নেতা ফিরে এলেন, স্বাধীনতা পূর্ণতা পেলো



শিতাংশু গুহ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গবন্ধু, তাঁর সমগ্র জীবনের সংগ্রামের ফসল ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’-এ যেদিন ফিরে আসেন, পুরো বাংলাদেশ তাকে সাদরে গ্রহণ করে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তখনো মুক্তির আনন্দে বিহ্বল। বঙ্গবন্ধু’র আগমন দিনটিকে করে আবেগ আপ্লুত। দিনটি ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু নেতা নেই, সবার মনে ছিলো ‘হরিষে বিষাদ’। নেতা ফিরবেন কি ফিরবেন না, এই চিন্তায় পুরো জাতি ছিলো চিন্তিত। যার ডাকে দেশ স্বাধীন হলো, বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লো, সেই নেতা নেই, অথচ স্বাধীনতা এসেছে। নেতা বিনে সেই স্বাধীনতা ছিলো অসম্পূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতোি কিন্তু বসে ছিলেন না। পাকিস্তানের কারাগার থেকে শেখ মুজিব-কে মুক্ত করে আনতে তাঁকে প্রায় ৯৪ হাজার বন্দি পাকিস্তানি সৈন্যকে মুক্তি দিতে হয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেদিন ফিরে আসেন, সেদিন ঢাকা ছিলো লোকে লোকারণ্য। তখন বিমান বন্দর ছিলো ‘তেজগাঁও পুরান এয়ারপোর্ট’। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে খোলা জিপে বঙ্গবন্ধুকে দেখার। শাহবাগের এক কোনায়, অর্থাৎ রেসকোর্সের পাশে তখন একটি পুলিশ ফাঁড়ি ছিলো, বেশ বড় বড় গাছ ছিলো। থানার কোনায় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখা, দূর থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো। খোলা জিপে জাতিরজনক। জিপে অন্য যারা ছিলেন তাদের অনেককে হয়তো নামে জানতাম, বাস্তবে চিনতাম না, তখন তো আর ইন্টারনেট, ফেসবুক ছিলোনা? পরে জেনেছি। সেসব তো এখন ইতিহাস। নেতা ফিরে এলেন, স্বাধীনতা পূর্ণতা পেলো।

বঙ্গবন্ধুকে একেবারে সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য কখনোই হয়নি। আশা ছিলো, ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ তাকে সামনে থেকে দেখবো, কারণ সেদিন তাঁর আমাদের জগন্নাথ হলে আসার কথা ছিলো। তা আর হলো কই? শেখ কামালকে বহুবার দেখেছি। কারণ আমরা তখন ঢাকা ভার্সিটি’র ছাত্র। কামালও তাই। টিএসসি-তে তিনি আড্ডা মারতেন। আমরাও আড্ডা মারতাম। মাঝেমধ্যে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের জটলায় এসে বসতেন। সবার সাথে বসে চিনাবাদাম খেতেন। তার সাথে আমার কথা হয়নি। আমি ভাবতাম, ‘প্রেসিডেন্টের পোলা আইসা আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বসছে’? তাকে কখনো আর পাঁচটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর চাইতে বেশি কিছু মনে হয়নি। সাধারণ পোশাক, সাধারণ চালচলন। তাঁর নেতৃত্বে দু’একটি মিছিলে ছিলাম, তিনি যখন শ্লোগান দিতেন, ‘আমার ভাই, তোমার ভাই, মুজিব ভাই, মুজিব ভাই’ শুনে আমরা হাসতাম এই ভেবে যে, ‘বাপকে ভাই বলছে’!

শেখ হাসিনা যেদিন দেশে ফিরে আসেন, সেদিনও আমরা ক’জন প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান স্যারের ফার্মগেট সংলগ্ন বাড়ি ‘সংশয়’-এর পাশে দাঁড়িয়ে জননেত্রীকে দেখেছিলাম। তখন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। কিন্তু রাস্তায় মানুষের কোন কমতোি ছিলোনা। সেই বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার দুই পাশে লক্ষ জনতা জানান দেয়, ‘বঙ্গবন্ধু মরে নাই’? শেখ হাসিনা ভারত থেকে যেই বিমানে আসেন, প্রথমে জিয়াউর রহমান সেই বিমান ঢাকায় নামার অনুমতোি দেননি। ভারতীয় বিমান জোর করেই নামবে দেখে শেষে অনুমতোি দেন। শেখ সেলিমের কাছ থেকে শোনা ‘সেই বিমান ভর্তি ছিলো ভারতীয় কমান্ডো’। আর সুলতানাকে প্রতিদিন দেখতাম জগন্নাথ হল থেকে কার্জন হলে যাবার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে দৌড়াচ্ছে। না, কোনদিন কথা বলার সুযোগ হয়নি। আসলে আমরা মফস্বলের ছেলে, কামাল বা সুলতানার সাথে কথা বলার প্রশ্নই ছিলোনা। তবে কামাল-সুলতানা প্রেমের কথা কানাঘুষায় তখন ইউনিভার্সিটিতে সবাই জানতো।

১৯৭২ থেকে ১৯৯০-এ আমেরিকা আসা পর্যন্ত ঢাকা থাকা বা মুজিববাদী ছাত্র রাজনীতি করা অথবা সংবাদ ও বাংলারবাণীতে কাজ করার সুবাদে শেখ পরিবার সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেই ইমাম সমাহিত করেছিলেন আশীর দশকের মধ্যভাগে তিনি একবার দৈনিক বাংলারবাণীতে এসেছিলেন। সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম সেলিম আমাকে ডেকে বলেন তার একটি ইন্টারভিউ নিতে। নিয়েছিলাম এবং তা বাংলারবাণীতে ছাপা হয়েছিলো। রাশেদুল হক পাশা’র হাত দিয়ে সেটি হয়তো একটি বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হয়। সেই লেখাটি আমি খুঁজছি। আগস্ট মাস এলেই খুঁজি। কারণ বঙ্গবন্ধু’র মৃতদেহের্ এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা এবং কবর দেয়ার ঘটনার তথ্য এখনো অন্যত্র কোথাও চোখে পড়েনি।

জাতির জনক তখনো অবহেলিত। ওই ইন্টারভিউ গুরুত্বহীনভাবে ছাপা হয়েছে। সেটাও হয়তো সম্ভবঃ ছিলো বাংলারবাণী বলে। তখনো বাংলারবাণীতে ‘সিঁড়িতে পড়ে থাকা বঙ্গবন্ধু’র লাশের বিখ্যাত ছবিটি ছাপা হয়নি। এমনিতে আমরা গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতাম। সেদিন আমাদেরকে রাত ১১টার দিকে বার্তা সম্পাদক নাজিমুদ্দিন মানিকভাই বললো, তোমরা বাড়ি যাও। আগে যেতে পেরে আমরা খুশি হলাম। পরদিন পুরো পাতা জুড়ে সেই বিখ্যাত ছবি ছাপা হয়, হেডিং ছিলো, ‘কাঁদো বাঙালি কাঁদো’। ছবিটি নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার দেয়া, এবং তখন তা ছাপানো যথেষ্ট সাহসের ব্যাপার ছিলো, শেখ সেলিম সেই সাহস দেখিয়েছিলেন। পরে তিনি গ্রেফতার হন, এরশাদ বাংলারবাণী বন্ধ করে দেন, এসবও এখন ইতিহাস।

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ জাতির জনক নিহত হন। ইতিহাস বলে, দু’দিন আগে খন্দকার মুস্তাক টিফিনকারী করে হাঁসের মাংস এনে বঙ্গবন্ধুকে খাইয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু’র বাবা মারা যাওয়ার পর মুশতাক যত কেঁদেছিলেন, সম্ভবতঃ বঙ্গবন্ধু ততটা কাঁদেননি? অন্ততঃ টিভিতে দেখে আমাদের তখন তাই মনে হয়েছে। এই মোস্তাকই জেলের তালা খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাই জাতীয় চার নেতা জেলখানায় খুন হন। কাদের সিদ্দিকীকে আমরা এখন যতই গালি দেইনা কেন, একমাত্র তিনিই সেদিন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অন্যরা বঙ্গবন্ধু’র লাশের সাথে আপস করেছেন। এও সত্য, বড় বড় নেতা, লম্বা লম্বা লেকচার, অথচ খন্দকার মুশতাকের বাড়িতে কিন্তু একটি ঢিলও পড়েনি?

শিতাংশু গুহ: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কলামিস্ট, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী ও কমিউনিটি নেতা।

বঙ্গবন্ধু সেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা স্বাধীনতার মহান স্থপতি



নুসরাত জাহান জুঁই
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

;

বঙ্গবন্ধু আমাদের সাম্রাজ্য বিরোধী জাতীয় আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক



সৈয়দা তাহসিনুর রুবাইয়্যাত
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

;

সমগ্র বাংলাদেশকে সংঘবদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিলো অপরিসীম



আফরা নাওয়ার নাদিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

;

বাঙালি জাতির জীবনে বঙ্গবন্ধু এক অবিস্মরণীয় নাম



সুমা কুন্ডু
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

;