মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে ‘অনশনকারীরা’

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এবার বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তারা জানিয়েছে পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া বাইরের কেউ আর উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া বাসভবনের সামনের রাস্তায় অনশনকারীরা খাট ফেলে রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন শিক্ষার্থীরা। লিখিত বক্তব্যে এক শিক্ষার্থী বলেন, গত বুধবার বিকাল থেকে শিক্ষার্থীদের অনশনের ৯৬ ঘণ্টা অর্থাৎ- ৪ দিন পেরিয়ে গেছে। তারা ধীরে ধীরে সুনিশ্চিত মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে। তবুও প্রাণের মায়া ত্যাগ করে তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। আগের ২৩ জনের সঙ্গে আরও ৪ জন যুক্ত হয়েছেন অনশনে।

বিজ্ঞাপন

এমতাবস্থায় এ সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধি দল শনিবার রাতে ভিডিও কলের মাধ্যমে আলােচনায় অংশ নেয়। সেখানে উপাচার্যের পদত্যাগ সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট কোনো কথা দেওয়া হয়নি। যেহেতু আমাদের অনশনকারী শিক্ষার্থীদের রেখে আমরা ঢাকা যেতে মানসিক ও দৈহিকভাবে অপারগ, তাই আমরা ভার্চুয়ালি যেকোনাে মাধ্যমে সকল আলােচনার জন্য সব সময় প্রস্তুত।

এর আগে শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক দফা ভার্চুয়ালি বৈঠক করলেও কোনো সমাধান হয়নি। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনায় আসার প্রস্তাব দেন। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় আজ দুপুরে পুনরায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীপু মনির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বিকাল সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক হয়নি।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা রোববার সন্ধ্যায় জানান, শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে না এলে পুনরায় আলোচনা নাও হতে পারে। ফলে আলোচনার উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সাংবাদিকদের বলেন, আজও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনায় আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। অনশনরত শিক্ষার্থীদের কষ্ট তিনি মেনে নিতে পারছেন না। শিক্ষামন্ত্রী সব আলোচনায় প্রস্তুত।

তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য আলোচনা করতে উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। কিন্তু আলোচনা যৌক্তিকভাবে করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি নিজ দাবিতে অনড় থাকেন, তাহলে আলোচনা কতটুকু সফল হবে সেই প্রশ্ন থেকে যায়।

নাদেল বলেন, শনিবারের আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী একটি ছাড়া শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বাকি দাবি লিখিত আকারে দিতে বলেছেন। তাদের আইনগত ও অ্যাকাডেমিক সমস্যা যাতে না হয় তা দেখবেন বলেছেন। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদেরও কিছুটা এগিয়ে আসা উচিত।

এদিকে, শনিবার রাত থেকে নতুন করে অনশন শুরু করেছেন আরও ৪ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ২৭ জন অনশন করছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় এদের মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাঁরা অনশন ভাঙেননি। চিকিৎসকরা বলছেন অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে মুখ দিয়ে খাবার না খাওয়ালে অবস্থার আরও অবনতি হবে। অন্যদিকে ভিসির বাস ভবনের সামনে অনশনে থাকা বাকিদের স্যালাইন চলছে।

আন্দোলনকারীরা জানান, আমাদের মূল দাবি একটাই, উপাচার্যের পদত্যাগ। এটি বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি। এই দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না।

আন্দোলনের সূত্রপাত গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রোববার দাবি আদায়ে ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশি সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।