকায়, অনেকটা সেরকমভাবে তরুণীটি স্ক্রিনে নিমগ্ন তার চোখ দুটি আমার মুখপানে উঁচিয়ে ধরল। টর্চ লাইটের আলো ফেলার মতো করে আমি তার মুখের দিকে তাকালাম, একটা সাদাসিধে করুণ ছাপ ফেসিয়াল মাস্কের মতো সেটে আছে। আমি নিজেও তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠিক এরকমই একটা ভাব আমার মুখাবয়বের ওপর এঁটে থাকতে দেখি। আমার মনে হতে থাকে, মেয়েটি যেন আমার অস্তিত্বের একটা অংশ হয়ে কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্তও আমার দখলে থাকা জায়গাটির ওপর অবস্থান নিয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট সময় ধরে কোনো একটা জায়গা নিজের দখলে রাখে তাহলে সেই জায়গাটির ওপর তার একটা স্বতস্ফূর্ত অধিকার চলে আসে, অন্যরাও তার সেই দাবিকে খুব সহজেই স্বীকার করে নেয়। এটার একটা আইনগত ভিত্তিও আছে, আইনের পরিভাষায় ব্যাপারটিকে দখলিস্বত্ব বা ভোগসত্ত্ব (Occupancy right) বলে অভিহিত করা হয়। ওই জায়গাটির প্রতি আমার দখলিস্বত্বের দৃষ্টিতে সে যাতে কোনোরকম বিব্রত বোধ না করে—এই ভাবনায় অন্যদিকে ঘুরে গেলাম ঠিক যেমনভাবে গতি অব্যাহত রেখেই দিক পরিবর্তন করে বাঁধা পাওয়া স্রোত। এমনকি বেঞ্চের কিনারে তার পাশে বসার আকাঙ্ক্ষাটাকেও—যা আমার মন-প্রাণ জুড়ে বসেছে অল্প সময়ের মধ্যেই—শুষ্ক মৌসুমে বিলের স্বল্প পানিতে পলো বাওয়ার মতো করে চেপে ধরলাম; কোনো অপ্রত্যাশিতের কাছ ঘেঁষে আসার অস্বস্তিতে মেয়েটি যেন বেঞ্চ থেকে উঠে পড়ে অন্য কোথাও চলে না যায়—এই আশায়। আমার চারপাশের কোথাও মুখের মধ্যে অরঞ্জিত করুণ ছাপ-আঁকা এই মেয়েটির অস্তিত্ব অনুভব করতে পারাটাই আমার একমাত্র কাম্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই মুহূর্তে। যার ফলে, তাড়া আছে এমন একটা ভাব মুখের মধ্যে ফুটিয়ে তুলে—যেন আমি পাশের রাস্তা দিয়ে চলার সময় হঠাৎ থেমে সিগারেট ধরিয়ে আবার আমার গন্তব্যের দিকে রওনা দিচ্ছি—বেঞ্চের সামনে দিয়ে কিছু দূর  হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।

এই ঘটনার ফলে, পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোনো একটা দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতির সূত্রগুলো ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে বেশ পূর্বের একটা ঘটনার আকারে জ্বলে ওঠে, যা হয়তো আমার জীবনে কোনোদিন সংগঠিত হয় নি, অথবা এই ঘটনাটির তথ্যগুলোর মস্তিষ্কের বহিরাবরণে (Cortex) ছড়িয়ে পড়া এবং একীভবনের পর দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি হিসেবে নিউরনের বেশে সম্পূর্ণ মস্তিষ্কজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়ার সময় বোধ করি প্রাকৃতিক কোনো ভুলের কারণে পাল্টে গিয়ে আমার অতীত জীবনে শুকনো নদী আকৃতির অনেকগুলো ক্ষতের যেকোনো একটাতে আশ্রয় নিয়েছে। তখন আমি বেশ ছোট, গ্রামের বাড়িতে থাকি, নাগরিক জীবনে প্রবেশ করা হয়নি।  

ওইদিন ঘুম থেকে উঠতে বেশ বেলা হয়ে গিয়েছিল। আমি বিছানা ছেড়ে টুথব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে কলপাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হচ্ছি। চৌকাঠ পেরোব, ঠিক সেই মুহূর্তে দেখি, একটা চড়াই আমাদের পোষা কবুতরদের অবশিষ্ট রেখে যাওয়া ধানের খোসা ছাড়িয়ে একটা একটা করে মুখে পুরে নিচ্ছে। আমি উঠানে নেমে কয়েকটি পদক্ষেপ দিতেই—তাকে আমি তাড়িয়ে দেব, এই ভয়েই হয়তো—চড়াইটি বেশ কয়েক লাফ দূরে সরে গেল। আমার ডান হাতে ধরা ব্রাশটিকে পাখিটি বোধ হয়ে ভেবেছে তার শরীরের মাপ অনুযায়ী তৈরি করা ছোট্ট একটা লাঠি যা এক্ষুণি তার দিকে তেড়ে আসবে। তবে তার পেটে হয়তো খিদে ছিল বা ডিম থেকে সদ্য ফুটে ওঠা ছানাগুলোর জন্য তার খাবারের থলিতে আরো কিছু খোসা- ছাড়ানো-ধান (চাউল) পুরে নিতে চাইছিল, তাই সে বারবার ভীরু ভীরুভাবে লোভার্ত দৃষ্টিতে একবার ধানগুলোর দিকে আবার সদয়তার খোঁজে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিল ঘোমটা টানা গ্রাম্য-গৃহবধূদের পায়ের তালে ওঠা-নামা করতে থাকা ঢেঁকিটির মতো। সাথে সাথে, এই ছোট্ট জীবটির খুঁটে খুঁটে খাওয়ার দৃশ্য আমার কাছে পরম উপভোগ্য হয়ে উঠল। “দ্যা স্ট্যারি নাইট” শিরোনামের শিল্পকর্মটি আঁকার সময় যদি বুভুক্ষু শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগকে নিজ চোখে দেখতে পেতাম তাহলে যেমন আনন্দ হতো, ঠিক সেইরকম কিছু একটা বোধ হয় আমার ভেতর ঘটে গিয়ে থাকবে। দৃশ্যটাকে কোনোমতেই মরতে দেওয়া যাবে না, এটাকে আবার নিজ থেকেই বেঁচে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তাই প্রথমে সামনের দিকে বাগিয়ে ধরা টুথ-ব্রাশটিকে চটজলদি পেছনে নিয়ে আসি, তারপর সামনের দিকে চোখ রেখেই কয়েক ধাপ পেছনে হেঁটে চৌকাঠের পাশে এসে দাঁড়াই। আমার পেছন দিকে চলে আসায় অভয় পেয়ে খুদে প্রাণীটি ছোট ছোট লাফে ফিরে আসতে শুরু করে, আর ওদিকে আমি পাখিটির ফিরে আসার সাথে তাল মিলিয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ি। প্রথম চড়াইটার দেখাদেখি আরো কয়েকটা মাটিতে নেমে আসে, তারপর হেঁটে হেঁটে, লাফিয়ে লাফিয়ে, একটু একটু উড়ে উড়ে ছড়ানো ধানের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। পাখিগুলোর ছড়ানো ধানের কাছে আসার এবং অন্য চড়াইদের উঠানের অন্যপ্রান্তের ছায়াময় স্থান থেকে, ঘরের টুঁইয়ে বাঁধা তাদের বাসা থেকে, আমগাছের শাখা থেকে এসে যোগ দেওয়ার সমানুপাতিক হারে ঘরের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিলাম, যাতে আমার শারীরিক অস্তিত্ব ওদেরকে ভয় পাইয়ে না দেয়, স্বাচ্ছন্দে ধান খেতে পারে। পেছনে হাঁটতে হাঁটতে একসময় আমি বুঝতে পারলাম, ঢেউখেলানো টিনের বেড়ার সাথে আমার পিঠ লেগে গেছে। বলা হয়, জনগণের পিঠ নাকি দেয়ালে গিয়ে ঠেকলে সে আর কোনো উপায়ান্তর না দেখে জীবনাবসনের শঙ্কা জেনেও ক্ষ্যাপার মতো সামনের দিকে অগ্রসর হয়, তবে আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা হলো। আমার পেছনদিকটা টিনের বেড়ার সাথে এমনভাবে আটকে রইল যেন ওটা আমার শরীর একটা অংশ হয়ে উঠেছে, আর আমার সামনে তো কোনো বিপদ ছিল না, ছিল শুধু সুন্দরের পুনরাবৃত্তি।

যাহোক, ঘরের এই জায়গাটুকুতে সূর্য সরাসরি তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, দরজা খোলা পেয়ে ঘরের ভেতর একফালি জমির আকারে ঢুকে পড়ে ধান ক্ষেতের আলের ভেতর দিয়ে সেচের পানির মতো চুইয়ে গিয়ে ভেতরের দিকের অন্ধকারকে খানিকটা নরম করে তুলেছে মাত্র। নিঃসঙ্গে ও অস্পষ্ট আঁধারে দাঁড়িয়ে আমার সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে আলোতে অনেকগুলো চড়াইয়ের সরু সরু পা-দুটি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলার ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে থাকি, অন্ধকার বেষ্টিত স্থানে বসে দর্শকরা যেমন নিজেদের ভেতরে একা হয়ে গভীর তন্ময়তায় দৃশ্য-শিল্পের স্বাদ গ্রহণ করে। আঁধারের গহ্বরে একলা না হলে বুঝি শৈল্পিকতা আস্বাদন করা যায় না!   

ঘটনাটি হয়তো বাস্তবের, না হয় কল্পিত। তবে আমার শুধু মনে হয়, ওইদিন চড়াইগুলো বোধ হয় বাহিরের খরখরে রৌদ্রে নয়, বরঞ্চ আমার ভেতরের কোনো এক আলো ঝলমলে স্থানে স্বাচ্ছন্দে বিচরণ করেছিল; আর অন্ধকার আমাকে ঘিরে রেখেছিল স্বল্পব্যাসার্ধ বৃত্তের মসৃণতায়।

   

শ্রীপুরের কাওরাইদে নজরুল উৎসব শনিবার



ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘ভাগ হয়নিকো নজরুল’ শীর্ষক নজরুল উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে এবং নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় এই উৎসবে সেমিনার, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতীয় কবির বর্ণাঢ্য জীবন ও সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে।

নেতাজী সুভাষ-কাজী নজরুল স্যোশাল অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর অন্যতম ট্রাস্টি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক জানান, আয়োজনের শুরুতে শনিবার দুপুর ২টায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সুনীল কান্তি দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. সাইম রানা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস ও ছায়ানট (কলকাতা)’র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক।

তিনি আরও জানান, বিকেলে আয়োজনে নজরুলের জাগরণী কবিতা ও গান পরিবেশন করবেন দেশের বরেণ্য শিল্পীরা। আবৃত্তি করবেন-টিটো মুন্সী ও সীমা ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার।

‘দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে নজরুল চর্চা বেগবান করতে এই উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবছর কবি নজরুলের ১২৫তম জন্মবর্ষ। এই বছরটি নজরুলচর্চার জন্য খুবই সবিশেষ। উৎসবে দুই দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে সাময়িকী। সাম্য, মানবতা ও জাগরণের যে বাণী কবি সৃষ্টি করে গেছেন, সমকালীন ক্ষয়িষ্ণু সমাজের জন্য তা আলোকবর্তিকা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নজরুলের এই আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা’-বলেন আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। 

;

শিশু নজরুল



এ এফ এম হায়াতুল্লাহ
কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম। ছবিটি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী থেকে সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারত। এটি বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনের দিক দিয়ে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বহুজাতির বহু মানুষের বাস সে দেশে। ঐ দেশ অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত। এই প্রদেশগুলোকে বাংলা ভাষায় রাজ্য বলে অভিহিত করা হয়। এই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত তদানীন্তন বাংলা প্রদেশের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর পশ্চিমাঞ্চল ‘পশ্চিম বঙ্গ’ নামে ভারতের অন্তর্গত রয়ে গেছে।

এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার অধীন আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত জামুরিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে এবং ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে জন্মলাভের পর একটি শিশুর কাজী নজরুল ইসলাম নাম রাখেন যে পিতা তার নাম কাজী ফকির আহমদ। আর যে মায়ের কোলে তিনি জন্মান তার নাম জাহেদা খাতুন। এই শিশুটির জন্মের আগে এই পিতামাতার আর-ও ৪ জন সন্তান জন্মের সময়ই মারা গিয়েছিল। শুধু তাদের প্রথম সন্তান কাজী সাহেবজানের বয়স তখন ১০ বছর। অর্থাৎ কাজী নজরুলের সর্বজ্যেষ্ঠ বড় ভাই শিশু কাজী নজরুলের চাইতে ১০ বছরের বড় ছিলেন। নজরুলের পর তার আর-ও একজন ভাই ও বোনের জন্ম হয়েছিল। ভাইটির নাম ছিল কাজী আলী হোসেন এবং বোনটির নাম ছিল উম্মে কুলসুম।

শিশু নজরুলের পিতা কাজী ফকির আহমদ বই-পুস্তক পড়তে পারতেন। তিনি স্থানীয় মসজিদ ও মাজারের সেবা করতেন। রাজ্য শাসকগণ কর্তৃক বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ অর্থাৎ বিচারকগণ উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতেন। মুসলমান সমাজ থেকে বিচারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাজী বলা হত। মুসলমান সমাজে কাজীগণ অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন। নজরুল ইসলাম এইরূপ সম্মানিত পরিবারে জন্মপ্রাপ্ত এক শিশু। তাই জন্মের পর ক্রমশ বেড়ে উঠার পর্যায়ে তিনি পারিবারিকসূত্রেই ভাল-মন্দের পার্থক্য করার এবং হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত হয়ে সকলকে সমভাবে ভালবাসার গুণাবলি অর্জন করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে যে-সমস্ত মহাপুরুষ বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অধিকাংশই শৈশব থেকে নানারূপ দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়ে সেগুলো জয় করে মহত্ত্ব অর্জন করেছেন। তাদের কেউই একদিনে বড় হয়ে যাননি কিংবা বেড়ে-ও উঠেন নি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) জন্মানোর আগেই পিতাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে হারিয়েছিলেন জন্মদাত্রী মাকেও। নজরুল তার পিতাকে হারান নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে। পিতা তাকে গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার দিনে পড়াশোনা করার জন্যে সরকারি ব্যবস্থা ছিলনা। বাংলাদেশের তখন জন্ম হয়নি।

বিশেষ ভঙ্গিমায় হাবিলদার নজরুল

নজরুলের জন্মভূমি বাংলা প্রদেশ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য যা ছিল বিদেশী ব্রিটিশ শাসনাধীন তথা পরাধীন। ব্রিটিশ শাসকরা এদেশের সাধারণ মানুষ তথা প্রজাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেনি। কারণ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে-তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হয়-তারা পরাধীন থাকতে চায় না-স্বাধীনতার প্রত্যাশী হয়। বিদেশী শাসক ব্রিটিশরা সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত না করায় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করত। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রধানত মাতৃভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত। এইসব প্রতিষ্ঠান মক্তব নামে পরিচিত হত। এগুলো পরিচালনার ব্যয় অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন মক্তব প্রতিষ্ঠারাই দান, সাহায্য ও অনুদান সংগ্রহ করার মাধ্যমে নির্বাহ করতেন। গ্রামীণ একটি মক্তবে নজরুলের পাঠগ্রহণ শুরু। তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর।

একবার কিছু শোনে ও দেখেই তিনি তা মনে রাখতে পারতেন। কিন্তু শিশুসুলভ সকল প্রকার চঞ্চলতা-ও তাঁর ছিল। পিতৃবিয়োগের পর সেই চঞ্চলতার যেন ছেদ পড়ল। তার মেধাগুণে তিনি হয়ে উঠলেন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সেই মক্তবেরই শিক্ষক। একজন শিশু শিক্ষক। এক শিশু পড়াতে লাগলেন অন্য শিশুকে। উদ্দেশ্য নিজের অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। নিজেকে অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া। কিছু দেয়ার মাধ্যমে আনন্দ লাভ-যে আনন্দ মহৎ।

তার ভেতরে ছিল এক ভবঘুরে মন। মক্তব ছেড়ে ভর্তি হলেন উচ্চ বিদ্যালয়ে-মাথরুন নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে। স্থিত হলেন না সেখানে। গ্রামীণ নিসর্গ, প্রকৃতি, ঋতুচক্র যেমন তার মনকে প্রভাবিত করে, অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার নিরন্তর কৌতূহল-ও তাকে আন্দোলিত করে। ঘরছাড়া স্বভাবের এই শিশু অন্য সকল মানুষের জীবন ও সংগ্রামের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ঘর তাকে বাঁধতে পারে না। বিশাল আকাশকেই তার মনে হয় তার মাথার ওপরে খাঁচার মত উপুড় হয়ে তাকে আটকে রেখেছে। তাই তিনি মনে মনে ‘ভূলোক, গোলোক ও দ্যুলোক’ ছাড়াতে চাইতেন কেবলÑনিজেকে মুক্ত করতে চাইতেন। মনের আহ্বানে সাড়া দিতেন, গান শোনাতেন, শুনে শুনে গাইতেন।

তারই পরিক্রমায় গ্রামীণ লোক-নাট্য ‘লেটো’ গানের দলে যোগ দিলেন। সেখানেও তার দলপতি উস্তাদ শেখ চকোর গোদা ও বাসুদেব তাকে সেরাদের ‘সেরা’ বলে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি শুধু লেটোর দলে গানই গাইলেন না। গানের পালা রচনা করলেন। ‘ মেঘনাদ বধ’, ‘হাতেম তাই’ ‘চাষার সঙ’, ‘আকবর বাদশা’ প্রভৃতি পালা রচনা করতে যেয়ে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বেদ যেমন পড়লেন, তেমনি পড়লেন কোরান-হাদিস, ইতিহাস-কাব্য প্রভৃতি। মক্তব-বিদ্যালয় ছেড়ে হয়ে গেলেন প্রকৃতির ছাত্র।

কিন্তু আগুন যে ছাই চাপা থাকে না। প্রতিভার আগুনের শিখা দেখে ফেললেন পুলিশের এক দারোগা, যিনি নিজেও কাজী বংশের সন্তান, রফিজুল্লাহ। চাকরি করেন আসানসোলে। কিন্তু তার জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলা। নি:সন্তান রফিজুল্লাহ মায়ায় পড়ে গেলেন শিশু নজরুলের। নিয়ে এলেন জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ভর্তি করে দিলেন দরিরামপুর হাই স্কুলে। কেমন ছিলেন তিনি এখানে ? জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে-মাতৃআঁচল ছিন্ন পিতৃহীন শিশু! সহপাঠীরা কেউ লিখে রাখেন নি।

১৯১১ সনে ময়মনসিংহে আনীত হয়ে থাকলে পেরিয়ে গেছে একশত তের বছর। সহপাঠীদের কেউ বেঁচেও নেই। কিন্তু বেঁচে আছে নানারূপ গল্প ও কল্পনা। বড় বড় মানুষদের নিয়ে এমনই হয়। তাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক কাহিনী তৈরী করা হয়। মানুষ জীবনের গল্প শুনতে ভালবাসে। তাই জীবন নিয়ে গল্প তৈরী হয় কিন্তু তা জীবনের অংশ না-ও হতে পারে। কেউ বলেন নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক বছর ছিলেন, কেউ বলেন দেড় বছর, কেউবা দু’বছর। প্রথমে ছিলেন কাজী রফিজুল্লাহ’র বাড়ি। এরপরে ছিলেন ত্রিশালের নামাপাড়ায় বিচুতিয়া বেপারির বাড়ি। এই দু’বাড়িতে থাকা নিয়ে অবশ্য কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু তর্ক আছে তার প্রস্থান নিয়ে।

কেউ বলেন তিনি স্কুল-শিক্ষকের কাছে সুবিচার না পেয়ে, কেউ বলেন অভিমান করে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কাউকে না বলেই চলে গিয়েছিলেন এটাই প্রতিষ্ঠিত মত। কিন্তু গেলেন কোথায় ? সেই জন্মস্থানে। তবে এবার চুরুলিয়া থেকে বেশ দূরে রাণীগঞ্জের শিহাড়সোল সরকারি স্কুলে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভর্তি হলেন অষ্টম শ্রেণিতে। ১৯১৫ সন। পড়াশোনা করলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা। নজরুলের চঞ্চলমতি, ঘরছাড়া ও ভবঘুরে স্বভাবের জন্যে যেন বেমানান। প্রতিটি ক্লাসে প্রথম হলেন।

মেধাবী বলেই নিয়মিত মাসিক ৭ টাকা বৃত্তি পেতেন। ঐ সময়ের হিসাবে মাসিক ৭ টাকা অনেক টাকা। মাসিক ৩ থেকে ৪ টাকায় সকল প্রকার থাকা-খাওয়ার ব্যয় মিটিয়ে অনায়সে চলা যেত। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এন্ট্রান্স বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা। সে প্রস্তুতি চলছে। নিচ্ছেন-ও। হঠাৎ ব্রিটিশ শাসকদল কর্তৃক যুদ্ধযাত্রার ডাক। কিন্তু প্রলোভন দেখানো হলো যে ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জিততে পারলে ভারতবর্ষকে মুক্ত করে দিয়ে যাবে। জন্মাবধি স্বাধীনতা ও মুক্তি-প্রত্যাশীর হৃদয়ে নাড়া দিল। তিনি সাড়া দেবেন কিনা দোদুল্যমান। কিন্তু কপট ব্রিটিশ জাতি বাঙালিকে উত্তোজিত করার নিমিত্ত অপবাদ ছড়ালো যে বাঙালিরা ভীরু।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার কবিভবনে নজরুল

তারা লড়তে, সংগ্রাম করতে, যুদ্ধে যেতে ভয় পায়। স্বল্পকাল পরের (১৯১৭ সালের মাত্র চার বছর পর লিখিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সনে) বিদ্রোহী কবির রক্ত ক্ষোভে নেচে উঠলো। কে রুখে তার মুক্তির আকাক্সক্ষা! বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে নাম লিখিয়ে বাস্তব যুদ্ধযাত্রা করলেন। গন্তব্য করাচি। ১৯১৭-১৯১৯ সাল অব্দি কঠোর সৈনিক জীবন। সুকঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যেই সাধারণ সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি আরবি-ফার্সি সাহিত্যে অধ্যয়নসহ সঙ্গীতে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য মহাকালের এক অবিস্মরণীয় কবি-শিল্পী হিসেবে নিজেকে নির্মাণের ক্ষেত্রে করাচির জীবনই ছিল এক সাজঘর। যুদ্ধযাত্রার পূর্ব পর্যন্ত নজরুল শিশু। কিন্তু যুদ্ধফেরত নজরুল এক পরিপূর্ণ তরুণ ও চিরকালীন শিল্পী-যার মন ও মানস শিশুর মত আজীবন নিষ্পাপ।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট 

;

বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন: পূর্ণ স্বীকৃতি কতদূর?



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন বলতেই বুঝি বৃটিশ শাসন পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে ১৯৪৮-এ শুরু হওয়া এবং বায়ান্নর অমর ভাষা শহীদদের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে। একুশে ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর ভাষা আন্দোলনের জন্য একটি দিক নির্দেশক দিন। সেই আন্দোলনের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার বাঙ্গালীরা। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দানা বাঁধে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলন। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবর্ণনীয় কষ্ট আর সমুদ্রসম আত্মত্যাগ এবং অসীম বীরত্বের ফলশ্রুতিতে আমরা পাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

