রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো মেঘের ছায়া

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আলোর দিশারী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যেখান থেকে লেখাপড়া শিখে আলোকিত মানুষ হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন হাজারো শিক্ষার্থী। দেশের গন্ডি পেরিয়ে দূর দেশেও আলো ছড়াচ্ছেন তারা। সেই বিশ্ববিদ্যালয় নানা সময় নানা নেতিবাচক ঘটনায় নিজের গৌরব হারিয়ে ফেলছে। আলোর দিশারী থেকে অন্ধকারে চলে যাচ্ছে নানা বিতর্কিত কাণ্ডে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে।

৭ মে ২০১৭ থেকে ৬ মে ২০২১। এই সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান। উপাচার্য আবদুস সোবহানের এই সময়টাকে বলা হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কালো অধ্যায়। এ সময় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন তিনি। যা নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উপাচার্য আব্দুস সোবহানের বিদায়ের পর দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল- কে হচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য। তিন মাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি শূন্য থাকলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সেই পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছে নতুন উপাচার্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদটিতে আবারও নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের অনুসারীরাই।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য গত ২৮ জুলাই তিনজনের নাম তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেই তিনজনের মধ্যে এক নম্বরে নাম রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের নাম। দুই নম্বরে রয়েছেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাত্তার তাপু ও তিন নম্বরে রয়েছেন সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এই তিনজনের মধ্য থেকে যে কোন একজনের নাম প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। তারপর রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন।

তবে অধ্যাপক হাবিবুর রহমানই উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে খবর চাউর হয়েছে। যা নিয়ে বিব্রত ও শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের অনুসারী ছিলেন। সাবেক উপাচার্যের সমর্থনেই তিনি প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক পদে নির্বাচিত হন। প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের অন্যান্য সদস্যরা সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও আহ্বায়ক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান নীরবে সেই দুর্নীতিকে সমর্থন করেন।

এ বিষয়ে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের আহ্বায়ক মহোদয় সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতিতে নানানভাবে সহায়তা করেছেন। আমরা সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও আহ্বায়ক মহোদয় নীরব থেকেছেন। তিনি আমাদের দলের মধ্যে ভাঙন ধরিয়েছেন। আমাদের দল সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছেন না। এমন একজন ব্যক্তি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন, তাহলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও একটি কলো অধ্যায় রচিত হবে। কেননা তিনি দায়িত্ব নিলেই সাবেক উপাচার্যের সকল অন্যায় অনিয়মকে ধামাচাপা দিবেন। পার পেয়ে যাবেন সাবেক উপাচার্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সদস্য বলেন, ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর প্রচার হয়েছে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান উপাচার্য হচ্ছেন। সাবেক উপাচার্যপন্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহড়া দেওয়া শুরু করেছে। মিষ্টি বিতরণের খবরও পেয়েছি। তাছাড়া আমরা যারা সাবেক ভিসির দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি, তাদেরকেও দেখে নেওয়া হবে বলে নানা রকম কথা ছড়াচ্ছে। যদি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান উপাচার্য হন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরেকটি কালো অধ্যায়ের অপেক্ষা করছে।

এদিকে, নতুন উপ উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাকে কোনোভাবেই সহায়তা করছেন না প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। বরং নানা ক্ষেত্রে বর্তমান উপ উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলামের বিরোধীতা করছেন তিনি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বর্তমান উপ উপাচার্যের বিরুদ্ধে বক্তব্যও দিয়েছেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, উপাচার্য প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও বর্তমান উপ উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম দুজনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক পদে নির্বাচন করেছেন। সুতরাং তাদের মধ্যে একটা পূর্ব দ্বন্দ্ব আছে। এই দুজনই যদি উপাচার্য ও উপ উপাচার্য হন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজেও দ্বন্দ্ব চলমান থাকবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অশনিসংকেত।