বেরোবিতে পতাকা বিকৃত: অভিযুক্তদের সুপারিশে তদন্ত কমিটি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) মহান বিজয় দিবসে স্বাধীনতা স্মারকে জাতীয় পতাকা বিকৃতভাবে প্রদর্শন ও অবমাননার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন সদস্যের এই কমিটিতে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হককে আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিউর রহমান সদস্য সচিব এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিনকে সদস্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. এহতেরামুল হক।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ লিঁয়াজু অফিসে সিন্ডিকেটের ৭৩তম বিশেষ সভায় তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়নি প্রশাসন।
এদিকে পতাকা অবমাননার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং আরেক অভিযুক্ত শিক্ষক আর.এম হাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে হওয়া সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযুক্তদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত এ তদন্ত কমিটি মূলত তাদেরকে দায়মুক্তি দিতে পারে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
পতাকা অবমাননার মামলার প্রধান অভিযোগকারী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহামুদুল হক বলেন, পতাকা অবমাননার ঘটনায় এতো পরে তদন্ত কমিটি গঠন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজন পতাকা অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত। এমন অবস্থায় তদন্ত কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিচার প্রক্রিয়ার পুলিশি তদন্তসহ সকল তদন্ত প্রভাবহীনভাবে করার জন্য পতাকা অবমাননার ঘটনায় অভিযুক্ত উপাচার্যসহ সকল অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে আরেকজন অভিযোগকারী বেরোবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই তদন্ত কমিটি করে তার ধৃষ্টতার পরিচয় দেখালো রাষ্ট্রকে। এটির মাধ্যমে অভিযুক্ত নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থাকে চরমভাবে অবমাননা করল। রাষ্ট্রের কাছে এটির বিচার দাবি করছি। সেই সাথে আমরা এই তদন্ত কমিটিকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলে তিনি কল রিসিভ করেন নি। কার্যালয়ে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। উপাচার্য ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, মহান বিজয় দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকে বিকৃত পতাকা নিয়ে ছবি তোলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় ৯ শিক্ষকসহ উপাচার্যের বিরুদ্ধে রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মন, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদুল হাসান, ইতিহাস ও প্রত্মতত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রাম প্রসাদ বর্মণ । এছাড়া আরও ৮/৯ জনকে অজ্ঞাত করে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে রংপুর জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।