জাবির বটতলায় অস্বাস্থ্যকর খাবার, তবুও মানুষের আগ্রহ!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাবির বটতলায় অস্বাস্থ্যকর খাবার

জাবির বটতলায় অস্বাস্থ্যকর খাবার

দীর্ঘ ১৯ মাস পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে। বটতলার নানা রকমের খাবারের দোকানগুলোও ফিরছে আগের রূপেই। দোকানিদের হাঁকডাকে এখন সরগরম পুরো বটতলা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখানে খেতে আসছে বাহির থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

অস্বাস্থ্যকর খাবার সত্যেও এই বটতলার প্রতি মানুষের কেন এত আগ্রহ? জানতে চাইলে বাহির থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন জানান, মূলত খাবারের মূল্য অন্য জায়গার তুলনায় কম ও খাবার মুখরোচক হওয়ায় তারা এখানে আসেন।

বিজ্ঞাপন

আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ে খাবারের আইটেম সীমিত ও খাবারের মান বটতলার তুলনায় নিম্নমানের হওয়ায় তারা বাধ্য হয়েই এখানে খাচ্ছেন।

বটতলার দোকানিদের ভাষ্য তারা প্রতিদিন শতাধিক আইটেমের ভর্তা করেন। এই ভর্তার জন্য দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বটতলা। তবে স্বচক্ষে শতাধিক নয় বরং ২৫ থেকে ৩০ প্রকারের ভর্তার খোঁজ মিলবে এসব দোকানে।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে রয়েছে বাদাম ভর্তা, সরিষা ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ডাল ভর্তা, শিম ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ঢ্যাঁড়শ ভর্তা, টমেটো ভর্তা, আলু ভর্তা, লাউশাক ভর্তা, কলা ভর্তা, কচু ভর্তা, রসুন ভর্তা, ডিম ভর্তা, মরিচ ভর্তা। এ ছাড়া ইলিশ মাছের ভর্তা, শুঁটকি মাছের ভর্তা, চিংড়ি মাছের ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, রুই মাছের ভর্তা, চিকেন ভর্তা, লইটা শুঁটকিসহ বাহারি ভর্তা।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আগের দিনের থেকে যাওয়া মাছ ও মুরগির মাংস দিয়েই মাছ ও মাংস ভর্তা করা হয়। এছাড়া ভর্তাগুলো ঢেকে না রাখার কারণে রাস্তার ধুলাবালি এসে মিশ্রিত হয় ভর্তার সাথে। আর এসব ভর্তাই খাচ্ছে সবাই।

জানা যায়, বটতলায় মোট ৩৫টি খাবারের দোকান রয়েছে, যার সবগুলোতে পাওয়া যায় এসব ভর্তা। প্রকারভেদে এসব ভর্তার দাম ৫ থেকে ১০ টাকা।

শুধু ভর্তা নয়, আরও নানা পদের খাবার আছে এই বটতলায়। যেমন- নানা ধরনের মাছ, কবুতরের মাংস, হাসের মাংস, গরু, মুরগি, বিভিন্ন ধরনের শাকসহ সবজিও পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বটতলার এসব মুখরোচক স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বাহারি এসব খাবারে রয়েছে বেশ স্বাস্থ্যঝুঁকি। যে কারণে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। আবার এসব খাবারের কারণে দীর্ঘমেয়াদি লিভারের সমস্যায়ও ভুগছেন অনেকেই।

প্রতিদিন অনেকেই বিভিন্ন পেটের পীড়া বা গ্যাস্ট্রিকের মতো রোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে। চিকিৎসা কেন্দ্রের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন যেসব অসুস্থতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে আসতেন, তার মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ রোগীই খাদ্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আসে।

এই বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক আবু জাফর মুহাম্মদ সালেহ বলেন, কয়েক বছর ধরে নিয়মিত কেউ যদি বটতলার খাবার খায়, তবে তার শরীরের দুই ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এর মধ্যে একটি তাৎক্ষণিক সমস্যা সৃষ্টি করে, অন্যটি দীর্ঘমেয়াদি। গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ক্যানসারসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং ও ক্যানটিনের মান উন্নয়ন করে যদি সেখানে শিক্ষার্থীদের খাবার পরিবেশন করা যায়, তবে সেটি শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যকর হয়। এ ছাড়া খাবারের কারণে শিক্ষার্থীরা যেসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, সেসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকার পরও শিক্ষার্থীরা কেন এসব খাবারের জন্য বটতলামুখী হচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাবিহা বিনতে হক বলেন, বটতলায় খেতে হয় কারণ আমাদের হলগুলোর ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ের খাবারের মান ততটা ভালো না। বড় ব্যাপার হলো, খাবার খেতে হয় নির্দিষ্ট কিছু আইটেমের মধ্যে। একই খাবার বারবার খেতে হয়। অন্যদিকে আমি বটতলায় নানা আইটেমের খাবার পাচ্ছি। ফলে বটতলার খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

বটতলার ৩৫টি দোকান নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মওলানা ভাসানী হল নিয়ন্ত্রণ করে ১২টি দোকান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৩ দোকান, এ ছাড়া আ ফ ম কামাল উদ্দীন হলের নিয়ন্ত্রণে আছে ১০টি দোকান।

মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, বটতলার খাবারের দোকানগুলো মাত্র খুলেছে। আমরা এই দোকানগুলো তদারকি করি। খাবারের মান ও দাম ঠিক রাখার জন্য দোকান মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হয়। নিয়মিত তদারকিতে যদি কখনো দেখি বটতলার এসব দোকানের খাবারের মান এবং দামে কোনো সমস্যা হচ্ছে। তখন তাদের দোকান বন্ধ করাসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর মাত্র দোকানগুলো খুলেছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও অনেকে এখানে খাবার খেয়ে থাকেন। তাদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দোকানদার এবং যারা দোকানে কাজ করেন, তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করেন, সেদিকে আমরা সর্বোচ্চ দৃষ্টি রাখব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আ ফ ম কামাল উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, আমরা নিয়মিত দোকান পরিদর্শন করছি। দোকানদার এবং যারা দোকানে খেতে যান, সবার সহায়তায় বটতলার খাবারের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা সবার সহায়তা কামনা করছি।