সেমেটিক ডেথ



ক্যামেলিয়া আলম
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের রাস্তায় আগুনের হলকা দেওয়া মধ্যদুপুরে স্টেনগানের শব্দে ব্রেক কষা গাড়ির নিচে কৃষ্ণচূড়ার ফোয়ারা ছুটল, মারা গেল মণিষা। কনকর্ড টাওয়ারের গার্ড রহিম মিয়ার চোখ ছিল রাস্তায় অপলক কিন্তু দেখছিল মাটির চুলায় লালচে মুখের বউটিকে। বেশ কতগুলো খালি রিকসা অলসমুখে দাঁড়ানো এনা ভবনের কাছে। যার বিপরীত দিকেই সালামের চায়ের ভ্যানে থরেথরে সাজানো পুদিনা পাতা, ছোট লেবু আর মাল্টা। বিপরীত মুখ থাকায় ঠিক একসিডেন্টের সময়টি চোখে না পড়ার আফসোস নিয়ে আস্তে আস্তে জমে থাকা ভিড়ের দিকে উৎসুক দৃষ্টি মেলে ধরে সালাম মিয়া। তার চোখে পড়ে শুধু পাতালে কোলের মেয়েটির টপটপ করে পড়া রক্তের মাথা। ছোট চুলের মাথাটিকে এক ঝলক তাকিয়েই সালাম চিনতে পারে। যে কিনা প্রায়ই আসে তার কাছে মাল্টা চা খেতে। নামধাম কিছুই বলতে পারে না। চা চায় হাসিমুখে, এরপরেই গভীর মন দিয়ে চা খায় রাস্তা দেখতে দেখতে। কোনোদিন চা শেষ হতে না হতেই মোবাইলের শব্দে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করে ব্যস্ত হাতে চায়ের বিল মিটিয়ে চলে যায় রাস্তার ওপারে। হাজার ব্যস্ততায় মেয়েটির গমন পথ কখনোই দেখা হয় না সালামের। সে পুবে যায় না পশ্চিমে, এমনকি ঠিক কোনদিক থেকে এসে দোকানের সামনে দাঁড়ায় তাও কোনোদিন খেয়াল করেনি। তবু নাম না জানা ভীষণ চেনা আপার খুলির টপটপ রক্ত সালামকে অস্থির করে। পাশের মুড়ি বুটের রুপালি ভ্যানের শেফালিরে ডেকে বলে, দেইহা আহি, দোকানখান নজর রাইখেন। উত্তরের আশা না করেই সালাম দৌড়ে ভিড়ের সাথে আগায়।

মেয়েটিকে কোলে নেওয়া রায়হান, যে কিনা হোটেল ক্যাপিটালে এসে আজই উঠেছিল ময়মনসিংহ থেকে। পান্থপথের আরিফ এন্ড কোং-এ চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। পেছনে পাংশু ফ্যাকাসে চেহারার ড্রাইভার মতিন মিয়া, যার গাড়ির চাকায় কৃষ্ণচূড়ার চাকা চাকা রঙ। গাড়ির ভেতরে ভয়ার্ত আর জলে ভেজা চোখের শরীফার ভারী শরীর। ৫৫ বছর বয়সী শরীফা জীবনে রক্ত দেখতে শেখে নাই। মুরগী কাটার দৃশ্য যে কিনা দেখে না, কোরবানি ঈদের দিন কানে তুলা দিয়ে ভারী পর্দা দিয়ে জানালা ঢাকে, তার গাড়ির নিচেই কিনা জলজ্যান্ত এক ফুটফুটে মেয়ে। যার মোমরঙা গায়ের রঙ। ছোট চুলের মেয়েটির চুইয়ে পড়া রক্ত কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে শরীফার শরীরে। বিড়বিড় করে অন্তরের সমস্তটা দিয়ে আল্লাহর কাছে ভিক্ষা চায় মেয়েটির জীবন। তবু চলে যায় মণিষা রায়হান। আজ যেন যাবার কথাই ছিল তার। নাহয় কেন তার আজকের কপালটিই থাকবে চন্দ্রবিহীন। টিপ পরতে ভীষণ ভালোবাসত।

টিপ ছাড়া রাস্তায় নামার কথা খুব একটা স্মরণে আসে না শিহাবের। শিহাবের কাছে অচেনা এক নাম্বার থেকে ফোন আসে ঠিক ৪ টা ৫৫ মিনিটে। কলাবাগান থানা থেকে। পরে বহুবার শিহাব ভেবেছে একটা কথা, পুলিশ ঠিক কী কারণে তার নাম্বারে ফোন দিয়েই জিজ্ঞাসা করল, মণিষা তার স্ত্রী কিনা? শিহাবের নাম্বার কি মণিষা বর হিসেবে সেইভ করেছিল? মণিষার ব্যস্ত জীবনে শিহাব তো ছিল অপাঙ্ক্তেয়। বেদনা, ঘৃণার মিশ্র এক ভারী বলের চাপ অনুভব করে বুকের মধ্যখানে। মণিষা মারা যেতে পারে কোনোদিন তা ভাবেনি শিহাব। মানুষ মারা যাচ্ছে, যাবে, এই সত্যটি জানে। কিন্তু তাই বলে মণিষা মারা যাবে! যেতে পারে। তা ভাবনারও অতীত ছিল শিহাবের। অফিস থেকে সে চারবারের বার যখন ফোন রিসিভ করল একরাশ বিরক্তি নিয়ে। তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, মণিষা তার স্ত্রী কিনা? এরপরেই ভনিতা না করে তাকে বলা হলো, তার স্ত্রী মারা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলে সনাক্ত করা হয়েছে। স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আছে। শিহাবের জানা ছিল না, দূর থেকে কাউকে ফোন ধরেই মারা যাবার কথা বলা যায়। আর তা মণিষার। যার মারা যাওয়া অসম্ভব শিহাবের কাছে। তাদের প্রায় ২০ বছরের সংসার। এক ছেলে আর এক মেয়ে। মণিষা মারা যাবে আর তা হবে আত্মহত্যা। এরপরের ঘটনা শুধুই ঝড়ের কবলে পড়া চড়ুই পাখির মতন। বাসায় আর মণিষার ফ্যামিলিকে দ্রুত ফোন দিয়ে হাসপাতালে আসা। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বহু টাকায় মিটমাট হওয়া আত্মহত্যা একসিডেন্ট হিসেবে সাধারণ ডায়েরি করে বেরিয়ে প্রায় ভোর তিনটা নাগাদ এম্বুলেন্সে করে মণিষার দেহ নিয়ে বাসায় যখন, তখন শিহাবের শরীর অসাড় হয়। যদিও মিটমাট সহজ হলো মণিষার বাবার জন্য। যার নিজের জামাতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে বলে একবারও বিশ্বাস করাতে পারল না জামিল রায়হানকে। শুধুই বলে, আপনাদের ভুল হচ্ছে। তখন কাঁদো কাঁদো ড্রাইভার মতিন মিয়া শিহাবের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, আমারে এত বড় কেসে ফাঁসাইয়েন না। রাস্তা ছিল খালি। আমি গাড়ি ৫০-এ চালাইতেছিলাম। আইল্যান্ডে ওই নারী খাড়ায় আছিল। খালি পাইয়াও রাস্তা পার হয় নাই। ঠিক আমার গাড়ি আসার পরে পরেই ঝাপ দিল গাড়ির সামনে। আমি সাথে সাথেই ব্রেক কষছি। প্রায় ১৩ বার একই কথা বলে যায় মতিন মিয়া। লজ্জায় ভয়ে কুঁকড়ে যেতে থাকে শিহাব। মণিষার আত্মহত্যা মানেই সামাজিক খলনায়কের নাম শিহাব। শিহাব তো মারতে চায়নি। তবু তার কেন অভিমান হয়? দলা পাকানো অজগরের কষ্ট সারা শরীর বেয়ে ফোঁসফোঁস করতেই থাকে শিহাবের। সেই রাত পার হলে পরদিন সকাল ৮টায় নিয়ে যাওয়া হয় মণিষাকে। দুইদিন আগে ঝগড়া হয়েছিল। গত ২০ বছর একই রকম ঝগড়া চলে তাদের। শিহাব তো বরাবরই এগ্রেসিভ। কিন্তু রাগ কমে গেলে ভালো ব্যবহার কি পায়নি মণিষা? ২০ বছরের কত জমানো কষ্টের কথা কাটাকাটির পাশে আনন্দের সময়ও কি যায়নি! স্মৃতিগুলো চাবুক মারতে থাকে শিহাবের সারা শরীর জুড়ে।

মণিষা খুব বহির্মুখী মেয়ে। বিয়ের সময়ে ওর চপলতা মুগ্ধ করলেও ওর ঘরের বাইরের কাজগুলো নিয়ে ধীরে ধীরে অশান্তি বাড়তে থাকে শিহাবের। একেবারেই স্থিরতা নেই মেয়েটির। ইস্কুলে মাস্টারি করার পাশে পাশে তার লেখালেখি করতে হবে, সিনেমা বানাতে হবে, বন্ধুদের সাথে নিয়মিত আড্ডা দিতে হবে, কবিতার ক্লাস করতে হবে, নাটক করতে হবে, এরপরেও ছুটি পেলেই ক্লান্তিকর ঘ্যানঘ্যানানি, বাচ্চাদের নিয়ে অমুক জায়গায় চলো, তমুক জায়গায় চলো, চলো সিনেমা দেখি, নাটক দেখি। বিয়ের পরপর কিছুদিন প্রশ্রয় দেয়ায় মাথায় উঠে বসল। শিহাবের মনে হলো, মণিষার বোধ বলে কিছুই নেই। শুধুই ছুটছে। স্থিরতার সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা তার নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাধার খাটনি খেটে সপ্তাহে দুইদিন সারাদিন ঘুমাবে, পত্রিকা পড়বে, টিভির টক-শোগুলো মন দিয়ে দেখবে বা ভালো কোনো মুভি। আর নাহয় গা এলিয়ে শুয়ে টানা গান শোনা। পুরনো গানগুলো এখনো টানে শিহাবকে। ভালো লাগায় সময়কে। এইরকম আয়েশি এক দিন ছেড়ে সারাসময়ই ছুটছে তো ছুটছেই। স্বভাবজাত গালি আসে মুখে, আর তখনই ভাবে, মৃত মণিষাকে গালি আর দেয়া যায় না। দেবার বিধান নেই। ইচ্ছেও নেই। উড়নচন্ডীটার মাথায়ও দোষ ছিল। বিয়ের পরের রাতেই বুঝেছিল। শারীরিক ধকলের পর একটু ঘুমাতে না ঘুমাতে গভীর রাতে তুলে দিয়ে বলে, চলো, বৃষ্টি দেখি। পাগলের পাগল! কী যে আনন্দ পেত আজব কাজগুলোয়? গল্প করার বিষয়ও ছিল ওর অদ্ভুত। গল্প, কবিতা কোনো বিষয় হলো কথা বলার? কিছুতেই মাথায় আসত না। নিজের সুখ দুঃখের কথা বলা শুরু করলেই বিরক্ত হতো! জীবন ছেড়ে ভাবের জগত নিয়ে থাকা কি মানুষের কাজ? বিরক্তিতে কুঁকড়ে ওঠা শিহাবের মনে হয়, এত দোষ নিয়েও মণিষার সাথে ঘর করছে শিহাব। তা মণিষা বোঝে কখনো? ঠিক এই সময়টাতেই শিহাবের চিন্তা থমকায়। উঁকি দেয় আরেক কথা, মণিষাকে কখনো আপন মনে হয়নি, তবু মণিষার কাছে কী যেন এক ছিল, ওকে ছেড়ে থাকার কথাও ভাবেনি শিহাব কোনোদিন।