এর বহু পরে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বাংলাদেশী কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম এর নেতৃত্বে পৃথবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অফ দি ওয়ার্ল্ড গঠিত হয় কানাডার ভ্যাংকুভারে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দিনটি বিশ্বসভায় আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনের জাতিসংঘ ঘোষিত অঙ্গিকার বিশ্বের প্রতিটি ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিদ্যমান প্রায় ৭০০০ ভাষার একটিকে ও আর হারিয়ে যেতে না দেয়া। ইতিমধ্যে আধিপত্যবাদের কারণে ও সচেতন মহলের সচেতনতার অভাবে বহু ভাষা, সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব ও ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে মুছে গেছে।

কাজেই আমাদের বুঝতে হবে, ভাষা আন্দোলনের স্বর্ণখচিত ইতিহাস ও সাফল্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বাংলাদেশের ((তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বাঙ্গালীরাই ভাষার জন্য সংগ্রাম করা ও প্রাণ দেয়া একমাত্র জাতিগোষ্ঠী নই। অর্ধ সহস্রাব্দের আগে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দক্ষিণ আমেরিকার মায়া,আজটেক,ইনকা নামের তৎকালীন উন্নত সভ্যতার জাতিসমূহকে জেনোসাইডের মাধ্যমে ধ্বংস করে দিয়েছে।প্রতি মায়া লোকালয়ে একটি করে পাঠাগার ছিল। এইরকম দশ হাজার লোকালয়ের পাঠাগারের সব বই তারা ধ্বংস করে দেয়। আজকের দিনে মাত্র আদি মায়া ভাষার তিনখানা বই (মেক্সিকো সিটি,মাদ্রিদ ও ড্রেসডেনে) সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধ করেও মায়ানরা পাঠাগারগুলো বাঁচাতে পারেন নি। সাথ সাথে ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা।

বাংলাভাষী জনগণের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় উল্লেখ্যোগ্য অবদান রয়েছে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সাঁওতাল পরগণার অন্তর্গত মানভূমের বাঙ্গালীদের। বহু বছর সংগ্রাম,রক্ত ও জীবনের মূল্যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনেকটা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলনের সূচনা আসামের কাছাড়ে।বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া প্রথম মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ এগার তরুন প্রাণ ঝড়ে পড়েছে এই আন্দোলনে।

১৯৬১-তে আসামের বরাক উপত্যকার বাঙালি জনগণ তাদের মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে শামিল হয়। যদিও বরাকের সিংহভাগ জনগণ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,তবুও ১৯৬১-তে অহমিয়াকে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ফুসে ওঠেন বরাকের বাঙ্গালীরা।বাংলাভাষা বরাক উপত্যকার অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।

মানভূম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ। সাঁওতাল পরগণার মানভূম জেলা বাঙালি অধ্যুষিত হলেও তা দীর্ঘকাল বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের স্বাধীনতার পর সেখানে হিন্দি প্রচলনের কড়াকড়িতে বাংলা ভাষাভাষীরা চাপের মুখে পড়েন। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁরা। ১৯৪৮ থেকে দীর্ঘ আট বছর চলা এই আন্দোলনের সাফল্যে ১৯৫৬ এর ১ নভেম্বর মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় পুরুলিয়া জেলা। বিহার থেকে নিয়ে পুরুলিয়াকে যুক্ত করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাথে। তাঁদের মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁদের সামনে।

এবারে আবার ফিরি ১৯ মে'র ইতিহাসে। আসামের বরাক উপত্যকা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। একসময় এই এলাকার অধিকাংশ ডিমাসা জনগোষ্ঠীর কাছাড় রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ডিমাসা রাজন্যবর্গ ও বাংলাভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কালক্রমে ব্রিটিশরা ভারত বিভাগ করে চলে গেলে আসাম প্রদেশের একাংশ সিলেট পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। সিলেটের একাংশ ও ডিমাসা পার্বত্য ও সমতল অঞ্চল নিয়ে কাছাড় জেলা গঠিত হয়। এই জেলা বর্তমানে বিভক্ত হয়ে কাছাড়,হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জ ও উত্তর কাছাড় পার্বত্য জেলা (ডিমা হাসাও)এই চার নতুন জেলায় রূপ নিয়েছে।

১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার অধিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। আসাম অহমিয়াদের জন্য এবং বাঙ্গালীরা সেখানে বহিরাগত এমন বক্তব্য ও ওঠে। এখনও সেই প্রবণতা বিদ্যমান। জাতীয়তাবাদের জোয়ারে এক শ্রেণির রাজনীতিবিদরাও গা ভাসান। বঙ্গাল খেদা আন্দোলনও গড়ে ওঠে একসময়ে। সরকারিভাবে সেসব আন্দোলন ও সহিংসতা দমন হলেও পরবর্তী কালে সময়ে সময়ে এই জাতীয় সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।

আসাম রাজ্য বিধান সভায় ভারতের স্বাধীনতার পর পর সদস্যরা বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতে পারতেন।প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। অহমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা ঘোষণা, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুর চেষ্টা এবং বিধানসভায় বাংলায় বক্তব্য রাখার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আইন চালুর বিরুদ্ধে আসামের বাঙ্গালী জনগণ দল-মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আসাম রাজ্য সরকার কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে গেলেন না। তাঁরা অহমিয়া জাতীয়তাবাদ এর সংকীর্ণ মানসিকতার নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীরাও সংগঠিত হতে থাকেন।

অনুমান করা যায় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বাহান্নর ঢাকার ভাষা আন্দোলন ও মানভূমের ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।১৯৬০ সালের শেষে আসাম বিধান সভায় ভাষা বিল পাশ হয়। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেলো। বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলেন। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলো।সত্যাগ্রহ,অসহযোগ, হরতাল, রেল রোখো,সংকল্প দিবস, ইত্যাকার অহিংস আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল বরাক উপত্যকা। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯মে তারিখে বরাকের কেন্দ্রবিন্দু শিলচরের রেলস্টেশনে ভোর থেকে আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীরা জড়ো হয়। হাজার হাজার ছাত্র যুবা জনতা রেলস্টেশন প্রাঙ্গন ও রেললাইনের উপর অবস্থান নেয়। তাঁদের সরাতে না পেরে সরকার নির্মম দমননীতির আশ্রয় নেয়। পুলিশ বাহিনী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিহত হন পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য সহ মোট ১১ জন ছাত্র যুবা। তাঁরাই একাদশ ভাষা শহীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা দ্বিতীয় রাজ্যভাষার মর্যাদা পায়। শিলচর রেলস্টেশনের সামনে স্থাপিত হয় শহীদদের প্রতিকৃতি সম্বলিত শহীদ মিনার। যার পথ ধরে পরবর্তী কালে ছড়িয়ে পড়ে একই আকৃতির শহীদ মিনার সমগ্র বরাক উপত্যকায়। শিলচর রেলস্টেশনের নাম পাল্টে জনতা ভাষা শহীদ রেল স্টশন নাম রেখেছেন। যদিও পূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি এখনও তার মেলেনি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একাদশ শহীদ সহ আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সব এলাকার বাঙ্গালিরা কি এই ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন? উত্তরটি ‘না’ সূচক। আমাদের কর্তব্য তাঁদের আত্মত্যাগের কাহিনী সকলকে জানানোর উদ্যোগ নেয়া যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হতে শেখে। বরাক উপত্যকার একাদশ ভাষা শহীদ অমর রহে। বাংলা সহ সকল মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকুক।

এখনও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকেই বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন নেতৃত্ব দেয়াদের মধ্যে অনেকে। সাথে সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের ও সন্ধান পাওয়া এখনও কষ্টকর নয়। তবে সামনের সিকি শতাব্দীর মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মেই তাঁরা আর আমাদের মাঝে থাকবেন না। এখনই প্রকৃষ্ট সময় তাঁদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে রাখার। পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া প্রয়োজন সেই আন্দোলন,তার কুশীলব এবং শহীদ পরিবার সমূহের বিষয়ে। বীরের সন্মান উপযুক্ত ভাবে হওয়া প্রয়োজন। বাংলা ভাষার এবং বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মর্যাদা বিশ্বব্যাপী সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক বীরের আমাদের প্রয়োজন। যে মাটিতে বীরের যথাযোগ্য সন্মান নেই, সে মাটিতে বীর জন্মায় না।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;