অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্যাম্পাস ছাড়লেন খুবি উপাচার্য
টানা দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাস ছেড়েছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. ফায়েক উজ্জামান। ১০ বছর ২ মাস দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর উপস্থিতিতে অশ্রুসিক্ত হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
এর আগে সকাল থেকেই তিনি শেষ কর্মদিবসে নানা অনুষ্ঠান, সভায় যোগদান ও উদ্বোধন প্রক্রিয়ায় ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। তার বিদায়কালে অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিকেল ৩টার আগেই একে একে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শুভানুধ্যায়ীরা তার আবাসিক ভবনের দিকে যেতে থাকেন। তিনটার আগেই বাসভবন ও বাইরে সমাবেশ ঘটে কয়েকশ মানুষের। অপেক্ষায় থাকেন তারা। দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে তিনি বাসভবন থেকে বের হতেই তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। বাসভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তাকে বিদায়ী সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে তিনি প্রধান ফটকে পা রেখেই তার অসীম শ্রদ্ধার শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জনের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। এ সময় তিনি আবেগে, শ্রদ্ধায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই সময় একের পর এক শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারী উপাচার্যকে জড়িয়ে ধরে, হাত ধরে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী আমাকে বিদায় জানাতে এসেছেন এটা অভূতপূর্ব। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেনো এ ধারা অব্যাহত থাকে এবং দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলতে পারলে এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাবনার পথে, সাফল্যের পথে বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান উপাচার্যের গাড়ির সাথে বিশাল গাড়ীবহরের যাত্রায় অংশ নেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কোনো উপাচার্যের বিদায়কালে সুখকর অভূতদৃশ্যের আবির্ভাব ঘটেনি। তিনি এর আগের মেয়াদেও ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে বিদায় নেন। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের উপাচার্যের এবারের বিদায়দৃশ্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রেকর্ড করলো।
এর আগে সকাল ৯টায় তিনি নগরীর বয়রাস্থ খুবি’র চারুকলা ইনস্টিটিউটের জায়গায় ১১তলা বিশিষ্ট শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। এরপর বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানদের সাথে একাডেমিক বিষয় নিয়ে শেষবারের মতো মতবিনিময় করেন। পরে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে জিনোম ল্যাব উদ্বোধন করেন। দুপুর থেকেই তাকে ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন, ডিন, ডিসিপ্লিনসহ বিভিন্ন মহল তার দফতরে আসেন।
শেষ কর্মদিবসে এসকল কর্মসূচিতে উপাচার্য বলেন, আমি আপনাদের কাছে আপনজন হয়ে থাকতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহত উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সাফল্য তাকে যেনো আনন্দ দেয় তিনি সে প্রত্যাশা করেন। তিনি যেনো দূর থেকেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি দেখতে পান।
তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কর্মকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, গুণগত মানোন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত প্রসারেও আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। আমি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করেছি। তার এই দীর্ঘ সময়ের কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টতায় কেউ যদি কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন, তিনি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।