শিহাবের কোনো সমস্যা দেখতে পায় না জামিল সাহেবও, মণিষার বাবা। মেয়ের জামাই মদ খায় না, গাঁজা খায় না, মেয়ে মানুষ নিয়েও দোষ নাই, তবে কিছুটা শিশুতোষ মাথা গরম আছে। কথায় কথায় রাগ করে বসে। তাই শিহাব বাড়িতে এলে বাড়তি খাতির যত্ন করতে হয়। শিশুতোষ আলসেমি আছে। সারাদিনই বিছানায় গড়াগড়ি খায়। মেয়ের আত্মহত্যার কোনো কারণই খুঁজে না পেয়ে অদ্ভুত বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে বসে থাকে। শুধু মনে হয় জগতের চারপাশ এক কালসিটে কালচে আলোয় প্রখরভাবে পুড়িয়ে দিচ্ছে। লেজার অপারেশনের চকচকে চোখ ইদানীং সবকিছুই ঝাপসা দেখছে আবার। বাবা দেখো, দেখো, কত্তগুলা কাক, কথার শব্দে সামনে তুলতুলে হাতের গোলগাল মুখের বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে অকারণেই চোখ ভিজে উঠে রাস্তার এক দোকানে বসা জামিল সাহেবের। শুধুই মনে হয়, আর সুখী হওয়া গেল না, আর স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন কোথাও নাই। অকারণেই এমন এক হাসিখুশি মেয়ে চলে যেতে পারে? ওর কষ্ট কী ছিল? হ্যাঁ, শ্বশুরবাড়ির সাথে বিয়ের পরপর বেশ ঝামেলা হয়েছিল। পরে মেয়েটা কী সুন্দর করে মানিয়ে ফেলল নিজেকে! শিহাবের বিরুদ্ধে কিছুই তো বলত না কখনো। তবে শিহাব দুইদিন পরপরই বিচার দিত নানা কারণে ফোন করে করে। কিন্তু মেয়েকে সেসব বলতে গেলে, বোঝাতে গেলেই হাসত, বলত, বাবা, সে তো একটু পাগলই আর হাইপার। তুমি কিছু ভেবো না। ঠিক হয়ে যাবে। যদি বলতাম, জামাই চায় না, এমনভাবে তুমি চলো কেন? শুধু বলত, বাবা, আমি তো বাঁচতে চাইছি কেবল। মরণ থেকে পালাবার জন্য করি। যদি জানতে চাইতাম, সমস্যা কী তোমার? বলত, কোনো সমস্যাই নাই। গ্রিণ হাউজ এফেক্টে পৃথিবীর তাপ বাড়ছে, তাই সবার মেজাজ চড়া হচ্ছে। তুমি কুল থাকো তো বাবা, একটা আইসগোল্লা খাও আর মাথা ঠান্ডা করো। মরণ থেকে বাঁচার চেষ্টার মেয়েটা মরতে কেন চাইবে? কোনোভাবেই জট ছাড়ানো যাচ্ছে না।

দুই.

জট তাইফের মাথায়ও জাল বুনছে। মণিষার সাথে পরিচয় বেঙ্গলে। ওর বন্ধুদের আড্ডায়। ফোক গানের এক অনুষ্ঠানে। তাইফের বন্ধু সুজিতের বন্ধু মণিষা। গল্পে গল্পে দার্শনিক বিষয়বস্তুর আড্ডা প্রোগ্রামের চেয়ে মুখ্য হয়ে গেল। রাত হলে বাড়ি যাবার তাড়ায় বাকি কথাগুলো হয়েছিল মেসেঞ্জারে। গল্পগুলো যেদিন শেষ হলো, তার পরের দিনটিতে তাইফ আবিষ্কার করে, দেখতে ছোট মনে হওয়া, ৪ বছরের বড় মেয়েটির সাথে কথা বলার এক আকুতি তৈরি হচ্ছে মনের মাঝে। মেসেঞ্জারে নক করে চুপচাপ রইল। কিছুক্ষণ পরেই মণিষার লেখা ভেসে আসে মেসেঞ্জারে। টানা দুই ঘণ্টা কী করে কেটে গেল সেদিন! হাসির এক ইমো পাঠাল। মণিষা অবাক। লিখল, হাসির ইমো কেন? তাইফ এক নিমিষেই বলে উঠল, আমি তুমি করে বলব, কারণ আমরা হয়তো একে অপরের প্রেমে পড়েছি। মণিষার উত্তর, প্রশ্নই ওঠে না। জুনিয়রের সাথে প্রেম করি না। বলে ফোন রেখে দেয়া মণিষা পরের দিনই প্রেমে পড়ে। একটা সময় প্রেম করতে না চাওয়া মণিষা তাইফ কেন্দ্রিক হয়ে উঠল। প্রতিদিনই একবার দেখা না হলে অস্থিরতায় ভুগতে থাকে। দিনে রাতে বারেবারে যোগাযোগ করতে থাকলে তাইফ হঠাৎ হাপিয়ে ওঠে। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী তাইফ পরাধীন জীবন থেকে বাঁচতেই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে মণিষা তার জীবনের সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিচ্ছে। হ্যাঁ, মণিষাকে সে ভালোবাসে। ভালো বোঝে। কিন্তু তার মতন একলা স্বাধীনচেতা মানুষের জীবন শুধুই মণিষাকেন্দ্রিক কী করে হয়? এই সাধারণ বাস্তবতা বোঝে না মেয়েটা। কত কত রাতে একান্ত চাওয়ার মুহূর্তগুলোয় মণিষা থাকেনি পাশে! একাকিত্বে অন্য কেউ, তার জীবন, সমস্যা, হালকা কিছু অনুভূতি ছড়ানো কথপোকথন কি এড়ানো যায়? মেয়েটা কোনোদিনই বুঝতে চায় না। এ নিয়ে কত বহুবার ঝগড়া, দূরে সরে থাকা, আবার ফিরে আসা অহরহ ঘটেছে। মেয়েটা রাগ করে কথা বন্ধ রাখলে কেমন এক বিষণ্ণতার বিকেল দুপুর কাটে তাইফের। কোনো এক বিপন্নতা খেলা করে বুকের ভেতর। জীবনের ঝলমলে দুপুরকে হঠাৎ কটকটে লাগে। যানজট আর রাস্তার পাশের ময়লা আবর্জনাগুলো হুল ফোটায় নাকে। বিকেল গড়িয়ে রাতের শীতলতায় যখন নিস্তেজ লাগে দেহ, ঠিক তখনই আসে মণিষার ফোন। রাগ করে থাকতে পারে না মণিষা। শুধুমাত্র এই গুণটির জন্যই টিকে যায় ওদের পরিণতিহীণ প্রেম, এলোমেলো এক ছন্নছাড়ার জীবনে।

আজ মণিষা নাই। তাইফ ভালোভাবে ভাবতে থাকে। নতুন কোনো সংঘাতের কথা। হ্যা, নিশা নামক নতুন এক মেয়ের সাথে তাইফের টুকটাক কথা নিয়ে কিছুদিন ধরেই চলছিল মন কষাকষি। কিন্তু এ তো তাদের নিত্য দিনের সাথী। সবসময়ই কিছু না কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হতে থাকেই। মণিষা এই বয়সেও কেন এত ইললজিক তা নিয়ে বিরক্তির সীমা নেই তাইফের। কেন মণিষা বুঝবে না যে, তাইফ তাকে সত্যিই ভালোবাসে। কিন্তু টিন এইজের মতো, আমি কেবলই তোমার টাইপ প্রেমে যে আর পড়া যায় না, মনের একগামিতা যে বাস্তবিক অর্থ মিথ, তা তাকে হাজার চেষ্টাতেও বোঝানো যায় না। তবু মণিষা চলে যেতে পারে একবারও ভাবা হয়নি। সেদিন ওদের কথা হয়েছিল দীর্ঘ সময়। এক বোবা কান্না আর হতাশার চাহনি যদিও দেখেছিল, তবু সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে একবারও ভাবেনি। বিদায় দিয়ে অফিসে কাজ করছিল। ঘণ্টা দুয়েক পরেই এক ফোন পায় আরজুর কাছ থেকে। চমকে উঠে স্কয়ার হাসপাতালে ছুটতে ছুটতে যায়। শিহাবের মুখোমুখি হতে না চাইলেও চোখাচোখি হয়। শিহাবের চমকানো আর এর পরপরই গম্ভীর মুখটার বিপরীতে গিয়ে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাইফ। বর্তমানে মণিষার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ তাইফের সামাজিক অধিকার নাই আর মণিষার নিথর হওয়া দেহটিকে একটুখানি ছুঁয়ে দেখবার। মণিষার লাশটি না দেখতে পেলেও কল্পনায় মণিষার বুজে আসা চোখ আর বন্ধ হওয়া ঠোঁট দুখানি গভীরভাবে দেখতে পায়। শিহাব ২০ বছরে মণিষাকে যতটা পায়নি তার চেয়েও ঢের বেশি কাছে পেয়েছিল তাইফ। তেমন মণিষাও তাইফের পাথুরে বুকে কী করে যেন ঘাস জন্মে ফেলল। অদ্ভুত এক সারল্য আর নরম মনের মেয়ে ছিল মণিষা। চারপাশের জগত জুড়ে সবাইকে খুশি করতে চেষ্টা করে করেও ক্লান্ত হতো না। মণিষার সাথে তাইফের সম্পর্ক আচঁ করতে পারত শিহাব। এ নিয়ে মণিষার সাথে তিক্ততার কথাও কানে গেছে তাইফের। সংকোচ নিয়ে কথা না বলে বোবা হয়েই দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকল সামাজিক ও বিমূর্ত সম্পর্ক ঘেরা দুইটি মানুষ। হাসপাতাল থেকে মণিষার বডি বের করে রাত দুইটায়। এক ঝলক দেখে নেয় তার ঘুমন্ত শান্ত মুখখানা। মৃত মণিষার স্তব্ধ দেহের দায় থাকে সামাজিক মানুষগুলোর, মানসিক সত্তার তাতে থাকে না কোনো অধিকার। তাই তাইফ বাসায় ফেরে। জড় পদার্থের মতন শরীরকে টেনে শাওয়ারে দাঁড়ায়। গোসল করতে করতেই পেট খাবার চায়। টেবিলে ঢাকা দেওয়া বুয়ার সাজানো রান্না মুখে তুলে ফ্রিজের কাছে গিয়ে বের করে ভদকার এক বোতল। মদের চুমুকে তাইফ চিন্তাগুলো সাজাতে থাকে এবার। বিচ্ছেদ এক চরম বাস্তবতা। কিন্তু হঠাৎই মনের মাঝে অক্টোপাসের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা কালো এক রাশ কালি যেন ছিটিয়ে দেয় কেউ। বুকের মাঝে প্রবল এক হাতুড়ির বাড়ি। কেন আত্মহত্যা করতে হলো মেয়েটার? কেন? সামান্য এক ফ্লার্ট, ভিত্তিহীন কথা চালাচালি, এতে লয়াল থাকা না থাকার সম্পর্ক কী? আর এত তুচ্ছ বিষয়ে আত্মহত্যা? হ্যা, ইদানীং ঝগড়া তুমুল লাগছিল। ওর অতি খবরদারি তাইফকে মানসিক আঘাত দিত। ব্যক্তিত্ব কিসে যায়, কিছুতেই মানতে চাইত না মেয়েটা। গ্লাসের চুমুক বাড়িয়ে দিতে দিতে একসময় নিস্তেজ হয়ে সেই ঠান্ডা মাটিতেই তাইফের শরীরখানা মিশে থাকে। মণিষা তাইফের মুখোমুখি হয় পরদিন মধ্যরাতে। প্রবল ঘুমকাতুরে তাইফের গলা শুকিয়ে আসে কেবল, আকণ্ঠ মদ গেলে পরপর দুইদিন। মদের ঘোর কেটে যাওয়ায় বেদনার চাপ চাপ দলাগুলো গলা দিয়ে বুকে এসে জমতে শুরু করে আবার। বুক ভারী হতে থাকে। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে ফেসবুক ওপেন করে বিদেশি বান্ধবীদের খোঁজ করে। ওদের পাঠানো হাস্যরস বা গান বা পর্ন সাইটগুলো কোনোটাই তাইফকে শান্ত করতে পারে না। হেগেলের ‘থট অব রিজন’ নিয়ে ডুবে যায় বইয়ের পাতায়।

