জাবির শীর্ষ তিন পদে নারী
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শীর্ষ পদের মধ্যে রয়েছে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ তিন পদেই রয়েছেন নারী। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক রাশেদা আখতার ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে রয়েছেন রহিমা কানিজ।
অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম
দেশের প্রথম নারী উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আমলেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেকে জাবির অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প পাস হয়। এ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পরিচয় শুধু দেশের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক। ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৮০ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
অধ্যাপক ফারজানা ২০০১ সালে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৪ সালের ২ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যাপনা ছাড়াও তিনি বেসরকারি সংস্থা 'নাগরিক উদ্যোগ' এর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের জন্ম ঢাকায়। তার পৈতৃক বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায়। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা আব্দুল কাদের ঢাকা হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ছিলেন, মা ফাতেমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। বড় ভাই শফিকুর রহমান ছিলেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান।
অধ্যাপক রাশেদা আখতার
১১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক রাশেদা আখতার। তিনি ১৯৮৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০০১ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০০৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন রাশেদা আখতার।
অধ্যাপক রাশেদা আখতার নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি, সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন, শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের সভাপতি, শিক্ষক সমিতির সদস্য, সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার ১৯৭৯ সালে সিলেটের কিশোরী মোহন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখা থেকে মেধাতালিকায় ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেন। সিলেট মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখা থেকে মেধাতালিকায় দশম স্থান অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৮৪ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন অধ্যাপক রাশেদা। তিনি ১৯৮৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপক রাশেদা স্নাতক (সম্মান) ফলাফলের জন্য সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে নাজমুল করিম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক এবং স্নাতকোত্তর ফলাফলের জন্য রাষ্ট্রপতি পদক লাভ করেন। ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপক রাশেদা আখতারের ৪০টি গবেষণা প্রবন্ধ ও বুক চ্যাপ্টার বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
অধ্যাপক রাশেদা আখতার যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, জাপান, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে ২০টির মতো গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের জননী।
রহিমা কানিজ
২০১৮ সালের জুন মাসে জাবির ইতিহাসে প্রথম নারী রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে নিয়োগ পান রহিমা কানিজ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার-১ (প্রশাসন) এর দায়িত্ব পালন করেন।
রহিমা কানিজ ১৯৯৪ সালের ১২ ডিসেম্বর সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি উপরেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পান।
রহিমা কানিজ ১৯৫৯ সালের ১ নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মানিকগঞ্জ সদর থানার বেতিলা গ্রামে। তিনি ১৯৭৪ সালে এসএসসি, ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়নের দানিয়েৎস্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন রহিমা কানিজ।