‘যেতে হবে এখনই’ লিখে চবি ছাত্রের আত্মহত্যা

  • চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অনিক চাকমা

অনিক চাকমা

সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এস আলম কটেজ থেকে সোমবার (৩ জানুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে ওই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অনিক আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তার রুম থেকে ৬ পৃষ্ঠার চিরকুট উদ্ধার করা হয়। পারিবারিকভাবে আর্থিক অসচ্ছল হওয়ায় অনিক মানসিকভাবে বিষন্নতায় ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা।

বিজ্ঞাপন

নিহত অনিক চাকমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি রাঙামাটি সদর উপজেলায় কাবুইক্কা গ্রামে। আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে তাঁর ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

চবি মেডিকেল সেন্টারের চিফ ড. আবু তৈয়ব বলেন, ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ আমরা পেয়েছি। শেষ রাতের দিকে সে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।

বিজ্ঞাপন

এস আলম কটেজের মালিক মো. শাহ আলম বলেন, ২০১৮ সাল থেকে অনিক এ কটেজে অবস্থান করছে। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে অনিকের কথা হয়। সে আমার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলেছে। কোনও অস্বাভাবিক আচরণ দেখেনি।

একই কটেজের বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, অনিক সব সময় একা একা থাকতো। কারও সঙ্গে বেশি কথাও বলতো না। পারিবারিকভাবে আর্থিক সমস্যায় ছিল সে। গতকাল রাতে আমার সঙ্গে ওয়াসরুমে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছিল। সেখানে কোন কথা হয়নি। পরে সে ঘুমাতে যায়। প্রতিদিন সকাল ৮-৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠলেও আজ না উঠায় সাড়ে দশটার দিকে আমরা তাকে ডাকাডাকি করেও কোন সাড়া পায়নি। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে জালানার ফাঁক দিয়ে দেখার পর একজন স্যারকে জানায়। তিনি প্রক্টর অফিসে খবর দেন।

অনিকের সহপাঠী মেরিন সাইন্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী স্মরণ রাজবংশী বলেন, অনিকের সঙ্গে আমার কথা হতো। তবে বেশি কথা হতো না। সে সবার সঙ্গে মিশতো না। তার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অনিক অনেকের কাছে ধার করেছিল। পরিবারের কাছ থেকে আর্থিকভাবে তেমন সাপোর্ট না পাওয়ায় মানসিকভাবে বিষন্নতায় ভুগতো।

কটেজের আরেক বাসিন্দা প্লাবন চাকমা বলেন, আমার সঙ্গে তার প্রতিদিনই কথা হতো। গতকাল সন্ধ্যায়ও কথা হয়েছিল। তার আর্থিক সমস্যা ছিল। হলেও ডাইনিং-এ খাওয়া-দাওয়ার জন্য তাঁর টাকা ছিল না। পরিবারের কাছ থেকে তেমন আর্থিক সাপোর্টও পেতো না। ফলে অনেক বন্ধুর কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতো। এসব বিষয় নিয়ে সব সময় ডিপ্রেশনে ছিল সে।

এদিকে আত্মহননকারী অনিকের রুমে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে আত্মহত্যার কথাটি তিনি স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করেনি। তবে তিনি সত্য কথা বলার কারণে নানা সময় সমস্যায় পড়েছেন এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন বলে ডিপ্রেশনে ভুগতেন বলেও উল্লেখ করেন। ওই চিরকুটে শেষ বাক্য ছিল ‘যেতে হবে এখনই’

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছি। হত্যা না আত্মহত্যা সেটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা আত্মহত্যা বলে ধরে নিচ্ছি। তার রুমে একটি চিরকেুট পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ বলা যাবে।