তাইফের কাছ থেকে বেরিয়ে মণিষার থমকানো মন শান্ত হয়েছিল সেদিন। প্রতিবারই তা হয়। এই অদ্ভুত ভালো লাগার, আবেশে জড়ানোর চেতনার রহস্য, যুক্তি খোঁজা মণিষা কিছুতেই বের করতে পারে না। শিহাবের সাথে প্রায় দুই যুগ পাড়ি দেওয়া মণিষা কখনোই শিহাবকে ভালোবাসতে পারেনি। অথচ কত অবলীলায় ছন্নছাড়া এই আধাপাগল অল্প বয়সী ছেলেটাকে জীবনের মতো ভালোবেসে ফেলেছিল। তাইফ ছিল ভীষণ পরিষ্কার চিন্তার অধিকারী। জ্ঞানকে এত সাবলীলতা দিয়ে মণিষার কাছে তুলে ধরত আর এতই ইন্সপায়ারিং ছিল যে, যে কোনো কাজে তাইফ মণিষার অন্যতম বেঁচে থাকবার অবলম্বন হয়ে উঠল। তবে তাইফকে ভালোবাসলেও সংসার ভাঙার যুক্তি খুঁজে পেত না মণিষা। শিহাবের সাথে গড়ে তোলা সংসার ভাঙতে পারেনি তাই। সংসার তো শুধুই দুইটা চারটা মানুষের জগৎ না। চলটে ওঠা গ্রিল, জানালার পাশে বসে বাতাসের নিমজ্জন, রান্নাঘরের তাকে ধুলোমোছা সযতনের মসলার কৌটা, ড্রইংরুমের কোণার শতরঞ্চি আর ইটরঙা টাইলসের মেঝেতে দাড়িয়ে শাওয়ার নেওয়া। এসব চেনা অভ্যস্ত সুখ তাকে সংসার ভাঙার মতন কোনো অবস্থান নিতে দেয়নি। তবু মাঝে মাঝে প্রতারণা শব্দটা মগজে ঘুরে বেড়াত। পরে আবার আরেক ভাবনা উঁকি দিত। শিহাবের সাথে এই যে এক সামাজিক সম্পর্ক ধরে চলার অভ্যস্ততাকে সে সহনশীল করে তুলতে পেরেছিল তাইফ জীবনে আসাতেই। নানা অভাব, অভিযোগ, তিক্ততা, হতাশার জমে ওঠা বেলুনটা ফেটে না গিয়ে আকাশে উড়তে পারত শুধুই তাইফের জন্য। মগজের কোষে কোষে শিশিরগুলো জমাতে সাহায্য করত তাইফ। ফলে তাইফকে ঘিরে এক আচ্ছন্নতা গড়ে উঠল মণিষার। কিন্তু তাইফের মগজে প্রবাহিত হবার গুণ যত ছিল, ততটাই ছিল ওর ফিলোসফিক্যাল একাকিত্ব। ফলে মণিষার একাকিত্ব কিছুতেই কাটত না। সেইসাথে মণিষা নিজের মাঝে টের পেতে শুরু করেছিল, সে দুনিয়ার সব কিছুতেই ভয় পায়। হারাবার ভয়! তাইফকে হারাবার, সংসার হারাবার, সন্তান হারাবার, আনন্দ হারাবার, প্রতিদিনের বেঁচে থাকার স্বপ্ন হারাবার, জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে জাপটে ধরা বাতাস হারাবার! একদিন তাইফকে এই কথা বলাতে তাইফ প্রথমে বহুক্ষণ হেসে মণিষাকে খুব কাছে নিয়ে বলেছিল, তুমি এমন কোনো সৃষ্টি দেখাতে পারো, যার সমাপ্তি নেই? মণিষা জানে, নেই। তবু মণিষা বলে, আমার কেন এত ভয়? সব ভয় পাওয়া মেয়েটি এত সাহসী কেন হবে?

বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই মণিষার ঘোর চলছিল। জ্ঞান, বাস্তবতা তাকে ক্রমাগত বোঝাচ্ছিল শূন্যতাই জীবনের একমাত্র সত্য। আর বাকি শুধুই সেই সত্যের পথে ধাবমান গতিময়তা। শিহাবের দুর্ব্যবহার, তাইফের ফিলোসফি আর সেই সাথে সভ্যতার ছুটে চলায় খেই হারাতে থাকে মণিষা। পত্রিকা খুলেই হত্যার বীভৎস রূপে টের পায়, কী যেন একটা ঘটে যাচ্ছে দুনিয়ায়। চারপাশে নতুন নতুন বীভৎস খবরের জন্ম অস্থিরতায় ভোগাতে থাকে মণিষাকে। প্রকৃতির সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের বেঁচে থাকার, লালসার চকচকে সভ্যতা প্রকৃতিকে চিড়ে দিচ্ছে। হতাশ প্রকৃতি অবাক বিস্ময়ে দেখে চলৎশক্তিহীন বোবাদের ঘিরে কত কামনার আগুন জ্বলতে পারে। এসব দেখে আর কুঁকড়ে যেতে থাকে মণিষা। চরম এই বাস্তবতাকে প্রবল ইচ্ছা দিয়েও মেনে নিতে পারছিল না মন। আর যত ভয় বাসা বাঁধতে থাকে, তত আরো ছুটে চলা বাড়তে থাকে মণিষার। বয়স, সময়, পারা আর না পারাকে তুচ্ছ করে যুক্তি আর যুক্তিহীনতার পথ ধরে মণিষা পাড়ি দিতে থাকে এক বিবর্ণ সময়। যেই বিবর্ণতাকে চোখ বন্ধ করলেই মণিষা হিসহিসিয়ে সামনে আসতে দেখে। ঘুম কমতে থাকে আরো। পরিবার, প্রেম, সমাজের সভ্যদের অসভ্য রূপ এমন হরেক গলিপথ ঘুরতে ঘুরতে হতাশ মণিষা ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে থাকে। সেদিনও তাইফের সাথে নিজের মানতে না পারা বাস্তব সত্য নিয়ে প্রবল লড়াইয়ে ক্লান্ত মণিষা পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের রাস্তাটা পার হচ্ছিল। তাইফ ফিরে গেছে ওর অফিসে। মধ্যদুপুরের গনগনে রোদ, শিহাবের বিছুটি মাখা কথা, বাচ্চাদের বয়ঃসন্ধিকালের মেজাজ আর সেই সাথে তাইফের সোজা সাপটা কথা মণিষার মগজের কোষ বেয়ে বেয়ে প্রতিটি কূপে প্রবেশ করছিল তখনও। কার্বনের কালো ধোয়ার মতন তা মাথা বেয়ে বেয়ে দেহে প্রবেশ করছিল, ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর এক ঝাকুনি আর মণিষা নামাধিকারী এক মানবের চূড়ান্ত সত্যের পথ অবগাহন।

আইল্যান্ডের সরু মাথা নিয়ে নুইয়ে থাকা মানুষের পায়ের চাপে পিষ্ট হওয়া তারকাটাগুলো শুধু নির্বাক সাক্ষ্য হয়ে থাকে ছোট এক মামুলি ঘটনার। রাস্তা পেরুবার আইল্যান্ডে দাঁড়ানো মণিষার মাথায় যখন দপদপিয়ে বেড়াচ্ছিল তার মানতে না চাওয়া বাস্তবতাগুলো, ঠিক তখনই অন্যমনস্ক এক পা চলে যায় পায়ের নিচে পড়ে থাকা লোহার তারগুলোয়। হোঁচট খেয়ে পড়ে এক স্বাভাবিক মৃত্যু—আত্মহত্যার মহিমা নিয়ে টিকে থাকে সামান্য কিছু মানুষের জীবনে।

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;