আতঙ্কে ববি শিক্ষার্থীরা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

  • জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসের ভাড়া নিয়ে চালক-হেলপারের রগচটা আচরণে ছোট-খাটো বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে। প্রায়শই বাস হেলপার-স্টাফদের মারমুখী আক্রমণে আহত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিরোধ হলেই সমাধানে করা হয় দায়সারা সুরাহা। গ্রহণ করা হয় না স্থায়ীভাবে কোন সুপরিকল্পনা।

এতে সবসময়ই নিরাপত্তাহীনতা আর আতঙ্কে ভুগে শিক্ষার্থীরা। আবার কোন বিরোধ বাঁধলেই বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা সড়ক অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়ে বরিশাল-ঢাকা-পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, বরগুনা ও ভোলা রুটের কয়েক লাখ যাত্রী।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রুপাতলি বাস স্টেশনে খুলনাগামী বিআরটিসি বাসের টিকিট কেনা নিয়ে বাস স্টাফদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করে স্টাফরা। এঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-কুয়াকাটা সড়ক অবরোধ করে। এরপর পুলিশ জড়িত বাস স্টাফ রফিককে আটক করলে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন

এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে বরিশাল নগরীর রুপাতলী হাউজিং এলাকার ২৩নং রোডের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি মেসে হামলা চালায় রুপাতলীর স্ট্যান্ডের পরিবহন শ্রমিকরা। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী । পরে তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এর পরপরই শুরু হয় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের কয়েক দফায় সড়ক অবরোধ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, প্রথমে ৪৮ ঘণ্টা ও পরে ১৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। তাতেও স্থায়ীভাবে কোন সুরাহা না হওয়ায় আবার শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মেসে থাকা ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. মোহসিন উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

ভোগান্তিতে যাত্রীরা

এরপর শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে অভিযান চালিয়ে একটি বাসের মধ্য থেকে সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজ মুন্সী ও এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা দুজনেই রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা।

হালিম নামে এক যাত্রী জানান, বাউফল থেকে বরিশালের চরমোনাই মাহফিলে ব্যবসায়ী কাজের জন্য আসি। কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে খয়রাদ ব্রিজ থেকে রুপাতলি সোনারগাঁও টেক্সটাইলের সামনে পর্যন্ত হেঁটে এসে অটোরিকশা করে সদর রোডে আসি। হাতে প্রায় ২৪/২৫ কেজি ওজন বহন করে প্রায় হেঁটে এসেছি। এমন ভোগান্তি জীবনে হয়নি।

হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান তমাল জানান, মঙ্গলবার রাতে ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর থেকে জড়িতদের বিচারের দাবি আর আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সড়ক অবরোধ, মশাল মিছিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সড়ক অবরোধ

কিন্তু হামলার ঘটনায় প্রশাসন অনেকটাই গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছে। কেননা জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় না আনলে ববি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তাই জড়িত সকলকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আটকের বিষয়টি বার্তা২৪.কম-কে নিশ্চিত করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে হামলার ঘটনায় ববি প্রশাসনের মামলা দায়েরের পর শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। বাকি হামলাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ওসি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস জানান, ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি জানিয়েছে, সেগুলো মানা হয়েছে। এখন তাদের আর কি কি দাবি রয়েছে তা শুনবো। তারপর সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব বলেও জানান এই প্রক্টর ।

এদিকে বাস স্টাফদের আটকের পর তাদের মুক্তির দাবিতে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাস বন্ধ রেখে রুপাতলী মিনিবাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে বিক্ষোভ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা ।

একদিকে ববি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ আরেকদিকে বাস শ্রমিকদের কর্মবিরতি। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে নাজেহাল বরিশালবাসী। এতে বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি রুটে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা।