দেশব্যাপী উত্তাল শাবি ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশব্যপী উত্তাল শাবি ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন

দেশব্যপী উত্তাল শাবি ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। দাবি আদায়ে আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। শাবি শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দেশের প্রগতিশীল ৯ ছাত্র সংগঠন।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সকাল ১০টা থেকে অবস্থান করছে তারা। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে শাবিপ্রবির আন্দোলনের দশম দিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে দেশের একাধিক ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনসমূহ। এতে আন্দোলন আরও জোরালো হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি বলেন, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন, ধৈর্য্য এবং ত্যাগ; তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সমর্থন রেখে আমরা সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পদত্যাগ না করায় ওই দিন দুপুরের পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন ২৪ জন ছাত্রছাত্রী।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় একাধিক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন কয়েক শ শিক্ষার্থী।

শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তীব্র ঠান্ডায় অনশন চালিয়ে যাওয়া অনেকের জ্বর দেখা দেওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের। অসুস্থ হয়ে পড়ায় নয়জনের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা। তবে তারা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে এ অনশন।

রাজুতে প্রগতিশীল ৯ সংগঠনের অবস্থান

বিগত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার সিলেটসহ সারাদেশে বিভিন্ন ব্যানারে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে একাধিক নাগরিক সংগঠন। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে জজকোর্টের সামনে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের উদ্যোগে এবং সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের মানববন্ধন হয়েছে। একই দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করে সিলেট মহানগর বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।

একই দিন শুক্রবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংহতি সমাবেশ আয়োজন করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সমূহ। এতে উপস্থিত থেকে সংহতি জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৫ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী তবারক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ বজলুল করিম, স্থপতি জেরিনা হোসেন, আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরী ও এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, নাগরিক সংগঠক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল করিম চৌধুরী (কিম), নাট্যব্যক্তিত্ব মিশফাক আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১৩ তারিখ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ওই হলের অন্তত কয়েক শ ছাত্রী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

পরদিন বিকেলে বিশাল জমায়েতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনের সামনে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগান নিয়ে গুলিবর্ষণ এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।