‘তালেবানি কালচার কায়েম করেন শাবি ভিসি’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি ফরিদ উদ্দিন গত চার বছরে ক্যাম্পাসে তালেবানি কালচার কায়েম করেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ৯টায় শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের একথা জানান।
শিক্ষার্থীরা জানন, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আসার পর থেকে ক্যাম্পাসে সব ধরনের আলপনা, রোড পেন্টিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে যখন ঝড় উঠেছিল তখন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এক কিলোমিটারজুড়ে আলপনা এঁকেছিল যা সর্ব মহলে সুনাম
অর্জন করে।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় তিনি নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করেন। যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের অবাধে চলাচলের কথা সেখানে তিনি হলের ছাত্রীদের রাত ৭টার মধ্যে হলে ফেরার শর্ত জুড়ে দেন। এছাড়া মুক্ত চলাচলের ক্ষেত্রে নানা বৈষম্যমূলক নির্দেশনা জারি করেন।
প্রেস ব্রিফিংকালে শিক্ষার্থীরা বলেন, এই ভিসি দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কালচারাল সংগঠন বন্ধ করার পায়তারা শুরু করেন। কালচারাল প্রোগ্রামে বিধিনিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার জায়গা সংকোচ করার চেষ্টা করে আসছেন।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। অথচ এখানেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বৈষম্য তৈরি করেছেন ভিসি। পর্যাপ্ত পরিবহন না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাসে গাদাগাদি করে ক্যাম্পাসে আসে। অথচ শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পরিবহন থাকার পরও তাদেরকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা বিভিন্ন টং দোকান ছোট ছোট খাবার দোকানগুলো ভিসি বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। অথচ এই দোকানগুলোই ছিলো শিক্ষার্থীদের মুক্ত আলোচনা এবং আড্ডার একটি বড় প্লাটফর্ম।
এছাড়া উপাচার্য এক শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, বিকেল পৌনে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকায় সাংবাদিকদের শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন থামবে না। পরে তারা দু'হাত তুলে একসাথে শপথ পাঠ করেন।
শিক্ষার্থীরা সে সময় জানিয়েছিলেন অনশনরত সহপাঠীদের জীবন বাচাঁতে তাদের সাথে কথা বলে অনশন ভাঙতে অনুরোধ করবেন। তবে রাত ৯টায় অনশনকারীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন ভাঙবে না। জীবন দিয়ে হলেও দবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ২০ জন অনশনকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৮ জন ক্যাম্পাসে অনশন করছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও তারা অনশন ভাঙেনি বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের। অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রোববার ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে ভিসিকে মুক্ত করে। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠে।